গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আইন এনে ধর্ষকদের এনকাউন্টার করার কথা বলেছিলেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর-কাণ্ডে অভিষেকের তত্ত্বেই আস্থা প্রকাশ করলেন তৃণমূল সাংসদ-অভিনেতা দেব। তাঁর মত, ধর্ষকদের গুলি করে মেরে ফেলা উচিত। সাধারণ মানুষের করের টাকা খরচ করে দোষীদের বাঁচিয়ে রাখার দরকার নেই।তৃণমূল সাংসদ মেনে নেন এক জন জনপ্রতিনিধি হিসাবে তাঁর এই কথা বলা হয়তো উচিত নয়। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত মত, ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের সাজা মৃত্যুই হওয়া উচিত। যাতে এমন ঘৃণ্য কাজ করার আগেই কোনও অভিযুক্তের মনে ভয় কাজ করে।
শনিবার জয়নগরের মহিষমারি এলাকায় একটি জলাভূমি থেকে ন’বছরের বালিকার দেহ উদ্ধার হয়েছে। অভিযোগ, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে তাকে। শুক্রবার রাতেই সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছিল পুলিশ। ১৯ বছরের যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত ওই এলাকা। থানায় ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়। মহিষমারির পুলিশ ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। এই প্রেক্ষিতে ঘাটালের সাংসদ সওয়াল করলেন এনকাউন্টারের পক্ষে। শনিবার নিজেদের ছবির প্রচারে বারুইপুরে এসেছিলেন অভিনেতা দেব এবং পরিচালক শ্রীজিত মুখোপাধ্যায়। সেখান থেকে জয়নগরের ঘটনায় প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘এ রকম নিন্দনীয় ঘটনায় আমাদের সম্মিলিত ভাবে প্রতিবাদ করা উচিত। এমন কঠোর আইন আনতে হবে... আমি তো বলছি, ‘শুট অ্যাট সাইট’ করে দাও ভাই! এই রকম লোককে (ধর্ষক) যদি চিহ্নিত করা যায়, তারা যদি ধরে পড়ে, দোষ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের তোমার-আমার ট্যাক্সের টাকা দিয়ে বাঁচিয়ে লাভ নেই।’’ দেব এ-ও বলেন, এক জন জনপ্রতিনিধি হিসাবে হয়তো তাঁর এই কথা বলা তাঁর উচিত নয়। কিন্তু তিনি বাধ্য হয়েই এই কথাগুলো বলছেন। তৃণমূলের তারকা সাংসদ বলেন, ‘‘আমি পাবলিক রিপ্রেজেন্টেটিভ। আমি এই শব্দগুলো ব্যবহার করতে পারি না। দেশের আইন আছে। আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অনেক ভাল। কিন্তু তা-ও আমারা মা-বোনেদের বাঁচাতে পারছি না! তাই এমন আইন আনতে হবে যাতে এই মানসিকতার মানুষের মনে ভয় থাকে। এদের পিছনে সরকারি টাকা খরচ না করে এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে অন্যদের মনে ভয় থাকে।’’
উল্লেখ্য, আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে রাজ্য বিধানসভায় ‘অপরাজিতা’ বিল পাস করেছে তৃণমূল সরকার। বিজেপি বিধানসভার অন্দরে এই বিলের বিরোধিতা না করলেও তারা কিছু সংশোধনী আনতে চেয়েছিল, যা রাজ্য সরকার গ্রাহ্য করেনি বলে অভিযোগ। ওই বিলে ধর্ষণের ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা হিসাবে ফাঁসির বিধান রাখা হয়েছে। অন্য দিকে, আরজি করের ঘটনায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক ধর্ষকদের এনকাউন্টারে মারার পক্ষে সওয়াল করলেন। ডায়মন্ড হারবারে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক চলাকালীন তিনি বলেছিলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা যারা ঘটায় তাদের সমাজে থাকার অধিকার নেই। আপনারা কি মনে করেন, যারা এই ঘটনা ঘটাল তার বেঁচে থাকার অধিকার আছে? সাত দিনের মধ্যে আইন করে এনকাউন্টার করে মারা উচিত দোষীকে।’’ অভিষেক আরও বলেন, ‘‘কোনও ঘটনা না-ঘটলে আমাদের ঘুম ভাঙে না। এই ধরনের ঘটনায় ৭ দিনের মধ্যে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই আইন আনা হয় না কেন? চাইলেই আনা যায়। যারা ক্ষমতায় আছে (কেন্দ্রে) তারা এই বিল আনুন। আইনসভায় অর্ডিন্যান্স আনুন। আইন সংশোধনী আনুন। যাতে সাত দিনে ধর্ষকদের বিচার করা যায়। তৃণমূল, কংগ্রেসের উচিত ওই বিলকে সমর্থন করা। কেন ৫-৬ বছর ধরে ট্রায়াল চলবে?’’ জয়নগর-কাণ্ডে দেব অভিষেকের ওই ‘তত্ত্ব’কেই সমর্থন করলেন।