এখানেই চলছে আধার কার্ড সংক্রান্ত সমস্যার ‘সমাধান’। —নিজস্ব চিত্র
কিছু কিছু ডাকঘরে আধার কার্ড সংশোধনের কাজ হচ্ছে। কার্ড সংশোধন হচ্ছে কয়েকটি ব্যাঙ্কের শাখাতেও। কিন্তু সেখানে কার্ড সংশোধনে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পাওয়ার প্রশ্নই নেই। বহু মানুষের পিছনে লাইন দিয়ে তবে সুযোগ মিলছে। কাজ হতে কয়েক সপ্তাহ, কখনও কখনও মাস পেরিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে হয়রানি বাড়ছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই আধার কার্ড সংশোধনের রমরমা ব্যবসা শুরু হয়েছে কিছু জায়গায়। হাসনাবাদ থানার পাটলি খানপুর পঞ্চায়েত দফতরের সামনে একটি দোকানে পাঁচশো টাকার বিনিময়ে কার্ড সংশোধনের কাজ চলছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বেশ কয়েক দিন ধরে চলছে এই ব্যবসা। আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে মাইক নিয়ে প্রচার করাও হয়েছে। প্রচার শুনে অনেক মানুষ আসছেন এই দোকানে আধার কার্ড সংশোধন-সহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। দোকানের মালিক মুন্না গায়েন জানান, আধার কার্ড সংক্রান্ত যে কোনও কাজের জন্য আগে দোকানে এসে নাম লিখিয়ে যেতে হবে। তারপর তারিখ দেওয়া হবে। মূলত সোমবার ও বুধবার এই কাজ চলে। সোমবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, দোকানের সামনে মানুষের ভিড়। ঠাকুরানি আবাদ থেকে আধার কার্ড সংশোধন করাতে আসা এক মহিলা জানান, ৫০০ টাকা খরচ হচ্ছে সংশোধন করতে। ফর্ম লিখে দেওয়ার জন্য আরও ১০ টাকা দিতে হচ্ছে।
ডাকঘরে পাঁচ বছরের কম বয়সিদের নতুন কার্ড করাতে বা কার্ড সংশোধনে টাকা লাগে না। ৫ বছরের বেশি বয়স হলে ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা খরচ হয়। অথচ এখানে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। দোকানের মালিক মুন্না গায়েন বলেন, “আশপাশের কোনও পোস্ট অফিসে এই কাজ হচ্ছে না। তাছাড়া সরকারি জায়গায় করালে ভুল হলে আবার খরচ করতে হবে। আমার এখান থেকে একবার ৫০০ টাকা দিয়ে করালে, তারপর ভুল হলেও সংশোধনের জন্য আর টাকা নেওয়া হবে না।” স্থানীয় সূত্রের খবর, এনআরসি নিয়ে খুব ভয়ে আছেন এলাকার মানুষ। তাই তাঁরা আধার কার্ড ঠিক করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অতিরিক্ত টাকা দিতেও তাই পিছপা হচ্ছেন না তাঁরা। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন ওই ব্যবসায়ী। স্থানীয় প্রধান পারুল গাজি বলেন, “আমি শুনেছি বেশ কয়েকদিন ধরে এই কাজ চলছে। এখানে অনেক বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। তবে কেউ কোনও অভিযোগ করেননি এখনও। শুনেছি মানুষের সমস্যার সমাধানও হচ্ছে। কেউ অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
কিন্তু আধার কার্ড সংক্রান্ত কাজ করার জন্য কেন্দ্র সরকারের অধীনে থাকা ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’র অনুমোদন লাগে। যে অনুমোদন নির্দিষ্ট কয়েকটি ডাকঘর ও ব্যাঙ্কের শাখাকে দেওয়া হয়েছে। ওই দোকান মালিকের অবশ্য দাবি, তাঁর কাছে এই অনুমোদন আছে। হাসনাবাদ ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে কোনও বৈধ অনুমোদন আছে কিনা। হাসনাবাদ থানার পুলিশ জানায়, কয়েকদিন আগে পুলিশ গিয়ে ওই কাজ বন্ধ করতে বলে।