ফাইল চিত্র।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে জমি ফেরত পেয়ে গিয়েছেন চাষিরা। সিঙ্গুরে টাটাদের শেষ চিহ্ন বলতে ছিল ডাঁই করে রাখা ন্যানো কারখানার ধ্বংসাবশেষ। প্রায় ২০ হাজার টন ওজনের লোহা-ইস্পাতের কাঠামোও অবশেষে বিকিয়ে গেল সাকুল্যে ১৭ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকায়। পুরোদস্তুর ইতি পড়ল ২০০৬ সালে শুরু হওয়া একলাখি গাড়ির সিঙ্গুর পর্বে।
শিল্প উন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসার পর রাজ্য সিঙ্গুরের জমি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছে। সে জন্য মাটি ভরাট করতে হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে পাঁচিলও। উপড়ে ফেলা হয়েছে জমির ভিতরের ২৫ কিমি পাকা রাস্তা। আর ভাঙা হয়েছে ৬টি শেড। যার আয়তন ছিল প্রায় ২ লক্ষ বর্গফুট। সরকার টাটাদের নোটিস দিয়ে ওই শেডগুলি সরিয়ে নিয়ে যেতে বলেছিল। কিন্তু টাটারা আর সিঙ্গুরের দিকে ফিরে তাকায়নি। ফলে বাধ্য হয়ে রাজ্যই শেডগুলি ভেঙে ফেলে। লোহার বিম, ইস্পাতের কাঠামো কারখানার চত্বরের এক পাশে জমা করা হয়। টাটাদের ফের তা নিয়ে যেতে অনুরোধ করে প্রশাসন। তাতেও কোনও সাড়া না মেলায় শিল্প উন্নয়ন নিগম তা নিলাম করে দিয়েছে। কলকাতার এক ছাঁট লোহার কারবারি তা কিনে নিয়েছেন।
শিল্প দফতরের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, ২০ হাজার টন ইস্পাতের বাজার দর ৭৫ থেকে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারত। কিন্তু কোনও ক্রেতাই ১৭.৫৮ কোটির বেশি দিতে চাননি। নিগমের এক কর্তার কথায়, ‘‘নিয়ম মেনেই কেন্দ্রীয় অধীনস্থ এক সংস্থার মাধ্যমে নিলাম করা হয়েছে। প্রথম দু’বার যে দাম পাওয়া গিয়েছিল, তা মেনে নেওয়া হয়নি। শেষবার যে দাম পাওয়া যায়, তা অর্থ দফতরে পাঠানো হয়। অর্থ দফতর অনুমোদন করার পরই ইস্পাত-লোহা বিক্রি করা হয়েছে।’’
আরও পড়ুন:মমতার সঙ্গে মঞ্চ ভাগ! দোটানায় সিপিএম
ন্যানো প্রকল্পে টাটারা প্রায় ১০০০ কোটি টাকা লগ্নি করেছিল। ৯৯৭ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ১১৮ কোটি টাকা দিয়েছিল সরকার। এ ছাড়া, নিকাশির জন্য ৩০ কোটি, কাঁটাতারের বেড়া এবং আইনি খরচ বাবদ প্রায় ১০ কোটি টাকা লেগেছিল। প্রায় তিন বছর পুলিশ পাহারার জন্য রাজ্যের আরও কয়েক কোটি খরচ হয়েছিল বলে নিগম কর্তাদের কারও কারও দাবি।
সিঙ্গুরের জমি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে গিয়ে সরকারের এখন আরও অন্তত ২৫০ কোটি খরচ হয়েছে বলে খবর। পাশাপাশি, অনিচ্ছুক চাষিদের নতুন করে ক্ষতিপূরণ এবং সিঙ্গুর প্যাকেজের মাধ্যমে চাষিদের ভাতা ও চাল বিলির খরচ তো রয়েছেই। এত শত খরচ হলেও টাটাদের ফেলে যাওয়া লোহা থেকে দাম মিলেছে মাত্র সাড়ে ১৭ কোটি। ‘‘যদিও রাজনীতির দাঁড়িপাল্লায় এ সব বিচার্য নয়’’ —মন্তব্য এক শিল্পকর্তার।