মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্য সরকারের দেওয়া দুর্গাপুজোর অনুদান বয়কটের যে প্রবণতা দেখা গিয়েছে হুগলিতে, এ বার অন্য জেলাগুলিতেও তার ছোঁয়াচ লাগতে শুরু করেছে। আরও দুই জেলার দু’টি পুজো কমিটি জানিয়ে দিল, তারা সরকারি অনুদান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই দু’টি ক্লাবের একটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের, অন্যটি মুর্শিদাবাদের লালগোলার।
জয়নগর মজিলপুর পুরসভার ৭ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা মিলে একটি পুজো করেন। এই পুজোর বয়স প্রায় ৪০ বছর। পুজো কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাপিন বৈদ্য বলেন, ‘‘আরজি কর-কাণ্ডের প্রক্ষিতে আমরা এলাকার বাসিন্দাদের কাছে পুজোর অনুদান বয়কট করার ব্যাপারে মতামত চেয়েছিলাম। সেখানে সকলেই টাকা না নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তার ভিত্তিতেই আমরা অনুদান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তাঁর সংযোজন, ‘‘৮৫ হাজার টাকা আমাদের মতো পুজো কমিটির কাছে একটা বড় ব্যাপার। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে পুজোর সঙ্গে যুক্ত কেউই চাইছেন না, আমরা অনুদান নিই।” বাপিন জানান, এলাকার অন্য পুজো কমিটিগুলির কাছেও তাঁরা আবেদন করেছেন সরকারি অনুদান প্রত্যাখ্যান করার জন্য। তবে এলাকার আর কোনও পুজো কমিটির তরফে এখনও পর্যন্ত অনুদান বয়কটের কোনও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
মুর্শিদাবাদের লালগোলার কৃষ্ণপুর সন্ন্যাসীতলা মহিলা দুর্গোৎসব কমিটিও সরকারের দেওয়া অনুদান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুজো কমিটির সভাপতি কল্পনা ঘোষ বলেন, ‘‘মহিলা জুনিয়ার চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার প্রতিবাদে সকলে পথে নেমেছে। সেখানে আমরাও প্রতিবাদ জানাতেই রাজ্য সরকারের অনুদান প্রত্যাখ্যান করলাম।”
এর আগে পুজোর সরকারি অনুদান প্রত্যাখ্যান করেছে হুগলির চার ক্লাব। তার মধ্যে তিনটি ক্লাবই উত্তরপাড়ার— উত্তরপাড়ার মহিলাদের পুজো বৌঠান সঙ্ঘ, উত্তরপাড়া শক্তি সঙ্ঘ এবং আপনাদের দুর্গাপুজো। উত্তরপাড়ার তিন ক্লাবই জানিয়ে দিয়েছে, এ বার তারা সরকারি আনুকূল্যে পুজো করবে না। সেই তালিকায় নাম জুড়েছে কোন্নগরের মাস্টারপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটিরও। এ বার অনুদান বয়কটের ডাক ছড়িয়ে পড়ল হুগলির বাইরেও।
তৃণমূল সরকার প্রতি বছর দুর্গাপুজো কমিটিগুলোকে আর্থিক সাহায্য করে। প্রথম দিকে আর্থিক অনুদানের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার টাকা। বাজারদরের কথা মাথায় রেখে প্রতি বছরই সেই আর্থিক অনুদানের পরিমাণ কিছুটা করে বৃদ্ধি করা হয়। গত বছর এই অনুদানের অঙ্ক ছিল ৭০ হাজার। চলতি বছর পুজো কমিটিগুলিকে ৮৫ হাজার টাকা করে সরকারি আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।