ছবি : সংগৃহীত।
বিমানের আসনে বসার পরে যাত্রীরা জানলার ঢাকা সরিয়েই দেন সচরাচর। তবে যদি তা না-ও করেন, তা হলে বিমানসেবিকারাই এসে অনুরোধ করেন জানলার ঢাকা সরিয়ে দিতে। তা কি শুধু জানলা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখা যাবে বলে? একেবারেই তা নয়। উড়ান প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত অফিসার কর্নেল রাজাগোপালন বলছেন, বিমানের উড়ান বা অবতরণের সময়ে জানলার ঢাকা সরাতে বলা হয় আদতে যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই।
খোলা জানলার সঙ্গে যাত্রী নিরাপত্তার সম্পর্ক কী?
বিপদ বলেকয়ে আসে না। আর যে কোনও বিপদ এড়াতে সতর্ক থাকারই পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ, আগে থেকে সতর্ক থাকলে বিপদ পুরোপুরি এড়ানো না গেলেও তা থেকে হওয়া ক্ষতির পরিমাণ কমানো যেতে পারে। বিমানের জানলার পাল্লা খোলা রাখাও সেই সতর্কতারই অঙ্গ। উড়ান সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের বিশ্লেষক ধৈর্যশীল ভান্ডেকর বলছেন, ‘‘একে বলা হয় ‘সিচুয়েশনাল অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড ওরিয়েন্টেশন’। অর্থাৎ, চারপাশে যা ঘটছে সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকা। যা বিমানের যাত্রী এবং ক্রু সদস্য— উভয়ের জন্যই জরুরি। জানলার ঢাকা, যাকে বিমানে ‘ব্লাইন্ড’ বলা হয়, তা খোলা থাকলে বাইরের পরিস্থিতিতে নজর রাখা সম্ভব হবে। যাত্রীদের জন্য তো বটেই, ক্রু সদস্যদের জন্যও যা জরুরি।’’
ওঠানামার সময় কেন বাইরে নজর রাখবেন?
বিমান দুর্ঘটনার গত বিশ বছরের রিপোর্ট বলছে, অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে বিমানের উড়ান এবং অবতরণের সময়ে। রাজাগোপালন বলছেন, ‘‘তার কারণ, বিমানের উড়ান এবং অবতরণ বিমান চালনার অন্যতম জটিল পদ্ধতি। ওই সময়ে বিমানের ক্রু-সদস্যদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বিমানের গতি, দিকনির্ণয় এবং বিমান চালনার ক্ষেত্রে নানা প্রযুক্তিগত বদল আনা হয়। জানলা খোলা থাকলে বাইরের আলোর সঙ্গে অভ্যস্ত হবে চোখ। কোনও গন্ডগোল হলে, তা সহজে এবং সময় থাকতে চোখে পড়বে।’’ তা ছাড়া বিমানের ডানায় আগুন ধরে যাওয়ার মতো ঘটনাও জানলা দিয়ে দেখতে পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে যাত্রীরাও বুঝতে পারবেন, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বিমানের কোন অংশ নিরাপদ। কোন আপৎকালীন দরজা দিয়ে তাঁরা নিরাপদে বাইরে বেরোতে পারবেন।