Friendship

একই থালায় ভাত মেখে খাচ্ছে দুই বন্ধু, ‘আমরা আলাদা কী করে’, প্রশ্ন মোথাবাড়ির সন্দীপ-সোলেমানের

মোথাবাড়ি বিধানসভার বাঙিটোলা চক্রে অলিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়। সে স্কুলেরই তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র, বাঙিটোলা ফিল্ডপাড়ার বাসিন্দা সন্দীপ এবং সোলেমান। সন্দীপের বাবা শম্ভু ভ্যান চালান। সোলেমানের বাবা রসুল শেখ দিনমজুর।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৫৭
Share:
মিড-ডে মিলে একই থালায় খাওয়া সন্দীপ এবং সোলেমানের। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োর দৃশ্য। সোমবার।

মিড-ডে মিলে একই থালায় খাওয়া সন্দীপ এবং সোলেমানের। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োর দৃশ্য। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

স্টিলের থালায় ভাতের উপরে ছড়ানো সয়াবিন-আলুর ঝোল। একই থালা থেকে ভাত মেখে খাচ্ছে দুই বালক। সন্দীপ সাহা, সোলেমান শেখ। মালদহের মোথাবাড়ির অলিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিলের টেবিলে তাদের খোশমেজাজে ভাত খাওয়ার ভিডিয়ো ফের ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। রাজ্যে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির আবহে দুই বন্ধুর এক থালা থেকে ভাগ করে ভাত খাওয়ার দৃশ্যে মন জুড়িয়েছে অনেকের।

Advertisement

মোথাবাড়ি বিধানসভার বাঙিটোলা চক্রে অলিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়। সে স্কুলেরই তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র, বাঙিটোলা ফিল্ডপাড়ার বাসিন্দা সন্দীপ এবং সোলেমান। সন্দীপের বাবা শম্ভু ভ্যান চালান। সোলেমানের বাবা রসুল শেখ দিনমজুর। সন্দীপেরা তিন ভাই। সোলেমানেরা পাঁচ বোন, তিন ভাই।

প্রায় আট মাস আগে স্কুলের ডাইনিং রুমে সন্দীপ আর সোলেমানকে এক থালায় মিড-ডে মিল খেতে দেখে মোবাইলে ভিডিয়ো-বন্দি করেন স্কুলেরই শিক্ষক রবিউল ইসলাম। সন্দীপ এবং সোলেমান তখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। সেই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমেও দিয়েছিলেন রবিউল। সম্প্রতি সে ভিডিয়ো তিনি সমাজমাধ্যমে ফের ‘পোস্ট’ করেন। বছর আটেকের সন্দীপ ও সোলেমানের ভিডিয়ো ফের ‘ভাইরাল’।

Advertisement
পরস্পরের কাঁধে হাত দিয়ে সন্দীপ (লাল টিশার্ট) ও সোলেমান (হলুদ টিশার্ট)।

পরস্পরের কাঁধে হাত দিয়ে সন্দীপ (লাল টিশার্ট) ও সোলেমান (হলুদ টিশার্ট)। নিজস্ব চিত্র।

রবিউল বলেন, “প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমাদের সমস্ত বাচ্চাদের হাতেখড়ি দিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ তৈরি করেছি। পড়াশোনার পাশাপাশি আমরা চেষ্টা করি, বাচ্চাদের মধ্যে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানোর, মিলেমিশে থাকার ও উদার মানসিকতা তৈরিরও।’’ প্রধান শিক্ষক মহম্মদ রেজাবুল হোসেন বলেন, “সন্দীপ, সোলেমানেরা স্কুলে এক বেঞ্চে বসে, এক সঙ্গে খেলে এবং খায়ও। ধর্মের নামে যে বিষ ছড়ানো হচ্ছে, তা থেকে শুধু সন্দীপ এবং সোলেমান নয়, সবাইকেই দূরে থাকতে হবে।”

সন্দীপের বাবা শম্ভু বলেন, “আমরা ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দা। ছেলেবেলায় আমরাও সন্দীপ, সোলেমানের মতো বেড়ে উঠেছি। আমাদের ছেলেমেয়েরাও যাতে এ ভাবেই বেড়ে ওঠে, সেটাই চাইব।” একই সুর সোলেমানের বাবা রসুলের। বলেন, “মানুষ হিসেবে আমরা এক সঙ্গে আছি, থাকবও।”

বাঙিটোলার ফিল্ডের মাঠে সোমবার একসঙ্গে ক্রিকেট খেলায়মগ্ন ছিল দুই বন্ধু। মুখে হাসি নিয়ে সন্দীপ এবং সোলেমান বলে, ‘‘আমরা রোজ একসঙ্গে স্কুলে যাই। এক জন দেরি করলে, অন্য জন জায়গা রেখে দিই। মিড-ডে মিল একসঙ্গে খাই। পাড়াতেও একসঙ্গে থাকি। আমাদের দু’জনের নামের প্রথম অক্ষরও এক। আমরা কী করে তবে আলাদা?’’ প্রশ্ন ছুড়েই ব্যাট-বল হাতে মাঠে ছুটল দু’জন।

দুই বন্ধু।

‘দোস্তজী’!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement