টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে সোয়েটার উপহার দিল ছাত্রছাত্রীরা

ছোটছোট পড়ুয়াদের কষ্ট দেখে কষ্ট পেয়েছিল অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণীভবন উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

অশোকনগর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৪৯
Share:

পাশে-আছি: ছাত্রীদের হাতে সোয়েটার তুলে দেওয়া হচ্ছে। ছবি: সুজিত দুয়ারি

স্কুলে যাতায়াতের পথে ছাত্রছাত্রীদের নজরে পড়েছিল, এলাকার প্রাথমিক স্কুলের বেশির ভাগ পড়ুয়া শীতে কাঁপতে কাঁপতে স্কুলে যাচ্ছে। কনকনে ঠান্ডায় গায়ে শীতের পোশাক নেই।

Advertisement

ছোটছোট পড়ুয়াদের কষ্ট দেখে কষ্ট পেয়েছিল অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণীভবন উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, আশপাশের প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের হাতে সোয়েটার তুলে দেবে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সকলে ঠিক করে, বাড়ি থেকে টিফিনের জন্য দেওয়া টাকা জমিয়ে তহবিল তৈরি করবে। সেই টাকা থেকে কেনা হবে নতুন সোয়েটার।

সিদ্ধান্তের কথা পড়ুয়ারা স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জানায়। বাড়িতে অভিভাবকদের সঙ্গেও আলোচনা করে। সকলেই ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দেন। শুরু হয় টাকা জমানোর পালা। শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবকেরাও সাহায্য করেন। সেই টাকা দিয়েই কেনা হয় সোয়েটার। সোমবার পড়ুয়ারা ওই সোয়েটার নিয়ে পৌঁছে যায় আশপাশের তিনটি প্রাথমিক স্কুলে। সেখানকার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেয় নতুন সোয়েটার। পড়ুয়াদের কথায়, ‘‘আমাদের ভাই-বোনদের হাতে উপহার তুলে দিলাম, এটা কোনও দান নয়।’’ বিদ্যাসাগর বাণীভবন স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র হীরক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘ছোটছোট ভাইবোনেদের কষ্ট দেখে আমাদেরও খারাপ লেগেছিল। তাই সকলে মিলে এই সিদ্ধান্ত।’’

Advertisement

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন মোট ১১১ জন প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ার হাতে নতুন সোয়েটার তুলে দেওয়া হয়েছে। পড়ুয়াদের এমন পদক্ষেপে গর্বিত বিদ্যাসাগর বাণীভবন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ওদের এমন চেতনায় শিক্ষক হিসাবে খুবই আনন্দ পেয়েছি। স্কুলে আমরা পড়ুয়াদের বলি, আমি নই আমরা বলে ভাবতে শেখো। ব্যক্তিকেন্দ্রীকতা কাটানোর উপরে জোর দেওয়া হয়। ওরা সেটাই করে দেখিয়েছে।’’

এ দিন সোয়েটার উপহার পেয়ে চর্তুথ শ্রেণির পড়ুয়া ঈশান পোদ্দার বলে, ‘‘আমার নতুন সোয়েটার ছিল না। দাদা-দিদিদের কাছ থেকে সোয়েটার পেয়ে খুব আনন্দ হচ্ছে। শীতেও আর কষ্ট পেতে হবে না।’’

এলাকার প্রাথমিক স্কুলে পড়া ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগই দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবার থেকে আসা। অভিভাবকেরা কেউ খেতমজুরি, কেউ দিনমজুরি করেন। একটি প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা কণিকা বসু বলেন, ‘‘সোয়েটার পেয়ে পড়ুয়ারা খুবই উপকৃত হল। যারা এই পদক্ষেপ করল, ওদের এই মানসিকতা ভবিষ্যতে সকলকে প্রকৃত মানুষ হতে

সাহায্য করবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement