চলতি বছরে ২১টি আসন খালি রেখেই কেপিসি মেডিক্যাল কলেজকে এমবিবিএসের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি দেবাংশু বসাক বুধবার জানিয়ে দেন, সরকারি প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে ২১টি আসনে ছাত্র ভর্তি করা হয়েছিল। এটা মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা এমসিআইয়ের নিয়মনীতির পরিপন্থী। তাই ওই ২১ জনের ভর্তি বাতিল করতে হবে।
যাদবপুরের ওই মেডিক্যাল কলেজের আইনজীবী আদালতে আবেদন জানান, ২১টি আসনে পুনরায় ছাত্র ভর্তি করার অনুমতি দেওয়া হোক। এমসিআইয়ের আইনজীবী সৌগত ভট্টাচার্য তখন সওয়াল করেন, সুপ্রিম কোর্ট চলতি মরসুমে ভর্তির সময়সীমা ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৭ অক্টোবর করেছে কেবল পাঁচটি রাজ্যের জন্য। ওই পাঁচটি রাজ্য হল অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও কেরল। শীর্ষ আদালত পশ্চিমবঙ্গের কোনও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সময়সীমা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়নি। তাই এই আবেদন মানা সম্ভব নয়। কেপিসি-র আইনজীবীকে সুপ্রিম কোর্ট থেকে অনুমোদন নিয়ে এসে আবেদন করতে বলেন বিচারপতি।
এমসিআইয়ের নিয়ম মেনে কেপিসি মেডিক্যালে ম্যানেজমেন্ট কোটায় ছাত্র ভর্তি হচ্ছে না এবং ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে। একটি মামলার আইনজীবী অনিন্দ্য লাহিড়ী জানান, কেপিসি-কর্তৃপক্ষ গত পাঁচ বছর ধরে ম্যানেজমেন্ট কোটায় কাদের, কী ভাবে ভর্তি করেছেন, তার সবিস্তার তথ্য আদালতে দাখিল করতে বলেছিলেন বিচারপতি বসাক। এ দিন ওই সব তথ্য হলফনামার আকারে আদালতে পেশ করেন কলেজের আইনজীবী জিষ্ণু সাহা। অনিন্দ্যবাবু আদালতে অভিযোগ করেন, এ বারেও ভর্তি নিয়ম মেনে হয়নি।
অনিয়মটা ঠিক কোথায়?
কলেজের নথিপত্র খুঁটিয়ে দেখে এমসিআইয়ের কৌঁসুলি জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টের পরে ২১ জন পড়ুয়াকে ভর্তি করানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের ভর্তির সময়ে কলেজে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হাজির ছিলেন না। অথচ এটা বাধ্যতামূলক। ওই মেডিক্যালের আইনজীবী তখন আদালতে জানান, কলেজ-কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিকে বিকেল ৪টের পরে থাকতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু প্রতিনিধি সেই অনুরোধ রাখেননি।
জিষ্ণুবাবুর বক্তব্যের বিরোধিতা করেন সরকারি কৌঁসুলি তপন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ওই কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া চলেছিল তিন দিন ধরে। কেউই সরকারি প্রতিনিধিকে বিকেল ৪টের পরে থাকতে বলেননি। এই সওয়াল-জবাবের পরেই ২১ জনের ভর্তি বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি।
এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন বলে জানান কেপিসি-র সিইও জয়দীপ মিত্র। তিনি পরে জানান, তাঁদের কলেজে ভর্তির তৃতীয় কাউন্সেলিং হওয়ার কথা ছিল ২৮ সেপ্টেম্বর। সেটা বাতিল করা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর আবার কাউন্সেলিং হবে বলে তাঁরা বিজ্ঞাপন দেন এবং স্বাস্থ্য ভবনকে পর্যবেক্ষক পাঠাতে বলেন। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবন ওই দিন পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারেনি। ৩০ তারিখে আবার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। পাঠানো হয় পর্যবেক্ষকও। বিকেল ৪টের মধ্যে ১২ জন পড়ুয়া এসেছিলেন। তাঁদের ভর্তি করা হয় পর্যবেক্ষকের উপস্থিতিতেই।
জয়দীপবাবু জানান, বেশ কয়েকটি আসন ৪টের পরেও খালি পড়ে ছিল। তখন কেপিসি-কর্তৃপক্ষের তরফে সরকারি পর্যবেক্ষককে বলা হয়, এগুলো খালি থেকে গেলে কলেজের অনেক আর্থিক ক্ষতি হবে। কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথা বলেন। সেই বিজ্ঞাপন ওয়েবসাইটে দিতে আরও মিনিট কুড়ি সময় লেগে যায়। ‘‘কিন্তু স্বাস্থ্য ভবনের পর্যবেক্ষক তত ক্ষণ অপেক্ষা করেননি। আমাদের কাছে আর কোনও পথ ছিল না। তাই আমরা ৬টা পর্যন্ত ভর্তির প্রক্রিয়া চালাই।
তবে সকলকেই বলা ছিল, এটা স্থায়ী ভর্তি নয়। পরে আদালতের নির্দেশে এটা বাতিল হলেও হতে পারে,’’ বলেছেন জয়দীপবাবু।