মণিপুরের লোকটাক হ্রদ। ছবি: সংগৃহীত।
পাহাড় না সমুদ্র? বেড়াতে যাওয়ার কথা উঠলে, সাধারণত এই দু’টি পছন্দ নিয়েই প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু এর বাইরেও দেখার মতো আছে অনেক কিছুই। জঙ্গল, মরুভূমি, গুহা, নদী, হ্রদ।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রয়েছে সুবিশাল হ্রদ, যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে জনপদ, পর্য়টন কেন্দ্র। বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্রের দিক থেকে প্রতিটি হ্রদ বা উপহ্রদই আলাদা। কোনওটির শোভা বাড়িয়েছে অসংখ্য নারকেল গাছ। আবার কোনও হ্রদের সৌন্দর্য তার বিশালত্ব ও পাশে থাকা পাহাড়সারিতে। কোনও হ্রদ আবার ভাসমান দ্বীপের জন্য স্বতন্ত্র। হ্রদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এমন তিনটি ভ্রমণকেন্দ্র কী ভাবে ঘুরবেন, হদিস রইল তার।
লোকটাক হ্রদ, মণিপুর
একটা হ্রদের উপর আস্ত একটা জাতীয় উদ্যান! উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরের লোকটাক হ্রদের বৈশিষ্ট্য এটাই। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, যেন অসংখ্য সবুজ বৃত্ত তাতে তৈরি হয়েছে। ভাসমান এই বৃত্তগুলিকেই বলা হয় ফুমডিস। এটি, গাছপালা, মাটি এবং জৈব পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত এক রকমের ভাসমান গোলাকৃতি অংশবিশেষ। দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন রকমের জৈব পদার্থের পচনের ফলে, সেই স্থানের মাটি এবং গাছপালার কিছু অংশ জমাটবদ্ধ হয়ে হ্রদের বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের গোলাকৃতি অংশ তৈরি হয়। এগুলি এতটাই শক্তপোক্ত যে, তার উপর দিয়েও কিন্তু দিব্যি হাঁটাচলা করা যায়।
বিষ্ণুপুর জেলার মৈরাংয়ে অবস্থিত লোকটাক। মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩৯ কিলোমিটার। হ্রদটি প্রায় ২৮৬ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। পাহাড় ঘেরা বিশাল হ্রদে দিনভর চলে পাখিদের আনাগোনা। থাকার জন্য হ্রদের উপরেই রয়েছে ভাসমান হোম স্টে। স্কুলবাড়ি থেকে আস্ত একটা জাতীয় উদ্যান— সবই হ্রদের উপর ভাসমান। জলের উপরে হোম স্টে-তে বসেই দেখা যায় সারা দিনে লোকটাকের রং বদল, সকাল-বিকেলের সৌন্দর্য।
লোকটাক হ্রদের উপর হোম-স্টে। ছবি: সংগৃহীত।
লোকটাকেই রয়েছে কেইবুল লামজো জাতীয় উদ্যান, বিশ্বের একমাত্র ভাসমান জাতীয় উদ্যান। এখানেই বাস সাঙ্গাই হরিণ বা নাচুনে হরিণের। এক এক মরসুমে এই হ্রদের রূপ এক এক রকম। লোকটাকে যখন পদ্ম ফোটে, দূর থেকে দেখলে মনে হয়, হ্রদ গোলাপি হয়ে গিয়েছে।
ব্যস্ত জীবন থেকে কয়েকটি দিন ছুটি পেলে, ঘুরে যেতে পারেন এই হ্রদ থেকে। বিশাল জলরাশির বুকে ভেসে বেড়িয়ে, পাখির আনাগোনা, আকাশে রঙের খেলা দেখে মন ভরে যাবে।
কী ভাবে আসবেন
বিমানে ইম্ফল এসে গাড়িতে লোকটাক পৌঁছনো যাবে।
গুয়াহাটি থেকে সড়ক পথেও ইম্ফলে আসতে পারেন।
ভেম্বনাদ হ্রদ, কেরল
দক্ষিণের রাজ্যে কেরলের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ ‘ব্যাক ওয়াটার’। বিশাল জলপথের দু’পাশে কোথাও নারকেল গাছের সারি, কোথাও আবার সবুজ ধান ক্ষেত। এক একটি দ্বীপে এক একটি গ্রাম। ইতালির ভেনিস শহরের সঙ্গে দৃশ্যপটের সাদৃশ্য থাকায় কেরলের ব্যাক ওয়াটারকে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ বলেন, অনেকে।
কেরলের ব্যাকওয়াটারে হাউজ বোট। ছবি: সংগৃহীত।
এই ব্যাকওয়াটারের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বিশাল ভেম্বনাদ হ্রদ। কেরলের তিন জেলা— কোট্টায়ম, আলাপ্পুঝা, কোচির উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে। কেরলের বিখ্যাত ব্যাক ওয়াটার আসলে এক সুবিশাল জলপথ, যেখানে জুড়ে রয়েছে অসংখ্যা হ্রদ, নদী, খাঁড়ি। তারই মধ্যে একটি ভেম্বনাদ।
ব্যাকওয়াটারে ভেসে বেড়ানোর জন্য রয়েছে নানা ধরনের নৌকো। দোতলা নৌকোর উপরতলায় বসে পর্যটকরা বিশাল হ্রদের অনিন্দ্যসুন্দর সৌন্দর্য উপভোগ করেন। তবে এর অন্যতম আকর্ষণ হাউসবোট। বিলাসবহুল এই নৌকোয় চড়ে গোটা দিন বিশাল জলপথের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। চেখে দেখা যায় স্থানীয় খাবারও।
কী ভাবে যাবেন
কোচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মোটামুটি ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে আলেপ্পি শহর। এখান থেকেই ব্যাকওয়াটারের বুকে ভেসে পড়া যায়। এর্নাকুলাম থেকে সড়কপথেও আলেপ্পি পৌঁছনো যায়। আলেপ্পিতে রেলস্টেশনও আছে।
চিল্কা, ওড়িশা
পুরী, খুরদা ও গঞ্জাম এই তিন জেলা জুড়ে বিস্তৃত চিল্কা হ্রদ। এটি ঈষৎ নোনা জলের উপহ্রদ। তিন জেলার পর্যটন মানচিত্র জুড়ে রয়েছে চিল্কা। কোথাও কোথাও এই জলরাশিকে ঘিরে রয়েছে পাহাড়। চিল্কার বুকে ভেসে পড়লে কোথাও অথৈ জলরাশি দেখে সমুদ্র বলে ভ্রম হতে পারে।
ওড়িশার চিল্কা । ভ্রমণের জন্য আদর্শ। ছবি: সংগৃহীত।
পুরী থেকেও যেমন চিল্কা ঘুরে আসা যায়, ঠিক তেমনই বিশাল জলরাশির বুকে নৌবিহার করা যায় রম্ভা ও বরকুল থেকেও। কোথাও দেখা যায় ডলফিন, কোথাও আবার ঘুর নেওয়া যায় ছোট ছোট দ্বীপে। শীতের চিল্কার অন্যতম আকর্ষণ পরিযায়ী পাখি। পুরী থেকে চিল্কা ভ্রমণ হয় সাধারণত সাতপাড়া বলে একটি জায়গা থেকে। সেখান থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় রাজহংস দ্বীপ।
গঞ্জাম জেলায় অবস্থিত রম্ভাও চিল্কা ভ্রমণের জন্য আদর্শ। এখান থেকে মোটর বোটে দেখে নেওয়া যায় ব্রেকফাস্ট আইল্যান্ড, ঘণ্টাশিলা পাহাড়, বার্ডস আইল্যান্ড। চিল্কাকে ঘুর রয়েছে সবুজ পাহাড়। বর্ষায় সেই রূপ অনন্যা। তবে শীত থেকে বসন্ত চিল্কা ঘোরার দারুণ সময়।
বরকুল থেকেও ঘুরে নেওয়া যায় চিল্কা। এখান থেকে যাওয়া কালীযায়ী মন্দির। চিল্কার বুকে ছোট্ট দ্বীপে এই মন্দির। জলপথে এই মন্দিরে যাওয়ার অভিজ্ঞতাই দারুণ। নৌকো করে ভ্রমণের সময় আপনার সঙ্গী হতে পারে অসংখ্য পাখি।
কী ভাবে যাবেন
পুরী থেকে গাড়িতে সাতপাড়া গিয়ে চিল্কা ঘোরা যায়। বালুগাঁও বা ব্রহ্মপুর থেকে রম্ভা বা বরকুল গিয়েও বিশাল এই উপহ্রদ ঘুরে নেওয়া যায়।