সংসদীয় গণতন্ত্রে মহিলাদের ৩৩ শতাংশ অংশীদারিত্ব সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংসদে বিল পেশ। পঞ্চায়েত এবং পুরসভায় আগেই মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত ছিল। এ বার লোকসভা, সব রাজ্যের এবং ‘ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন’ দিল্লির বিধানসভাতেও মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত করা হবে মহিলাদের জন্য। তফসিলি জাতি, তফসিলি জনজাতিদের জন্যও কার্যকর হবে এই সংরক্ষণ। কেন্দ্র সরকার প্রস্তাবিত এই বিলে সংরক্ষণের সর্বাধিক সময়সীমা রাখা হয়েছে ১৫ বছর। উল্লেখ্য, আসন পুনর্বিন্যাসের পর পর্যায়ক্রমে বদলাবে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনও।
কী ভাবে আইনে পরিণত হবে এই বিল?
প্রথমত, সংসদের উভয়কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে এই বিল পাশ করাতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ৩৬৮ ধারা অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনীর জন্য প্রয়োজন হবে দেশের ৫০ শতাংশ রাজ্যের অনুমোদন।
মহিলা সংরক্ষণ বিলের ইতিহাস কী?
বৈষম্য দূরীকরণ এবং লিঙ্গসমতার ক্ষেত্রে মহিলাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন আবশ্যিক। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯৯২ সালের সংবিধান আইনেই পঞ্চায়েত এবং পুরসভায় মহিলাদের ৩৩ শতাংশ আসন সুরক্ষিত হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে দেশের একাদশতম লোকসভায় সংসদের নিম্নকক্ষ এবং রাজ্যের বিধানসভাগুলিতেও মহিলা সংরক্ষণের কথা বলা হয়। এরপর ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালে পরপর দু’বার— লোকসভা, বিধানসভায় মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের বিষয়টি বিল আকারে এলেও সংসদে তা পাশ হয়নি। শেষবার মনমোহন সিংহের সরকার ২০০৮ সালে সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল আনে। ২০১০ সালে রাজ্যসভায় তা পাশও হয়ে যায়। তবে লোকসভায় এই বিল পাশ করার আগেই এই বিল রাজ্যসভায় এনেছিল মনমোহন সিংহের সরকার এবং সংসদের উচ্চকক্ষে তা পাশও হয়ে যায়। কিন্তু, লোকসভায় এই বিল সবুজ সংকেত পায়নি।
এই মুহূর্তের ছবিটা ঠিক কী?
লোকসভায় এখন ৫৪২ জন নির্বাচিত সাংসদের মধ্যে মাত্র ৭৮ জন মহিলা। শতাংশের নিরিখে যা মাত্র ১৪.৩৯ ভাগ। গত বছরে একটি প্রশ্নের উত্তরে সংসদের তরফে জানানো হয়, রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের অংশীদারিত্ব লোকসভার তুলনায় আরও কম। গোটা দেশের বিচারে বিধানসভায় মহিলাদের অংশীদারিত্ব মেরেকেটে ৮ শতাংশ।
কবে কার্যকর হবে নতুন আইন?
২০২৩ মহিলা সংরক্ষণ বিল অনুযায়ী, আসন পুনর্বিন্যাস হওয়ার পরই তা কার্যকর হবে। উল্লেখ্য, সংসদের আসন পুনর্বিন্যাসের জন্য আবশ্যিক জনগণনা। ২০২১ সালে জনগণনা হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে সরকার তা করতে পারেনি। ২০২৪ সালে লোকসভা ভোট, তাই প্রক্রিয়া শুরু হতে আরও বিলম্ব হবে বলে এপ্রিলে জানিয়েছে কেন্দ্র। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, দেশের আইন মেনে ২০২৬ সালে জনগণনার পরই একমাত্র আসন পুনর্বিন্যাস করা সম্ভব। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের অনুমান, এই সব কিছুর পর ২০২৯ সালের আগে এই বিল কার্যকর করা কার্যত অসম্ভব।