দম্পতিকে হেনস্থা, অভিযুক্ত পুলিশ

স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে দিঘা থেকে বেড়িয়ে ফিরছিলেন মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। পথের ধকলে অসুস্থ বোধ করছিলেন। স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে গাড়ির পিছনের সিটে শুয়ে ছিলেন। তখন গভীর রাত। পুলিশ গাড়িটি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০২:১৬
Share:

ক্ষুব্ধ ঘোষ দম্পতি। —নিজস্ব চিত্র।

স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে দিঘা থেকে বেড়িয়ে ফিরছিলেন মাঝবয়সী এক ব্যক্তি। পথের ধকলে অসুস্থ বোধ করছিলেন। স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে গাড়ির পিছনের সিটে শুয়ে ছিলেন।

Advertisement

তখন গভীর রাত। পুলিশ গাড়িটি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। মহিলা তাঁর স্ত্রী নয়, এই সন্দেহ তুলে শুরু হয় গালিগালাজ, মারধর। সদ্য তরুণ ছেলে বলার চেষ্টা করেছিলেন, ওই দু’জন তাঁর বাবা-মা। কিন্তু কে শোনে কার কথা।

অভিযোগ, বুধবার রাতে বনগাঁ শহরের বাটারমোড়ে কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মী ওই দম্পতিকে হেনস্থা করেন। পরে ওই ব্যক্তিকে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে আর এক দফা চড়-থাপ্পর মারা হয়। সারা রাত তাঁকে আটকে রাখা হয় থানায়। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির লোকজন গিয়ে উদ্ধার করে আনে স্বপন ঘোষ নামে ওই ব্যক্তিকে।

Advertisement

এ দিন বনগাঁর এসডিপিও-র কাছে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছেন স্বপনবাবুর স্ত্রী চম্পারানিদেবী। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মহিলার অভিযোগ পেয়েছি। এসডিপিওকে বলা হয়েছে ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে। বিষয় যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ এসডিপিও বিশ্বজিৎ মাহাতো জানিয়েছেন, মহিলার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

“এসডিপিওকে বলা হয়েছে ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে।
বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” —ভাস্কর মুখোপাধ্যায় (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার)

কী বলছেন অভিযুক্ত বনগাঁ থানার সাব ইন্সপেক্টর সুব্রত নায়েক? অভিযোগ মানতে চাননি তিনি। শুধু বলেন, ‘‘আমি কিছু করিনি।’’ তাঁর সহকর্মীদের কেউ কেউ আবার জানিয়েছেন, ওই গাড়িতে অন্য এক মহিলাও ছিলেন। যাঁর কোলে মাথা রেখে আপত্তিকর অবস্থায় শুয়েছিলেন স্বপনবাবু। কিন্তু তা হলে ওই মহিলা গেলেন কোথায়? উত্তর নেই পুলিশের কাছে।

কী হয়েছিল বুধবার রাতে?

বাগদার হেলেঞ্চা ৪ নম্বর কলোনির বাসিন্দা ঘোষ দম্পতি মঙ্গলবার রাতে গাড়ি ভাড়া করে দিঘা গিয়েছিলেন। ফেরার পথে গাড়িতে ছিলেন পেশায় দুধ ব্যবসায়ী স্বপনবাবু, তাঁর স্ত্রী চম্পারানি ও সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ছেলে সঞ্চয়ন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন স্থানীয় এক চালক।

চম্পারানিদেবী জানিয়েছেন, বুধবার রাত তখন প্রায় সাড়ে ৩টে নাগাদ। যাত্রার ধকলে স্বামীর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। স্ত্রীর কোলে মাথা দিয়েই ঘুমোচ্ছিলেন স্বপনবাবু।

অভিযোগ, বাটারমোড়ে বনগাঁ থানার একটি টহলদারি গাড়ি স্বপনবাবুদের গাড়িটিকে আটকায়। পুলিশ গাড়ির ভিতরে টর্চ মেরে দেখে, স্বপনবাবু স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছেন। এরপরই পুলিশ স্বপনবাবুকে গালিগালাজ করতে শুরু করে। গাড়ি থেকে টেনে বের করে। চম্পারানির অভিযোগ, ‘‘ওরা বলছিল, রাতে মহিলা নিয়ে ফুর্তি করতে লজ্জা করে না!’’ সদ্য বড় হয়ে ওঠা ছেলের সামনে এ সব কথায় খুবই অস্বস্তিতে পড়েন ওই দম্পতি। চম্পারানিদেবীর দাবি, পুলিশকে বার বার বোঝাতে চেয়েছিলাম, উনি আমার স্বামী। সপরিবার আমরা দিঘা থেকে ফিরছি। কিন্তু কে শোনে কার কথা।’’ চম্পারানিকে অশ্রাব্য ভাষায় কটূক্তি করেন পুলিশ কর্মীরা। ওই মহিলার কথায়, ‘‘স্বামীকে ঠেকাতে গেলে আমাকে ধাক্কা মারা হয়। আমি কয়েক হাত দূরে ছিটকে পড়ি। আমাদের ছেলের কথাও পুলিশ কানে তোলেনি।’’

ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। অভিযোগ, স্বপনবাবুকে পুলিশ গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানেও মারধর করা হয় তাঁকে। রাতভর আটকে রাখা হয় থানায়। সাব ইন্সপেক্টর সুব্রত নায়েকই গোটা ঘটনায় নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ চম্পারানিদের। পুলিশ মদ্যপ ছিল বলেও অভিযোগ তাঁদের।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ চম্পারানিদেবী নিজের শ্বশুরমশাই-সহ অন্য আত্মীয়দের নিয়ে থানায় যান। নিজেদের স্বামী-স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়ে কোনও রকমে স্বপনবাবুকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন। চম্পারানিদেবী এসডিপি-র কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, থানা থেকে স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার আগে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেয় পুলিশ। হুমকি দিয়ে বলে, যেন বিষয়টি নিয়ে ‘বাড়াবাড়ি’ করা না হয়। তা হলে বিপদে পড়তে হবে। গোটা ঘটনায় তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলেও লিখিত ভাবে জানিয়েছেন চম্পারানিদেবী।

এলাকায় ‘সজ্জন’ বলেই পরিচিত স্বপনবাবু। স্থানীয় মানুষ গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ। নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছেন স্থানীয় মানুষ। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীর শাস্তির দাবিও তুলেছেন এলাকার মানুষজন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement