একাগ্রতাই এনেছে সাফল্য
দীর্ঘ দিন ধরেই তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত বাসন্তীর কাঁঠালবেড়িয়া পঞ্চায়েত এলাকা। এখনও মাঝে মধ্যেই বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। সেই এলাকা থেকে এ বার মাধ্যমিকে চোখ ধাঁধানো ফল করেছে বছর ষোলোর ইজাজ আহমেদ সর্দার। এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বড় হয়ে আইএএস বা আইপিএস অফিসার হতে চায় বলে জানিয়েছে বাসন্তীর নারায়ণতলা রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দিরের এই ছাত্র।
ইজাজদের বাড়ি খোরিয়া গ্রামে। বাবা সালাউদ্দিন সর্দার পেশায় কৃষক। চাষের সময় বাদে বছরের বাকি সময় দিনমজুরের কাজ করেন। মা সেফিরা সর্দার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমসিম খেতে হয় তাঁদের। তার মধ্যেই বহু কষ্ট ও প্রতিকূলতার মধ্যেই পড়াশোনা করেছে ইজাজ।
এলাকার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মাঝে মধ্যেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থেকে পড়াশোনা করতে হয়েছে বলে জানায় ইজাজ। কখনও মামা, মাসির বাড়িতে তো কখনও স্কুল শিক্ষকের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা চালাতে হয়েছে। তবে তার মধ্যেও লক্ষ্যে অবিচল থেকে সব ক’টি বিষয়ে লেটার মার্কস-সহ ৬৭৮ নম্বর পেয়ছে সে। রাজ্যের মেধা তালিকায় সম্ভাব্য পঞ্চদশ স্থান অধিকার করেছে। ক্যানিং মহকুমায় সর্বোচ্চ। অঙ্কে ১০০-সহ প্রতিটি বিষয়েই ৯৫-এর বেশি নম্বর পেয়েছে সে। ইজাজের কথায়, ‘‘আরও একটু বেশি নম্বর পেতে পারতাম। কিন্তু হল না। মেধা তালিকায় দশের মধ্যে থাকতে পারলে ভাল হত।”
ইজাজ বলে, “ছোট থেকেই দেখছি এই এলাকায় রাজনৈতিক অশান্তি লেগেই রয়েছে। অন্ধকার নামলেই বোমা, গুলি চলতে থাকে। মাঝে মধ্যে তো দিনের বেলায়ও অশান্তি চলে। এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যই প্রশাসনিক পদে যেতে চাই।”
ছেলের সাফল্যে খুশি ইজাজের বাবা মা। তাঁরা বলেন, “অনেক কষ্টের মধ্যে ও পড়াশোনা করেছে। স্কুলের শিক্ষকরা ও আমাদের বেশ কিছু আত্মীয়স্বজন ওকে সাহায্য করেছেন। অনেক সময়ে তাঁদের বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করতে হয়েছে ওকে।”
ছাত্রের এই সাফল্যে খুশি স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপককুমার কর। তিনি বলেন, “স্কুলের সকল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী খুশি। ছোট থেকেই ইজাজ খুবই মেধাবী। বহু প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করেই ও এই সাফল্য পেয়েছে। স্কুলের শিক্ষকেরা ওকে সাহায্য করেছেন।” ইজাজকে শুভেচ্ছা জানাতে বুধবার বিকেলে তার বাড়িতে আসেন বাসন্তীর ওসি বিশ্বজিৎ ঘোষ। তিনি বলেন, “ইজাজের সাফল্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। ওকে আরও অনেক বড় হতে হবে। আমার শুভকামনা ওর সঙ্গে রইল।” ইজাজের সাফল্য ও তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুনে খুশি ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক আইএএস রবিপ্রকাশ মিনা। তিনি বলেন, “অনেক শুভেচ্ছা ইজাজকে। ওর স্বপ্ন সফল হোক। আইএএস পরীক্ষার জন্য কোনও সাহায্য প্রয়োজন হলে আমি পাশে থাকব।” ইজাজের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন তিনি।
কিন্তু ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে যে অর্থের প্রয়োজন তা কী ভাবে জোগাড় হবে, সেটা ভেবেই এখন চিন্তিত ইজাজের বাবা-মা।
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে |