লজ্জা: আদালতের পথে ধর্ষণে অভিযুক্তরা। নিজস্ব চিত্র
রানাঘাটের মিশনারি স্কুলে ৭৫ বছরের সন্ন্যাসিনীকে এক জনই ধর্ষণ করেছিল বলে মঙ্গলবার রায় দিল কলকাতার নগর দায়রা আদালত। ধর্ষণের পাশাপাশি ওই মিশনারি স্কুলে ডাকাতির অভিযোগে আদতে বাংলাদেশের নাগরিক নজরুল ইসলাম ওরফে নজুকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন বিচারক কুমকুম সিংহ।
অন্য পাঁচ অভিযুক্তের মধ্যে মহম্মদ সালিম শেখ, খেলাদুর রহমান, মিলন সরকার ও ওহিদুল ইসলামকে ডাকাতি ও ডাকাতির ষড়যন্ত্রের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। গোপাল সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ষড়যন্ত্র এবং দোষীদের আশ্রয় দেওয়ার দায়ে। আজ, বুধবার দোষীদের শাস্তি ঘোষণা করবেন বিচারক। নজরুল ও ডাকাতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত অন্য চার জনের যাবজ্জীবন হতে পারে। গোপাল সরকারের সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে সাত বছরের জেল। গোপাল ছাড়া বাকিরা বাংলাদেশের নাগরিক। এই ঘটনায় আরও এক অভিযুক্ত রয়েছে। তাকে এখনও ধরা যায়নি।
এ দিন রায় ঘোষণার আগে বিচারক সিংহ বলেন, ‘‘যে রাজ্যে সিস্টার নিবেদিতা, মাদার টেরিজা কাজ করে গিয়েছেন সেই রাজ্যে আর্ত, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এক বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে এই আচরণ অত্যন্ত লজ্জার ও দুর্ভাগ্যজনক।’’ রায় ঘোষণার সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আদালতে হাজির ছিলেন নির্যাতিতার সহকর্মী আট সন্ন্যাসিনী। দোষীদের কী শাস্তি হয় তা দেখে মন্তব্য করবেন বলে জানান এক সন্ন্যাসিনী।
২০১৫ সালের ১৪ মার্চ রাতে রানাঘাটের গাংনাপুর থানার একটি মিশনারি স্কুলে চড়াও হয় কয়েক জন দুষ্কৃতী। তারা এক সন্ন্যাসিনীকে গণধর্ষণ করার পাশাপাশি বেশ কয়েক লক্ষ টাকা লুঠ করে বলে অভিযোগ দায়ের হয়। প্রথমে গাংনাপুর থানা, পরে সিআইডি ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করে। গ্রেফতার করা হয় ছয় অভিযুক্তকে। তাদের বিরুদ্ধে প্রথমে রানাঘাট আদালতে মামলার চার্জগঠন হয়। সেই সময়ে কয়েক জন সন্ন্যাসিনী কলকাতা হাইকোর্টে এক আর্জিতে জানান, তাঁরা রানাঘাটের আদালতে সাক্ষ্য দিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। মামলাটি অন্য কোথাও সরানোর নির্দেশ দিক উচ্চ আদালত। সেই আবেদন মঞ্জুর করে কলকাতা হাইকোর্ট এই মামলার বিচার কলকাতার নগর দায়রা আদালতে করার নির্দেশ দেয়। বিচারক সিংহ জানান, তিনি ওই স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ, ধর্ষণের মেডিক্যাল রিপোর্ট, ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট-সহ নানা তথ্যপ্রমাণ এবং তিন সন্ন্যাসিনী-সহ চার প্রত্যক্ষদর্শী ও ৪২ জন সাক্ষীর বয়ান যাচাই করেছেন।
বিচারক বলেন, ‘‘নজরুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সে সন্ন্যাসিনীকে বিবস্ত্রও করেছিল।’’ গোপাল সরকার দুষ্কর্মের আগে দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দিয়েছিল। গোপালের দাদার মেয়ের বিয়েতে দোষীরা জড়ো হয়ে ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল বলে স্থানীয় গোয়ালবাটি গ্রামের বাসিন্দারা সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে গোপালের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রমাণ মেলেনি। নজরুল-সহ বাকি পাঁচ জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রমাণ রয়েছে।
মামলার সরকারি কৌঁসুলি দীপক ঘোষ ও অনিন্দ্য রাউত জানান, বিচারক দোষীদের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন শাস্তি কী হতে পারে তাও জানিয়ে দিয়েছেন। যেমন ডাকাতির জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন। সর্বনিম্ন দশ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন, সর্বনিম্ন সাত বছর জেল ও জরিমানা। দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দেওয়ার শাস্তি সাত বছর কারাদণ্ড।