টানা বৃষ্টি ও বাঁধ ভাঙায় প্লাবিত হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। অনেক এলাকা এখনও জলমগ্ন। বানভাসি এলাকায় এখনও পর্যন্ত ১৪জনের মৃত্যু হয়েছে। বহু বছর পরে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেলায় এতজনের মৃত্যু হল বলে প্রশাসনের এক
সূত্রে খবর।
ইতিমধ্যে বানভাসি এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টে ১৪ জনের মৃত্যুর কথাও জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “যে কোনও মৃত্যুর ঘটনাই দুঃখজনক। দুর্যোগের জেরে মৃত্যু এড়ানোর সব রকম চেষ্টা চলছে।”
জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ওই ১৪ জনের মধ্যে জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। সর্পদষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে দাসপুর ১-এর নবকুমার জানার, কেশপুরের সুমন সামন্ত, প্রদীপ সামন্তর, দাসপুর-২ এর প্রদীপ মেট্যার। সর্পদষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ঘাটালের পদ্মা রাণা, কমলাবালা পালের, কেশপুরের শেখ সইদ আলির, গড়বেতা-২ এর আঙুরবালা রায়ের।
অন্য দিকে, বজ্রাঘাতে মারা গিয়েছেন শালবনির সনৎ মাহাতো, খড়্গপুর-১ এর সনাতন টুডু, মদন মুদি, ঘাটালের মনোরঞ্জন পণ্ডিত, খড়্গপুর-২ এর পঞ্চানন মাঝি। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন চন্দ্রকোনা-২ এর পরিবালা দোলুই।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এ বার জেলার ৩ লক্ষ ২ হাজার ৭১৩ জন মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছিলেন। ৭৫৩টি গ্রাম কমবেশি জলমগ্ন হয়েছিল।
গত ২০ জুলাই থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। শুরুতে ঘাটালের একের পর এক এলাকা জলমগ্ন হতে শুরু করে। পরিস্থিতি খারাপ হয় বাঁধ ভেঙে। ঘাটালের প্রতাপপুরে শিলাবতীর বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে। বাঁধ ভেঙে জল ঢোকার ফলে ঘাটাল শহরও ভেসে যায়। শুরুতে ঘাটাল মহকুমার ২৫টি পঞ্চায়েত এলাকা জলের তলায় চলে গিয়েছিল। বাধা ভাঙায় আরও ১৬টি পঞ্চায়েত এলাকা পুরোপুরি জলের তলায় চলে যায়।
মহকুমা হাসপাতাল, বাজার, পুরসভা, থানায় জল ঢুকে যায়। জল ঢুকেছিল ঘাটাল হাসপাতালের ভবনেও। বহু এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। একে জল, তার উপরে বিদ্যুৎ না থাকায় সমস্যায় পড়েন এলাকার বাসিন্দারা।
শুধু ঘাটাল নয়, বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয় চন্দ্রকোনা-১ ও ২, দাসপুর- ১ ও ২, কেশপুরেও। এই সব এলাকায় জলবন্দি মানুষের হাহাকার দেখা দেয়। বিগত এক দশকের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি সবথেকে খারাপ হয়েছিল ২০০৭ সালে। তারপর এ বারের এই পরিস্থিতি। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “নতুন করে আর পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে ভারী বৃষ্টি হলে পরিস্থিতির খারাপ হতে পারে।”