মঙ্গলসূত্র বিয়ের সময় পরানো হয়
জন্ম, মৃত্যু আর বিয়ে— এই তিনটি ঘটনাকেই ভারতীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী জীবনের প্রধান ঘটনা বলে চিহ্নিত করা হয়। আর বিয়ে করার আগে এবং পরে আমাদের অনেক রকম নিয়মকানুন মেনেও চলতে বলা হয়। যেমন বাঙালি বিবাহিত মহিলাদের শাঁখা-পলা পরার নিদান দেওয়া রয়েছে। হিন্দু বিবাহিত মহিলা মাত্রেই সিঁদুর পরবেন— এমন কথা শোনা যায় বহু যুগ ধরে।
এ ছাড়াও হিন্দু ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি অনুযায়ী এক জন বিবাহিত মহিলাকে সব মিলিয়ে পাঁচটি সৌভাগ্য চিহ্ন দেহে বহন করতে হয়— কুমকুম, চুড়ি, নাকছাবি, পায়ের আংটি এবং মঙ্গলসূত্র। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল এই মঙ্গলসূত্র। যার নেপথ্যে রয়েছে বিস্তৃত ইতিহাস।
মঙ্গলসূত্র বিয়ের সময় পরানো হয়। একে বিবাহিত মহিলার গলায় থাকাকালীন তার স্বামীর সুরক্ষা কবচ বা সুরক্ষা ঢাল হিসেবেও বিবেচনা করেন ভারতবর্ষের অধিকাংশ ধর্মভীরু মানুষজন। মঙ্গলসূত্র শব্দটির অর্থগত বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় পবিত্র সুতো। মঙ্গলসূত্রের ধারণার উৎপত্তি দক্ষিণ ভারতে হয়েছিল। এই মত অনুযায়ী, মঙ্গলসূত্র বা মঙ্গালিয়াম বা থালি আসলে কাঁচা হলুদ মাখানো, হলুদ রঙের সুতো, যা বিয়ের সময় কনের গলায় তিনটি গিঁট দিয়ে পরিয়ে দেওয়া হয়। কালের পরিবর্তনের সঙ্গে এই সুতোর মধ্যে কালো এবং সোনালি রঙের ছোট ছোট জপের মালার আকারের পুঁতি দিয়ে তার রূপের পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে এটি আর শুধুমাত্র প্রথায় আটকে নেই। বরং আর পাঁচটি গয়নার মতই এটিকে ব্যবহার করা হয়।
মঙ্গলসূত্রের মধ্যে থাকা সোনা কুণ্ডলীতে উপস্থিত বৃহস্পতিকে শক্তিশালী করে
অন্য দিকে পুরাণ মতে মনে করা হয়, শিবের প্রতীক হল কালো মুক্তো এবং পার্বতীর প্রতীক হল সোনা। এই কালো মুক্তো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে খারাপ নজর থেকে দূরে রাখে এবং সোনা সেই মুক্তোকে ধারণ করে। শিব-পার্বতীর আশীর্বাদস্বরূপ এই গয়না তাই ধারণা করা হয় নতুন জীবনে প্রবেশ করার আগে। আবার জ্যোতিষশাস্ত্রে বলা হয়, মঙ্গলসূত্রের মধ্যে থাকা সোনা কুণ্ডলীতে উপস্থিত বৃহস্পতিকে শক্তিশালী করে এবং কালো মুক্তো বিবাহিত দম্পতির জীবনকে শনি, রাহু, কেতু ও মঙ্গলের অশুভ প্রভাব থেকে দূরে রাখে।
কারণ যাই হোক না কেন, দেশজুড়ে এই গয়নাটি নিজের মতো করে জায়গা করে নিয়েছে। দক্ষিণ ভারতে মঙ্গলসূত্রের জন্ম হলেও সম্পূর্ণ ভারত জুড়েই এই গয়না নিজস্ব মাহাত্ম্যয় বিয়ের আচার-অনুষ্ঠানে জরুরি এখন। একই সঙ্গে ঘটে চলেছে এর মঙ্গল চিহ্নেরও বিবর্তন। শিখ সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে দেখা যায় কনের পিতা জামাইকে সোনার মুদ্রা এবং একটি, সোনার চুড়ি দেন। যা পরে একটি কালো সুতোর মধ্যে ভরে মঙ্গলসূত্র তৈরি করা হয়। অন্য দিকে বিহারে, মঙ্গলসূত্রে একটি সোনার দুলসহ একটি মাত্র কালো পুঁতির চল রয়েছে। আবার তামিলে একটি সোনার চেন বা দুলের সঙ্গে হলুদের গন্ধ এবং বর্ণযুক্ত সুতো জড়ানো থাকে। তেলগু রাজ্যের মঙ্গলসূত্রও তামিলের মতোই। তাঁরা মনে করেন, মুক্তো এবং প্রবালের মতো পাথরগুলি এই গয়নায় কেন্দ্রীভূত।