বিধ্বস্ত: অর্কদীপের পরিবার।
এক ছাত্রকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষাকেন্দ্রের দুই শিক্ষক নিয়মিত হেনস্থা করেছেন বলে অভিযোগ উঠল। মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে ছেলেটি। বুধবার পদার্থবিজ্ঞানের পরীক্ষাতেই বসেনি সে। অভিযোগও জানিয়েছে পুলিশের কাছে।
ঘটনাটি কাকদ্বীপের কালীনগর দ্বারিকানাথ ইন্সটিটিউশনের। সেখানে পরীক্ষার সিট পড়েছে শিশু শিক্ষায়তন এবং সুন্দরবন আদর্শ বিদ্যাপীঠের। অভিযোগকারী ছাত্র অর্কদীপ মিশ্র শিশু শিক্ষায়তনে পড়ে। তার অভিযোগ, হলে গার্ড দেওয়ার নাম করে হেনস্থা করেছেন পরীক্ষাকেন্দ্রের ইনচার্জ সরোজ মাইতি এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের মনোনীত সদস্য সুদীপ পড়ুয়া।
অর্কদীপের বাবা বরুণবাবু কাকদ্বীপ শিশু শিক্ষায়তনেরই শিক্ষক। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম দিন কম সময় দেওয়া হয়েছিল ছেলেদের। আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে তার প্রতিবাদ জানাই। তখন সেখানে সংসদ মনোনীত সদস্য সুদীপ পড়ুয়া ছিলেন। পর দিন থেকেই আমার ছেলেকে চিহ্নিত করে হেনস্থা করতে শুরু করেন সুদীপবাবু এবং সরোজবাবু।’’
বরুণবাবুর মতে ঘটনার সূত্রপাত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন। ছাত্রদের ১৫ মিনিট কম সময় দেওয়ার অভিযোগে সরব হয় কিছু পরীক্ষার্থী। অভিভাবকেরাও পরে মুখ খোলেন। মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেন অনেকে। অর্কদীপ ও তার বাবার অভিযোগ, সে জন্যই বেছে বেছে এমন দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। সরোজবাবু কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা। গোটা ঘটনা জানিয়ে কাকদ্বীপ থানায় অর্কদীপ লিখিত অভিযোগে দাবি করেছে, তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন ওই দুই শিক্ষক। কাকদ্বীপ শিশুশিক্ষায়তনে শনিবার এ নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। স্কুলের অন্য পরীক্ষার্থীদেরও অসুবিধা হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে স্কুল সূত্রের খবর।
সরোজবাবু অবশ্য ‘প্রতিহিংসা’র অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেটি প্রথম থেকেই এর-ওর খাতা দেখে টুকে লেখার চেষ্টা করছিল। তাই তাকে সাবধান করেছেন ইনভিজিলেটররা। আমি বা সুদীপবাবু কেউই ঘরের ভিতরে যাইনি।’’ সুদীপবাবুও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
কিন্তু অর্কদীপ টোকাটুকি করেছে বলে মানতে নারাজ তাঁর স্কুলের অন্য শিক্ষকেরা। তাঁদের মতে, ক্লাসে বরাবরই ভাল রেজাল্ট করে এসেছে অর্কদীপ। মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল। উচ্চমাধ্যমিকের টেস্টেও ৮৮ শতাংশ নম্বর ছিল।
বৃহস্পতিবার বুদ্ধপুরে ছেলেটির বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, মনমরা হয়ে বসে সে। বুধবার পরীক্ষা দিতেও যায়নি। বৃহস্পতিবার গিয়েছিল থানায়। অর্কদীপের কথায়, ‘‘স্যারদের বার বার বললাম,
ঠিক মতো পরীক্ষা দিতে দিন। কিন্তু ওঁরা নানা ভাবে অসুবিধা সৃষ্টি করছিলেন। বলেছিলেন, তোকে শেষ করে দেবো।’’
পরীক্ষা দিতে কী অসুবিধা হচ্ছিল অর্কদীপের? ছেলেটি জানায়, জল খাওয়া শুরু করে সিটে বসা, বার বার খাতা টেনে টেনে টোকাটুকি করছে কিনা দেখা, শেষমেশ টোকাটুকির অভিযোগ তুলে খাতা কেড়ে নেন দুই স্যার। এ ভাবে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যায় বলে অভিযোগ অর্কদীপের। পর পর ইংরেজি ও অঙ্ক পরীক্ষার সময়ে এই কাণ্ড ঘটেছে জানিয়েছে সে।