পাথরপ্রতিমার ভগবৎপুরে মৎস্যজীবী সংগঠনের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে পুরুষানুক্রমে মাছ-কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন পাথরপ্রতিমা, নামখানা, কাকদ্বীপ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েক হাজার ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী। কিন্তু অভিযোগ, ইদানিং লোথিয়ান ও শুশনি জঙ্গলের খাঁড়িতে মাছ-কাঁকড়া ধরতে জঙ্গলে গেলেই ভগবৎপুর ফরেস্ট রেঞ্জের বনকর্মী ও আধিকারিকরা মৎস্যজীবীদের নৌকা, জাল-সহ মাছ ধরার অন্যান্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করেন। করেন, মোটা অঙ্কের জরিমানা।
ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের প্রতি বঞ্চনা ও হেনস্থার প্রতিবাদের পাশাপাশি, জঙ্গলে মাছ ধরার অধিকার-সহ ১০ দফা দাবি নিয়ে বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগের ভগবৎপুর ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সদস্যরা।
এ ক্ষেত্রে বন দফতরের যুক্তি, সুন্দরবনের কোন নদী-খাঁড়ির কোন অংশে মাছ ধরা যাবে, কোথায় যাবে না, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট সরকারি নির্দেশিকা রয়েছে। তা মেনেই কাজ করেন বনকর্মী ও আধিকারিকেরা। তা ছাড়া, নির্বিচার মাছ-কাঁকড়া ধরা শুরু হলে বাদাবনের জলজ বাস্তুতন্ত্রের গুরুতর ক্ষতি হওয়ারও আশঙ্কা প্রবল। এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভাগীয় বনাধিকারিক মিলন মণ্ডল বলেন, ‘‘লোথিয়ান অভয়ারণ্য এবং শুশনি সংরক্ষিত অরণ্যে ঢুকে মাছ-কাঁকড়া ধরা আইনত নিষিদ্ধ। প্রয়োজনীয় সরকারি নির্দেশ ছাড়া সেখানে মাছ-কাঁকড়া ধরার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।’’
বুধবার দুপুর ১১ টা থেকে মিছিল ও বিক্ষোভের পর ভগবৎপুরের রেঞ্জার তন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের কাছে স্মরাকলিপি জমা দেন ফোরামের প্রতিনিধিরা। তাঁদের দাবি, এলাকার ক্ষুদ্র মৎস্যশিকারিদের নদীতে মাছ ধরার অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না। অবিলম্বে জরিমানা আদায় বন্ধ করতে হবে। সুন্দরবনে বনবাসী অধিকার আইন (২০০৬) কার্যকর করতে হবে। মৎস্য দফতরের ফিশিং লাইসেন্স ও নৌকার রেজিস্ট্রেশনকে মান্যতা দিয়ে মাছ ধরার অনুমতি দিতে হবে। মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালীন প্রত্যেক মৎস্যজীবীকে মাসিক আর্থিক সহযোগিতা করার পাশাপাশি বাঘ, কুমিরের হামলায় নিহত মৎস্যজীবীর পরিবারের সদস্যদের জন্য ভাতা চালু করারও দাবি তুলেছেন মৎস্যজীবীরা।
এ বিষয়ে দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিলন দাস বলেন, ‘‘হতদরিদ্র মৎস্যজীবীরা বংশানুক্রমে নদীতে মাছ-কাঁকড়া ধরে আসছেন। সেই অধিকার কেড়ে নেওয়া এবং মৎস্যজীবীদেরকে হেনস্থা করা অনৈতিক। এমনকি, সুন্দরবনের বাসিন্দাদের জীবিকার নিরাপত্তার জন্য ২০০৬-এর বনবাসী অধিকার আইনও কার্যকর করা হচ্ছে না। বিষয়গুলি নিয়ে একাধিকবার বন দফতরকে জানিয়েও সুরাহা মিলেনি। তাই বিক্ষোভের পথ বেছে নিয়েছি। আগামী দিনেও বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’
ভগবৎপুরের রেঞ্জার তন্ময় বলেন, ‘‘মৎস্যজীবী সংগঠনের তরফে বিভিন্ন দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। আমি তা গ্রহণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশ মেনেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ করব।’’