পুজোর ক’টা দিন যদি সত্যিই মন ভাল করতে হয়, সে ক্ষেত্রে শহর ছেড়ে পাড়ি দিতে পারেন দেশেরই তিন রাজ্যে। —ফাইল চিত্র।
আকাশে, বাতাসে পুজোর গন্ধ এলেই মন ভাল হয়ে যায় অনেকের। তবে ব্যক্তিগত জীবনে ওঠা-পড়া তো লেগেই থাকে। প্রিয় মানুষের বিয়োগ কিংবা বিচ্ছেদের ভারেও মন খারাপ হয় কখনও। পুজোর সময়ে সেই সব স্মৃতি আরও বেশি করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। অনেকেই পুজোর হিড়িকে গা ভাসান। আবার অনেকে বহির্জগতের থেকে নিজেকে আলাদা করে একেবারে একলাযাপনে মন দেন। তবে পুজোর ক’টা দিন যদি সত্যিই মন ভাল করতে হয়, সে ক্ষেত্রে শহর ছেড়ে পাড়ি দিতে পারেন দেশেরই তিন রাজ্যে। যেখানে গেলে রং-রূপের সমারোহ দেখে মন খারাপ থাকার কোনও উপায়ই থাকবে না।
১) ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স, উত্তরাখণ্ড
উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান হল এই ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স। সমুদ্র থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফুট উঁচু এই উপত্যকা বিরল সব উদ্ভিদ ও প্রাণীর বাসস্থান। বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের পাশাপাশি এখানে এশিয় কালো ভল্লুক, স্নো লেপার্ড, শেয়াল ও বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পাখি এবং হরিণের সন্ধান মেলে। পুষ্পবতী নদী লাগোয়া পায়ে হাঁটা পথে পৌঁছে যাওয়া যায় হেমকুণ্ড সাহিবে। এই পায়ে হাঁটা পথে হিমালয়ের উপত্যকা ঘুরে দেখতে বহু মানুষ ট্রেক করতে আসেন এখানে। দেখলে মনে হবে যেন কোনও এক শিল্পীর হাতে আঁকা রঙিন পোস্টকার্ড। তবে ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্স যেহেতু জাতীয় উদ্যান তাই উপত্যকার ভিতরে থাকা খাওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। হৃষিকেশ, যোশীমঠ, গোবিন্দঘাট ও ঘনগরিয়ায় ছোট-বড় নানা রকমের পর্যটক নিবাস রয়েছে। সেখান থেকে গাড়িতে বা পায়ে হেঁটে পৌঁছনো যায় এই ফুলেল উপত্যকায়। অগস্ট, সেপ্টম্বর, অক্টোবর— এই উপত্যকায় ঘোরার উপযুক্ত সময়। আবহাওয়াও মনোরম থাকে এই সময়।
ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স, উত্তরাখণ্ড। —ফাইল চিত্র।
২) পিপলি গ্রাম, ওড়িশা
২০১০ সালে অনুষা রিজ়ভি এবং মাহমুদ ফারুকি পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল। নাম পিপলি লাইভ। সেই থেকেই সাধারণ মানুষের নজরে উঠে আসে ওড়িশার সেই বিখ্যাত গ্রাম পিপলি। এই গ্রাম বিশ্বের দরবারে পরিচিত তার শিল্পকলার জন্য। কাপড়ের উপর অ্যাপলিকের কাজ করা রঙিন ল্যাম্পশেড, ছাতা, ব্যাগ, ওয়াল হ্যাংগিং, পাখা, কুশন, চাদর, বালিশের খোল— কী পাওয়া যায় না সেখানে। তবে ইতিহাস বলছে, পিপলি গ্রামের শিল্পীদের কাজ দেখে তৎকালীন পুরীর রাজা জগন্নাথ দেবের বালিশ, মন্দিরের চাঁদোয়া, সামিয়ানা, রথসজ্জার সামগ্রীর বরাত দিয়েছিলেন। সেই থেকেই এই শিল্পের পসার। ভুবনেশ্বর এবং পুরীর ঠিক মাঝখানে পড়ে এই শিল্পগ্রাম। প্রকৃতির রং না থাকুক, শিল্পীদের হাতের কাজ এই গ্রামকে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি দিয়েছে।
পিপলি গ্রাম, ওড়িশা। —ফাইল চিত্র।
৩) টিউলিপ গার্ডেন, কাশ্মীর
চারদিকে পাহাড়। তারই মধ্যে রকমারি ফুলের সমাহার। যে দিকে দুচোখ যাবে শুধুই রঙিন টিউলিপ। পৃথিবীর মাটিতে যেন এক টুকরো স্বর্গ। শ্রীনগরের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেনে রঙের এই বাহার দেখতেই প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক ভিড় জমান। একসঙ্গে ১০ লক্ষের বেশি টিউলিপ নিজের চোখে দেখার সুযোগ পেতে পারেন একমাত্র এখানেই। এ ছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের ড্যাফোডিল। এখানে এলে মনে পড়বে বলিউডের বিখ্যাত ছবি ‘সিলসিলা’র সেই গানের দৃশ্য। টিউলিপের বাগানের মধ্যে ‘দেখা এক খোয়াব’ গানে অমিতাভ বচ্চন এবং রেখার অনস্ক্রিন রোম্যান্স। আকাশপথে কলকাতা থেকে শ্রীনগর যেতে সময় লাগে প্রায় চার ঘণ্টা। শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে বাগানের দূরত্ব ১৮ কিমি। আর ট্রেনে করে গেলে হাওড়া থেকে প্রথমে জম্মু পৌঁছতে হবে। তার পর সেখান থেকে সড়কপথে শ্রীনগর।
টিউলিপ গার্ডেন, কাশ্মীর। —ফাইল চিত্র।