জীবনের স্রোতে ফিরছেন পরিজনহারা মধু-মিতারা

আয়লার তাণ্ডবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া সন্দেশখালির ছেলে মধুর মতোই এখানকার বহু মানুষ স্বজন হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়েই নতুন করে জীবন শুরু করেছেন। মধু বলেন, ‘‘যারা চলে গেল তো গেলই। কিন্তু আমরা যারা থেকে গেলাম, তাদের তো খেয়ে পরে বেঁচে থাকার চেষ্টাটা চালিয়ে যেতে হবে।’’

Advertisement

নির্মল বসু

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৮ ০১:২৬
Share:

এ-দিন: এক সময়ে সর্বস্বান্ত দম্পতিই ভেড়ির ব্যবসা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। নিজস্ব চিত্র

দুই ভাই ভেসে যাচ্ছিল জলের তোড়ে। ঝাঁপ দেন বাবা বাদল খামারু। নিমেষে স্রোতের টানে তলিয়ে যায় বাপ-বেটা। বড় ছেলে মধু বেঁচে গিয়েছেন। পুরনো কথা উঠলে এখনও চোখে জল আসে। বললেন, ‘‘৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলাম। সেই টাকায় ভেড়ির ব্যবসা শুরু করেছি।’’

Advertisement

আয়লার তাণ্ডবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া সন্দেশখালির ছেলে মধুর মতোই এখানকার বহু মানুষ স্বজন হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়েই নতুন করে জীবন শুরু করেছেন। মধু বলেন, ‘‘যারা চলে গেল তো গেলই। কিন্তু আমরা যারা থেকে গেলাম, তাদের তো খেয়ে পরে বেঁচে থাকার চেষ্টাটা চালিয়ে যেতে হবে।’’

সেই চেষ্টাই করছেন মধু আর তাঁর স্ত্রী মিতা। কিন্তু তাঁদেরও মৃত্যুভয় তাড়া করে বেড়ায়। মধুরা জানালেন, আয়লার পরে শক্তপোক্ত বাঁধ এখনও হয়নি এলাকায়। ফের এমন জলের তোড় এলে আবার কত না জানি পরিবার ধুয়ে মুছে যাবে।

Advertisement

কথা হচ্ছিল কোড়াকাটি পঞ্চায়েতের প্রধান অখিলবন্ধু মণ্ডলের সঙ্গে। বললেন, ‘‘জোয়ারে নদীর জল বাড়লে বুঝতে পারি, আমরা নদীর জলস্তর থেকে নীচে থাকি। আয়লা বাঁধ না হলে আবার বিপর্যয় ঘটতে পারে।’’ বিপর্যয়ের সেই আশঙ্কা বুকে নিয়েও অবশ্য বেঁচেবর্তে আছে সন্দেশখালির গ্রাম। আয়লার পরে বড় রাস্তার ধারে জমি কিনে অ্যাসবেস্টসের ঘর করেছেন কুম্ভকর্ণ সর্দার ও তাঁর স্ত্রী শঙ্কররানি। কুম্ভকর্ণ জানান, জলের তোড়ের মধ্যে সন্তানদের নিয়ে প্রতিবেশীর ঘরের চালে উঠে আশ্রয় নেন। সেই চাল ঘরের পিছনে পুকুরের মধ্যে ভেঙে পড়ে। মেয়ে জয়ন্তী তলিয়ে যায়। এক দিন পরে তিন কিলোমিটার দূরে ধুচনেখালি বাজারে তার দেহ মেলে। সন্তানহারা বাবা বলেন, ‘‘সে দিনের কথা মনে হলে আজও ঘুম আসে না।’’ তারই মধ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দেওয়া ক্ষতিপূরণের টাকায় নতুন করে সংসার গড়েছেন।

এখন পিচ-কংক্রিটের রাস্তা হয়েছে। ইউক্যালিপটাস, সোনাঝুরি, বাবলা গাছ লাগানো হয়েছে রাস্তার দু’ধারে। পানীয় জলের ট্যাঙ্ক বসেছে, আয়লা সেন্টার তৈরি হয়েছে। কিন্তু মণিপুর এলাকায় অন্তত ১৫ কিলোমিটার আয়লা বাঁধ অবিলম্বে জরুরি। হয়েছে মাত্র এক কিলোমিটার।

এটাই আপাতত আতঙ্ক জাগিয়ে রেখেছে নতুন ভাবে বাঁচতে চাওয়া মানুষের মনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement