স্পষ্ট উচ্চারণে এক নিঃশ্বাসে রায় পড়ে শোনাচ্ছিলেন বিচারক। আদালত কক্ষে তখন আলপিন পতনের নিস্তব্ধতা। হঠাৎ ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ! কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গেলেন বিচারকও। তার পর আবার পড়তে শুরু করলেন। শোনালেন ফাঁসির সাজা। বিচারকের পড়া শেষ হতেই আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না অপরাধী। কান্নায় ভেঙে পড়লেন সেই যুবক। কালো কোটের ভিড়ে মধ্যে থেকে খুঁজতে লাগলেন পরিজনের মুখ। ঠিক সেই সময়েই এজলাসে শোনা গেল আরও একটি তীব্র আর্তনাদ। ‘সুতপা... সুতপা ...’ বলে চিৎকার করে উঠলেন মুর্শিদাবাদের বহরমপুরকাণ্ডে নিহত তরুণীর বাবা স্বাধীন চৌধুরী।
‘প্রেমিকা’ সুতপা চৌধুরীকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া সেই ‘প্রেমিক’ সুশান্ত চৌধুরীকে বৃহস্পতিবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এই সাজা ঘোষণার পর আদালতের বাইরে বেরিয়ে সুতপার বাবা স্বাধীন বলেন, ‘‘আমার মেয়ের আত্মা আজ শান্তি পাবে। এই ধরনের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড না হলে আবার অন্য কারও সঙ্গে ঘটতে পারত।’’
কিন্তু এই রায়ে খুশি নন মুর্শিদাবাদের বহরমপুরকাণ্ডে নিহত সুতপা চৌধুরীর মা পাপড়ি চৌধুরী। মেয়ের খুনি সুশান্ত চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে— এই খবর পাওয়া মাত্রই মালদহের ইংরেজবাজারের বাড়িতে বসে কেঁদে ফেলেন তিনি। ধরা গলায় বলেন, ‘‘আমি চাইছিলাম, ফাঁসি হোক মেয়ের খুনির। তবে এই শাস্তি খুব কম। আমার মেয়ে যে যন্ত্রণা পেয়েছে, খুনি তো সেই যন্ত্রণা পেল না!’’
সরকার পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় এই রায় প্রসঙ্গে বলেন, “আধুনিক সমাজে এক জন মহিলা যদি মনে করেন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসবেন, তবে সেটি করার অধিকার তাঁর আছে। সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে গেলে প্রেমিকাকে খুন করার অধিকার জন্মায় না। প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক থাকল না বলে অন্য কারও সঙ্গে তাঁকে থাকতে দেব না, এটা সত্যিই বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা।” তিনি জানান, আদালতের কাছে মৃত্যুদণ্ডই প্রার্থনা করা হয়েছিল। এই প্রসঙ্গেই তাঁর সংযোজন, “এলোপাথাড়ি কোপাতে গিয়ে সুশান্তের নিজের হাত কেটে যায়, তারপরেও থামেননি। একটি অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে গান টয় কেনেন এবং যারা মেয়েটিকে বাঁচাতে গিয়েছিল, তাঁদেরকেও ভয় দেখানো হয়। সুতপার মৃত্যুকে নিশ্চিত করার জন্য ওই খেলনা বন্দুক নিয়ে ঘটনাস্থলে যান সুশান্ত। সমস্ত কিছু বিবেচনা করে আমাদের মনে হয়েছে এটা বিরলতম ঘটনা।”
অন্য দিকে, সুশান্তের আইনজীবী পীযূষ ঘোষ বলেন, ‘‘আমার মক্কেল এক জন মেধাবী ছাত্র। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অন্তত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রার্থনা করেছিলাম। মহামান্য আদালত তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছে। রায়ের কপি পাওয়ার পর মক্কেলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’