পদত্যাগ দাবি দুই বিধায়কের, কৌশলী তৃণমূল

তুষারকান্তি ভট্টাচার্য এবং দীপালি বিশ্বাসের বিধায়ক পদের ভবিষ্যৎ কী? বৃহস্পতিবার একুশে জুলাইয়ের সভায় হাজির হয়ে ‘মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে সামিল হতে’ চেয়েছেন বিষ্ণুপুরের কংগ্রেস এবং গাজোলের সিপিএম বিধায়ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৩
Share:

দীপালি বিশ্বাস

তুষারকান্তি ভট্টাচার্য এবং দীপালি বিশ্বাসের বিধায়ক পদের ভবিষ্যৎ কী?

Advertisement

বৃহস্পতিবার একুশে জুলাইয়ের সভায় হাজির হয়ে ‘মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে সামিল হতে’ চেয়েছেন বিষ্ণুপুরের কংগ্রেস এবং গাজোলের সিপিএম বিধায়ক। কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা আব্দুল মান্নান এবং বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, দলত্যাগ বিরোধী আইনে দু’জনেরই বিধায়ক পদ খারিজ করা হোক। এ ব্যাপারে শীঘ্রই স্পিকারকে চিঠি দেবেন তাঁরা। স্পিকার যদি বিধায়ক পদ খারিজ না করেন, তবে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন।

প্রশ্ন হলো, তুষারবাবু এবং দীপালিদেবী কি এ দিন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন? উত্তর মেলেনি। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ওঁরা ২১ জুলাইয়ের সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে যে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে, তাতে সামিল হতে চেয়েছেন।’’ আর স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, জনসমক্ষে কে কী বললেন, কোন দলে যোগ দিলেন, সেটা বিধানসভার এক্তিয়ারভুক্ত নয়। বিষয়টি লিখিত ভাবে এলে তবেই দেখবেন।

Advertisement

রাজ্যের বর্ষীয়ান বিধায়কেরা জানাচ্ছেন, গোড়ায় দুই বিধায়ককে দলের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে জানতে চাইতে হবে যে, তাঁরা দলত্যাগ করেছেন কিনা। এবং সে ক্ষেত্রে কেন তাঁদের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। সেই চিঠির জবাব পেলে তার পর বিধায়ক পদ খারিজের আর্জি নিয়ে স্পিকারের দ্বারস্থ হতে হবে। স্পিকার তখন সংশ্লিষ্ট বিধায়ককে ডেকে পাঠিয়ে তাঁর বক্তব্য জানতে চাইবেন। তিনি যদি মনে করেন যে ওই বিধায়ক দলত্যাগ করেছেন, তা হলে তাঁর পদ খারিজ হবে। তবে যদি ওই বিধায়ক বিধানসভায় দলীয় হুইপ অমান্য করেন, তবে সরাসরি দলত্যাগ বিরোধী আইনের আওতায় চলে আসবেন ও বিধায়ক পদ খোয়াবেন। তার আগে পর্যন্ত বিষয়টি স্পিকারের বিবেচনার উপর নির্ভর করবে।

এর আগে স্পিকার মনে করেননি বলে কার্যত তৃণমূলের খাতায় নাম লিখিয়েও কংগ্রেসের বিধায়ক পদ খোয়াননি সুব্রত মুখোপাধ্যায়। গত বিধানসভাতেও অসিত মাল, ইমানি বিশ্বাস, গুলাম রব্বানি, সুশীল রায়রা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেও বিধায়ক পদ খারিজ হয়নি। আইনের নানা ফাঁক দেখিয়ে স্পিকারের ডাকা শুনানিতে গরহাজির থেকে শেষ দিন পর্যন্ত এঁরা বিধায়ক ছিলেন।

এ বারও শুনানির বিষয়টি দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে বাম-কংগ্রেসের আশঙ্কা। মান্নানের কথায়, ‘‘তৃণমূল বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। যেমন অতীতে হয়েছে। যদি স্পিকার শুনানি নিয়ে টালবাহানা করেন বা বিষয়টি দীর্ঘায়িত করা হয়, তা হলে আদালতে যাব।’’ তাঁর দাবি, অরুণাচলপ্রদেশ বিধানসভার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্পষ্ট, স্পিকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য নীতিগত প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এঁদের তো ইস্তফা দিয়েই তৃণমূলে যোগ দেওয়া উচিত ছিল। তাঁরা যে দলত্যাগ করেছেন, এখন স্পিকারকে চিঠি দিয়ে তা জানানো উচিত।’’ সুজনবাবুও বলেন, ‘‘আশা করি নৈতিকতার স্বার্থে ওঁরা বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। যদি না দেন, তা হলে দলত্যাগ বিরোধী আইন যাতে কার্যকর হয় সে জন্য যা করার করবো।’’ দলত্যাগ বিরোধী আইনে দুই বিধায়কের পদ খারিজ হওয়ার কথা— অভিমত সোমনাথবাবুরও।

রাজ্যের পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘কারও বিধায়ক পদ তখনই খারিজ হয় যদি কেউ বিধানসভায় দলীয় নির্দেশ অমান্য করেন। তবে সিপিএম এবং কংগ্রেস যদি মনে করে যে ওই দুই বিধায়ক দলবিরোধী কাজ করেছেন, তা হলে তারা স্পিকারের কাছে আবেদন জানাতে পারে।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘২১ জুলাইয়ের সভায় যোগ দেওয়ার জন্য কংগ্রেস যদি তাদের বিধায়ককে কাঠগড়ায় তোলে, ভালই তো!’’

তুষারবাবু এবং দীপালিদেবীর ক্ষেত্রে কৌশলী অবস্থান নিলেও তৃণমূল সূত্রের খবর, দলে যোগ দিতে গেলে বিধায়ক পদ ছেড়ে ফের ভোটে দাঁড়াতে হবে বলেই স্পষ্ট জানিয়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশের প্রতিফলন দেখা গিয়েছে দুই বিধায়কের প্রতিক্রিয়াতেও। তুষারবাবু জানান, তিনি ছ’মাসের মধ্যে ইস্তফা দিতে পারেন। দীপালিদেবীর মন্তব্য, ‘‘আমরা উপনির্বাচনের মুখোমুখি হতে ভয় পাই না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement