জমি তাঁর। অথচ তাঁর অজান্তেই দিব্যি বেহাত হয়ে গিয়েছে সেই জমি। অভিযোগ, রীতিমতো জাল দলিল তৈরি করে দখল করে নেওয়া হয়েছে জমি।
নিরুপায় হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন হুগলির ডানকুনির গোবরার ওই বাসিন্দা। আদালতে মামলাও করা হয়েছে।
জমি মাফিয়াদের হাতে পড়ে ডানকুনি, চণ্ডীতলা, শ্রীরামপুরে দিল্লি রোড লাগোয়া চাষজমি বেহাত হয়ে যাওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। এ ক্ষেত্রেও ভূতনাথ ঘোষ নামে ওই পরিবারের অভিযোগ, জমি হাঙরদের কারসাজিতেই তাঁদের জমি বেদখল হতে বসেছে।
ভূতনাথবাবু দৃষ্টিহীন। তাঁর পরিবারের দাবি, ডানকুনি বিল মৌজায় ভূতনাথবাবুর নামে ৬ শতক শালি জমি আছে। তাঁদের অভিযোগ, সম্প্রতি তাঁরা দেখেন, কে বা কারা জমিটি ঘিরে ফেলছে। স্থানীয় লোকজনের কাছে তাঁরা জানতে পারেন, একটি সংস্থা ওই জমিটি কিনেছে। পরিবারের অভিযোগ, ভূমি সংস্কার দফতরে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, ভূতনাথবাবু নিজেই কলকাতার একটি হোসিয়ারি সংস্থাকে জমিটি বিক্রি করেছেন। আকাশ থেকে পড়েন তাঁরা।
কয়েক বছর ধরেই ডানকুনি, চণ্ডীতলা, শ্রীরামপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিঘের পর বিঘে জমি বেহাত হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মূলত দিল্লি রোড লাগোয়া কৃষিজমিই জমি-হাঙরদের ‘টার্গেট’। পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি নকল নথিপত্র তৈরি করে ডানকুনিতে জমি বিক্রির একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রত্যেকটি অভিযোগের ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত করা হচ্ছে। ভূমি দফতরের এক শ্রেণির কর্মী এই কাজের পিছনে রয়েছেন বলে অভিযোগ। শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক রজত নন্দা বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হবে।’’
ভূতনাথবাবুর ভাইপো বাবু ঘোষ বলেন, ‘‘ওই জমির বাজারদর আনুমানিক ১৬ লক্ষ টাকা। এক ব্যক্তিকে জ্যাঠামশাই সাজিয়ে জমি বিক্রির নাটক করা হয়েছে। জমি বিক্রির নথিপত্রে ভূতনাথ ঘোষ নামে যাঁর ছবি লাগানো হয়েছে, তিনি আমাদের পরিবারের কেউ নন।’’ তিনি জানান, পরে তাঁরা জানতে পেরেছেন দলিলে ভূতনাথ ঘোষ হিসেবে যাঁর ছবি রয়েছে তাঁর নাম অশোক সিংহ। ডানকুনিরই গোবরা রুইদাস পাড়ায় থাকেন। এক আইনজীবী তাঁকে ভূতনাথবাবু হিসেবে শনাক্ত করেছেন, যাঁর সঙ্গে তাঁদের পরিবারের কোনও সম্পর্কই নেই। বিষয়টি নিয়ে ডানকুনি থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তাদেরও লিখিত ভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে তাঁদের অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত দিন কয়েক আগে শ্রীরামপুর আদালতে এ ব্যাপারে মামলা করেছেন ভূতনাথবাবুর ভাইপো।
অভিযোগকারীর আইনজীবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘‘কাগজপত্র দেখে এটা পরিষ্কার যে সম্পূর্ণ জালিয়াতি করে ছাপোষা একটি পরিবারের জমি আত্মসাৎ করা হয়েছে। আমরা চাই, যারা এর পিছনে আছে, তারা শাস্তি পাক। প্রতারিত বিচার পান।’’ পুলিশ জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশে সোমবার নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে ওই হোসিয়ারি সংস্থায় ফোন করা হলে প্রথমে সেটি যে ওই সংস্থাই তা জানায়। পরে সংবাদপত্রের নাম বলতেই ‘ভুল নম্বর’ বলে ফোন কেটে দেওয়া হয়।