midnapore

যে দিকে চোখ যায়...

শুধুই ফুলের বাহার। পূর্ব মেদিনীপুরের এমনই ফুলের গ্রামে একদিন ঈপ্সিতা বসু

Advertisement

 ঈপ্সিতা বসু

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৪৩
Share:

বিস্তৃত: জমির পর জমিতে গাঁদার বাহার

পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষীরাই-এর ফুল বাগিচার নামটির সঙ্গে পরিচয় বছরখানেক আগে। গুটিকয়েক পর্যটক আসতেন তখন। কিন্তু গত বছরের শেষ থেকে সপ্তাহান্তে বা ছুটির দিনগুলোয় বেশ ভিড় হচ্ছে। ২৬ জানুয়ারির ছুটির মেজাজে সেই পথে আমরাও। দ্বিতীয় হুগলি সেতু পেরিয়ে গাড়িতে ঘণ্টা দুয়েকের পথ। খড়্গপুরগামী পথে পাঁশকুড়া থেকে বাঁ দিকে মিনিট কুড়ি এগোলেই এক আশ্চর্য জগৎ। যতদূর চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। জমির পর জমিতে নানা রঙের গাঁদা তৈরি করেছে জ়িগজ়্যাগ প্যাটার্ন।

Advertisement

প্রথমে গেলাম দোকান্ডা গ্রামের ফুলের বাগানে। কাঁসাই ব্রিজের নীচে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা হল। এ বার হাঁটা পথ। ব্রিজের উপরে হাওড়া মেদিনীপুর-খড়্গপুর রেললাইন। ট্রেনে যেতে চাইলে, ক্ষীরাই স্টেশনে নেমে, হেঁটেও পৌঁছে যাওয়া যায় ফুলের সাম্রাজ্যে।

পর্যটককে দোকান্ডা স্বাগত জানায় সদ্য তোলা ফুলের মালা, টায়রা ও বেল্ট দিয়ে। খুব কম দামেই পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে তা কিনছে ছোট-বড় সকলেই। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে-করতে জমির আল বরাবর এগিয়ে চললাম। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি গাঁদা, রং-বেরঙের অ্যাস্টর, ক্যালেন্ডুলা ফুলের রঙে সেজে ওঠে মাইলের পর মাইল। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে শীর্ণকায় কাঁসাই। বর্ষায় এই নদীই দামাল হয়ে ওঠে। বর্ষাকাল শেষ হলে শুরু হয় চাষ। দুর্গাপুজোর কিছুটা আগে থেকে ছড়ানো হয় বীজ। গাছগুলোতে কুঁড়ি ধরে নভেম্বরের শেষ থেকে। মনোরম প্রকৃতি, লাল মাটির পথ, পাখির কলতান, মৌমাছির গুঞ্জন, বাহারি ফুলে প্রজাপতির আলিঙ্গন... চলল একের পর এক দৃশ্য লেন্সবন্দি করা। সঙ্গতে রয়েছে কাঁসাই ব্রিজ দিয়ে আওয়াজ তুলে চলে যাওয়া ট্রেন।

Advertisement

দোকান্ডা ছেড়ে এগোলাম শ্বেতশুভ্র এক গ্রামের দিকে, পশ্চিম কোল্লা গ্রাম। কাঁসাই ব্রিজ পেরিয়ে গ্রামের দিকে গেলে লালমাটির পথ। পথের ধারের বাড়িগুলোর উঠোনে বসে মেয়ে-বৌয়েরা ফুলের মালা গাঁথছেন। আবার ফুল বিক্রি করতে যাওয়ার তোড়জোড় করছেন কেউ। তারই অপর পাড়ে বিঘার পর বিঘা জমিতে কেউ যেন বিছিয়ে দিয়েছে বরফের চাদর। সাদা চন্দ্রমল্লিকার অনিন্দ্য সৌন্দর্য কিছুক্ষণের জন্য ছবি তোলাও ভুলিয়ে দেয়। দিগন্তবিস্তৃত সাদা চন্দ্রমল্লিকার খেত শেষে দেখা মিলল লাল-হলুদ-হালকা বেগুনি রঙা চন্দ্রমল্লিকার। তার পর করন আর কয়েকটি ডালিয়া ও গোলাপের খেত।

ফুলের শোভা দেখতে দেখতে এসে পৌঁছলাম তৃতীয় গ্রাম ভবানীপুরে। এই অঞ্চলটি মোরগ ঝুঁটি ফুল, চন্দ্রমল্লিকা, হোয়াইট মেরিগোল্ডের জন্য বিখ্যাত। ফুলের জমিতেই চাষিরা শখ করে লাগিয়েছেন বেগুন, শিম, ফুলকপি। কিনে নিলাম টাটকা আনাজ।
চার-পাঁচ ঘণ্টার সফর শেষে শরীর ক্লান্ত। স্থানীয় দোকানে মশলা চায়ে চুমুক দিতেই মেজাজ ফুরফুরে। গাড়ি ঘোরালাম কলকাতা অভিমুখে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement