Travel

উত্তরবঙ্গের পাহাড়-জঙ্গলে হোমস্টের হদিশ

পাহাড়-নদী-জঙ্গল-সমুদ্রের এক রামধনু মিশেল পশ্চিমবঙ্গ। উত্তরের হিমালয় থেকে দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর— প্রকৃতি তার ভাণ্ডার উজাড় করে দিয়েছে এখানে। অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া এই রাজ্যের নানা প্রান্তের হালহদিস কয়েকটি পর্বে। তৃতীয় পর্বে উত্তরবঙ্গের পাহাড়-জঙ্গলে হোমস্টে।পাহাড়-নদী-জঙ্গল-সমুদ্রের এক রামধনু মিশেল পশ্চিমবঙ্গ। উত্তরের হিমালয় থেকে দক্ষিণের বঙ্গোপসাগর— প্রকৃতি তার ভাণ্ডার উজাড় করে দিয়েছে এখানে। অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া এই রাজ্যের নানা প্রান্তের হালহদিস কয়েকটি পর্বে। তৃতীয় পর্বে উত্তরবঙ্গের পাহাড়-জঙ্গলে হোমস্টে।

Advertisement

শান্তনু চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ১৭:৫৩
Share:

ফুলের সাজে কুমাই।

সিটং

Advertisement

ছবির মত সাজানো এক পাহাড়ি গ্রাম। এ পাহাড়ের দু’টি ভাগ। ওয়ান, টু। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে সাজান বাক্সবাড়ি। সেই পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে এসেছে এক নিঝুম অরণ্যভূমি। মহানন্দা স্যাঞ্চুয়ারি। গ্রামে ঢুকতেই একরাশ হিমেল বাতাস স্বাগত জানাবে। বড় বড় পাথুরে বোল্ডারের ফাঁক দিয়ে বয়ে আসছে তিরতিরে এক পাহাড়ি দামাল ঝোরা। রূপসী এই ঝোরার নাম রিয়াং। আর গ্রামের নাম, সিটং। ছবির মতো সাজানো। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির আনাচ-কানাচ রঙিন ফুলের পাশাপাশি কমলালেবুর ভারে ঝুলে পড়া গাছের বাহার।

কমলার গন্ধে ম ম সিটং

Advertisement

সবুজ পাহাড়ে গাঁদা রঙা রোদ জাপটে ধরে কমলার কোমল শরীর। পাহাড়ের মাথায় মুকুটের মতো শোভা পাচ্ছে সুপ্রাচীন সুন্দর গির্জা। সিটং-এর বনে অচিন পাখিদের অবাধ আনাগোনা। লেপচা অধ্যুষিত গ্রামে থাকার জন্য গড়ে উঠেছে বেশ কিছু হোমস্টে। ওঁদের আতিথেয়তা আর অরগানিক খাবারের বাহার অনেক দিন মনে থেকে যাবে। ছোট্ট ছুটির ফাঁকে সিটং এক অসাধারণ গন্তব্য। উদার, উদাত্ত প্রকৃতির অপরূপ কোলাজের সিটং-এর সেরা উপহার সহজ সরল মানুষজনের আন্তরিক আতিথেয়তা।

ওগো নদী আপন বেগে

কী ভাবে যাবেন: এনজেপি ছেড়ে গাড়িতে মংপু থেকে মাত্র ১৪ কিমি দূরে সিটং পৌঁছন যায় গাড়িতে।

কোথায় থাকবেন: সিটং-এ থাকার বেশ কয়েকটি হোমস্টে। সিটং ইকো ওয়েলফেয়ার সোসাইটি (০৩৫৩–২৫৪০৪৯২, ৯৮৩২৬৬৭৫৭০) ভাড়া মাথাপিছু ১৫০০ টাকা। থাকাখাওয়া সমেত। খাওয়ার মধ্যে লাঞ্চ, ডিনার, ব্রেকফাস্ট ধরা আছে।

চটকপুর:

৭,৮৮৭ ফুট উচ্চতায় এক অল্পচেনা পাহাড়পুর। দার্জিলিং যাওয়ার পথে তিন মাইল মোড় থেকে বাঁ হাতি রাস্তায় ঢুকে পড়ুন। সিঞ্চল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির রোমাঞ্চকর গহন অরণ্য পেরিয়ে চোখে পড়বে সবুজ মলাটে মোড়া কোলাহলমুক্ত পাহাড়ি জনপদ। কখনও মেঘ, কখনও রোদ্দুর, এরই নাম চটকপুর। ছবির মতো সাজানো সুন্দর। পাইন, ধুপি আর রডোডেনড্রনের নিবিড় সমাবেশ। সবুজ শ্যাওলা ধরা পাইনের বন থেকে ভেসে আসে, ঝিঁঝিঁর সিম্ফনি।

ধুপি, ঝাউয়ের সবুজে ঘেরা চটকপুর

সেই অরণ্যঘন আঁকাবাঁকা পথের শেষে গেলেই দেখা মিলবে পবিত্র পোখরির। নিঝুম অরণ্যর মাঝে পবিত্র পোখরি ঘিরে রয়েছে নানা মিথ। ঘন নীল আকাশের নীচে, উপুড় হওয়া আকাশপানে হিমালয়ের পরিপাটি সাজানো গোছানো সুখী সংসার। পাহাড়ের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোট ছোট বাক্সবাড়ি। মেরেকেটে ২০টি পরিবারের বাস। পাহাড়ের ধাপে প্রতিটি বাড়ির ক্ষেতে অরগানিক ফসলের সমাহার। প্রায় প্রতিটি পরিবার তাদের বাড়িগুলিকে হোম-স্টে হিসেবে গড়ে তুলেছে। খুব ভোরে, শরীরকে শীতবস্ত্রে মুড়ে চলে আসুন, চটকপুর ভিউপয়েন্টে। পাহাড়ের চুড়োয় সুন্দর নজরমিনার।

নৈস্বর্গিক...

ধীরে ধীরে চোখের সামনে দেখে নিন কাঞ্চনজঙ্ঘার রংবদলের বাহার। তীব্র হিমেল হাওয়ার পরশে, দুর্দান্ত প্রাকৃতিক শোভায় শুধুই বুঁদ হয়ে থাকা। সঙ্গে নানা পাখির কলতান, ওড়াউড়ি। নামজাদা, দুর্লভ হিমালয়ের অচিন পাখিদের অনন্য আবাস। দুপুর গড়িয়ে বিকেলটা আরও অসাধারণ। আকাশ পরিষ্কার থাকলে, সারা দিন কাঞ্চনজঙ্ঘার ফ্যামিলি অ্যালবামের ছবির দেখা মেলে ঘরের জানালা থেকে। যার অসামান্য রুপলাবণ্য আজীবন সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে। শুধু সূর্যাস্ত কেন? সূর্যোদয়ের অপরূপ শোভায় চটকপুর যেন অচিনপুর।

কী ভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি। গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন চটকপুর। দার্জিলিং আসার পথে তিন মাইল মোড় থেকে সিঞ্চুলা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির মধ্য দিয়ে প্রায় ১২ কিমি। মোট দূরত্ব ৯০ কিমি।

কোথায় থাকবেন: চটকপুরে থাকার জন্য রয়েছে ‘চটকপুর ইকো হাট’। ভাড়া দু’জনের ৩,৫০০। তিন জনের ৪,৫০০ টাকা। এর মধ্যে গাইড, কার এন্ট্রি ফি, ইকো ডেভেলপমেন্ট ফি, থাকাখাওয়া ধরা আছে। যোগাযোগ ৯৪৩৪০৭২৫৫২/+91-353-2540-809। ‘চটকপুর ইকো হোমস্টে’ ১,৫০০ টাকা জনপ্রতি। এর মধ্যে গাইড, কার এন্ট্রি ফি, ইকো ডেভেলপমেন্ট ফি, থাকাখাওয়া ধরা আছে।

কুমাই:

দু’টি পাতা আর একটি কুঁড়ির দেশে। আদিগন্ত আকাশের সীমানা জুড়ে হিমেল হিমালয়ের বিস্তার। তারই বুকে মখমলি সবুজ কার্পেট বিছোন চা বাগান। তামাম চা প্রেমীর কাছে এই অল্পচেনা, নিসর্গের নাম কুমাই। যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই মনমাতানো সবুজের গালিচা বিছানো। সেই ঢেউ খেলানো চা-বাগানের মাঝে খানিক তফাতে ছায়াপ্রদানকারী বৃক্ষরাজদের বিস্তার। দূরে পাহাড়ের সীমারেখা জুড়ে হিমালয়ের আভাস। হিমেল হাওয়ার স্পর্শ, গাঢ় সবুজের মলাটমোড়া কুমাই চা বাগান থেকে চলে আসুন আপার কুমাইতে।

সবুজে, নীলে মিলেমিশে একাকার...

এখানে প্রকৃতি আরও সুন্দর আরও ছবি আঁকা। সহজসরল গ্রামের মাঝে গোর্খাসহ নানা আদিবাসীর বাস। হোমস্টের অসাধারণ আতিথেয়তা। বারান্দা থেকে একসঙ্গে, একফ্রেমে পাখির চোখে আরণ্যক, আসবুজ ডুয়ার্সের অনবদ্য রূপ দেখে নিন। রূপালী রেখার মতো মূর্তি নদীকে অসাধারণ লাগে। কুমানি থেকে হেলি ভিউ পয়েন্ট, কুমাই পার্ক, লালি গুড়াস পয়েন্ট, গ্রিন ভ্যালি, ২০০ বছরের প্রাচীন গুম্ফা এবং দূরে নীলচে ভুটানের নানা ভ্যালি ভিউ দেখে আবিষ্কার করুন এক অনন্য ডুয়ারসকে।

একটা কুঁড়ি, দু’টি পাতার সন্ধানে

কী ভাবে যাবেন: শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে নিউ মাল জংশন থেকে গাড়িতে চালসা থেকে কুমানি মোড় হয়ে মাত্র ২৫ কিমি দূরত্বে কুমাই-এর চা বাগান।

কোথায় থাকবেন: এখানে থাকার জন্য আপার কুমাইতে রয়েছে কুমাই গোর্খা হোমস্টে (৯৪৭৫৯১১১২৫) থাকাখাওয়া নিয়ে জনপ্রতি ১২০০ টাকা। রয়েছে সাহিল হোমস্টে (৮৩৭২৯৫৪৪০৪/ ৮১৪৫৮৫০৯৭৯) থাকা নিয়ে জনপ্রতি ভাড়া ১,০০০ টাকা। গাইড নিয়ে নানা স্পটে ঘোরার চার্জ আলাদা।

লিংসে:

কালিম্পং সাব ডিভিশনের এক সুন্দর গ্রাম। ৪,৮০০ ফুট উচ্চতায় অল্পচেনা অনাঘ্রাত। প্রকৃতির অনুপম সৌন্দর্যে ভরা। মেঘ-পাহাড়-রোদ্দুর-কুয়াশা লুকোচুরি, মিষ্টি গন্ধমাখা পাহাড়ের ধাপে ধাপে বড় এলাচের চাষ,অর্গানিক ফসলের বাহার, দূরে নীলাভ পাহাড়ের স্তর। অচিন পাখিদের কলকাকলিতে ভরপুর এক ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। রাই, সুব্বা, নেপালি জনজাতির বসবাস। তাদের আন্তরিক আতিথেয়তার উষ্ণতা নিয়েই পাহাড়ি গ্রাম লিংসে। রংবেরঙের প্রজাপতি, নানা রঙিন ফুল আর অর্কিডের বাহার।

লিংসে থেকে প্রায় ২ কিমি দূরে পিতমচেন। পাহাড়ের ধাপে নকশা আঁকা চাষজমিনে অর্গানিক ফসলের বাহার। দূরে নেওড়াভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের আসবুজ জঙ্গলমহল। মাঝে মাঝে ছোট ছোট গ্রাম। ঘননীল আকাশের মাঝে কাঞ্চনজঙ্ঘার বিস্তার। এই নিয়েই নিরালা-নির্জন পিতমচেনের সংসার।

পাহাড়ি বাঁকে উঁকি মারছে হোমস্টে

লিংসে থেকে হেঁটে/গাড়িতে পিতমচেন হয়ে চলে আসুন, মুলখাড়কা লেকে। দূরত্ব ৫ কিমি। পাহাড়চূড়োয় সবুজ ঘাসের গালিচামোড়া ছোট্ট উপত্যকা। হিমেল বাতাসের আবহে দুর্লভ পাখিদের ওড়াউড়ি মন ভরিয়ে দেবে। শ্যাওলাধরা প্রাচীন পাইনের সারির মাঝে ছোট্ট মন্দির। আকাশের সীমান্তে মাথা উঁচু করে কাঞ্চনজঙ্ঘার রোদস্নানের অপরূপ বাহার। তার শরীরে নানান রঙের আসা-যাওয়ায় শুধুই মুগ্ধতা। লাল-হলুদ-সবুজ পবিত্র পতাকার বাহার, তারই পদতলে পাইনের ছায়ামাখা এক পবিত্র সরোবর। মুলখাড়কা। ডিম্বাকৃতি পবিত্র সরোবর। চারদিকে সবুজ পাইনের বন, রোদ ঝলমলে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর পবিত্র রংবেরং পতাকার প্রতিচ্ছবি লেকের জলে এসে পড়ে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে দু’চোখ ভরে দেখে নিন কাঞ্চনজঙ্ঘাকে। পবিত্র লেকের জলে তার প্রতিবিম্ব এসে পড়ে। সমস্ত নীরবতা ভেঙে দিয়ে দমকা হিমেল বাতাস। সঙ্গে ঝিঁ ঝিঁ-র একটানা সিম্ফনি। এক অনবদ্য অল্পচেনা গন্তব্য মূলখাড়কা।

মূলখাড়কা লেক

এক যাত্রায় মূলখাড়কা-পেতমচেন-লিংসে-র পাহাড়-গ্রাম ঠিক যেন পিকচার পোস্টকার্ড!

কী ভাবে যাবেন: শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে এনজেপি থেকে গাড়িতে কালিম্পং প্রায় ৭০ কিমি। এখান থেকে আলগাড়া-রেশি-রেনক-আরিতার হয়ে লিংসের দূরত্ব প্রায় ৫৭ কিমি। আরিতার থেকে লিংসের দূরত্ব চার কিমি। লিংসে থেকে পিতমচেন ২ কিমি। পিতমচেন থেকে মূলখাড়কা ৩ কিমি।

কোথায় থাকবেন: লিংসে-তে থাকার ঠিকানা লিংসে হোমস্টে (৯৪৩৪০৭২৫৫২), ভাড়া ১৫০০ টাকা। খাওয়া ৪৫০ টাকা মাথাপিছু।

তুকদা:

ব্রিটিশদের ক্যান্টনমেন্ট আর চা বাগান। নানান কুঠি, বাংলো, চা-বাগান— এই নিয়েই দার্জিলিং জেলার রংলিয়ট রংলি অঞ্চলের এক অসাধারণ পাহাড়ি ঠিকানা। একসময় ব্রিটিশরা এখানে প্রায় ১২টি বাংলো গড়ে তুলেছিলেন। তাকদা আর তুকদা। দুটি যমজ পাহাড়ের ছবি দুই রকমের। প্রথমে চলে আসুন তুকদা ক্যান্টনমেন্টের নানা হেরিটেজ বাংলোয়। মধ্যে সাঁই হ্রদয়ম এক অনবদ্য হেরিটেজ ঠিকানা।

তুকদার হোমস্টে

পাহাড়ের কোলে বসানো এক হেরিটেজ বাংলো। সামনের প্রশস্ত লনে রঙিন ফুলের বাহার, সঙ্গে সামনের বিস্তীর্ণ আকাশের ক্যানভাসে আঁকা পর্বতমালার ঢেউ। আর নানা অচিন পাখির কুজনে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যাবে। এখান থেকে দেখে নিন অর্কিড সেন্টার, গ্রিফিথ আর গ্রিনশিল্ড হাইস্কুল।

কোথায় থাকবেন: তুকদা ক্যান্টনমেন্টে থাকার জন্য রয়েছে সাঁই হ্রদয়ম হোমস্টে (৯৮৩২৬৬৭৫৭০)।

২৮ মাইল:

আলিপুরদুয়ার থেকে রাজাভাতখাওয়া হয়ে বক্সা টাইগার রিজার্ভ ফরেস্টের অন্দরমহলে মিশকালো পিচরাস্তা পেরিয়ে জয়ন্তীর মোড় পেরিয়ে আলিপুরদুয়ার থেকে এক, দুই করে পাক্কা ২৮ মাইল। উপচে পড়া গহন জঙ্গলের মাঝে এক অচিনপুর। ২৮ মাইল। যারএক দিকে বালানদী আর অন্য দিকে জয়ন্তীর হাতছানি। আদিগন্ত নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মেঘ ভেসে আসে দূরের নীলচে ভুটান পাহাড় থেকে। তারই নীচে হলদে সর্ষের ক্ষেতের বাহার। প্রতিটি চত্বরে বিশাল শালখুঁটির নজরমিনার। কারণ একটাই, মাঝে মাঝে হাতি এসে হানা দেয়। সোজা রাস্তা চলে গিয়েছে সান্তালেবাড়ি। প্রতি মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। গোটা গ্রাম জুড়ে শুধুই অর্গানিক ফসলের বাহার। গ্রামের পেছনে ঘন জঙ্গলের দিকে হেঁটে বেরালে পাখি , হরিণের দেখা মিলতে পারে। শীতে হলুদ সর্ষে আর দূরে নীল আকাশের কোলে নীলচে ভুটান পাহাড়ের হাতছানি অসাধারণ লাগে।

পাহাড়ের কোলে ২৮ মাইলের হোম-স্টে

আর এখান থেকে চার কিমি ট্রেক করতে হয়। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ,অরণ্যের বৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণে ভরপুর এ পথে চলে আসুন কালের অতলে হারিয়ে যাওয়া বক্সা দুর্গে। একসময় ভুটান রাজাদের তৈরি এই দুর্গ দখল করে নেন ব্রিটিশরা। অত্যন্ত দুর্গম, শ্বাপদসঙ্কুল এই দুর্গে বন্দি রাখা হত বাংলার বিপ্লবীদের।

২৮ মাইল আসতে জয়ন্তীর মোড় থেকে ডানহাতি রাস্তার দু’পাশে উপচে পড়া গহন জঙ্গল পথের বুক চিরেছে মিশকালো পিচরাস্তা। সোজা চলে গিয়েছে জয়ন্তীর দিকে। মাঝে পড়বে বালা নদী। সাঁকো পেরিয়ে খানিক দূরে চেকপোস্ট। খানিক এগোলেই বিস্তীর্ণ জয়ন্তী নদীর চড়া। মাঝে তিরতিরে বহতা নদী। দূরে ঢেউখেলানো নীলচে ভুটান পাহাড়। ১৯৯৩-এর ভয়াবহ বন্যায় এই এলাকার ভোলবদল হয়। নদী পেরিয়ে চলে আসতে পারেন ৭ কিমি দূরের চুনাপাথরের প্রাকৃতিক গুহা ছোটা মহাকাল ও বড়া মহাকালে। গোটা যাত্রাপথটা বড়ই রোমাঞ্চকর। চেকপোস্টের বাঁ হাতি রাস্তা চলে গিয়েছে পোখরির দিকে। গাইড সঙ্গে নিয়ে চলে আসতে পারেন ৩ কিমি দূরের পোখরি পাহাড়ে। এপথে বন্যজন্তু দেখার সম্ভাবনা থাকে। পবিত্র পোখরি যাওয়ার হাঁটাপথ বেশ রোমাঞ্চকর।

কী ভাবে যাবেন: শিয়ালদহ থেকে ১৩১৪৯ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে আলিপুরদুয়ার নেমে ট্রেকার বা গাড়িতে চলে আসা যায়।

কোথায় থাকবেন: এখানে থাকার ঠিকানা: জঙ্গল ইন। যোগাযোগ দুর্গা অধিকারী ০৩৫৬৪-২০৩১৯৬/ বসন অধিকারী ৮৩৪৮৯১৫৭৪২। ভাড়া ১৩০০ টাকা। খাওয়া ৫০০ টাকা জনপ্রতি। রয়েছে শঙ্খচিল। যোগাযোগ রতন অধিকারী ৯৫৯৩৩৫২৮১০। ভাড়া ১৩০০ টাকা। খাওয়া ৫০০ টাকা জনপ্রতি।

শীতের নিঝুম জয়ন্তী

রিকিসুম:

রিকিসুম পাহাড়ের খাঁজে একফালি গ্রাম। হাতে গোনা বাক্সবাড়ি। এ দিক ও দিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অযত্নে বেড়ে ওঠা রঙিন ফুলের মিছিল। পাহাড়ের মাথায় সারি বেঁধেছে পাইন, ধুপির আসবুজ বনানী। মাঝে পাহাড়ের বুকচেরা রাস্তা। তার ওপারে খাদ। সেই খাদের রেলিং বলতে বিস্তীর্ণ আকাশের ক্যানভাসে হিমালয়ের শৃঙ্গরাজদের বিস্তার। এক অসাধারণ জাদুমাখা নিঝুমপুর। রিকিসুম। ৬৩০০ ফুট উচ্চতায় এই নিঝুমপুরে শব্দ বলতে হিমেল বাতাসের আনাগোনা। মেঘ এসে মাঝে মাঝেই জাপটে ধরে। নেপালি, রাই সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। রিকিসুমের আসল রূপ দেখতে হলে সূর্য ওঠার আগে কাকভোরে চলে আসুন ক্যাপ্টেন রেনির বাংলোয়। প্রায় ২ কিমি পাইন আর ধুপির সুদীর্ঘ জংলাপথে পাখিদের গান শুনতে শুনতে চলে আসুন সেই ভগ্নপ্রায় বাংলোয়। এখান থেকে একসঙ্গে এক ফ্রেমে ডান দিক থেকে ভুটান, তিব্বত, সিকিম, দার্জিলিং হিমালয় এবং নেপালের নামী অনামী শৃঙ্গদের বিস্তার। ভৌগলিক এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ রিকিসুম, তা এখানে না এলে বোঝা যায় না। এখান থেকে সূর্যোদয় দেখার অসাধারণ দৃশ্য চিরকাল মনে থেকে যায়।

কী ভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে বিমানে বা ট্রেনে এনজেপি থেকে গাড়িতে কালিম্পং-আলগাড়া হয়ে রিকিসুম আসতে হয়। দূরত্ব ৮৮ কিমি।

কোথায় থাকবেন: এখানে থাকার জন্য স্বর্ণশিখর হোমস্টে (৯৯৩২৩১৭২৯৯), ভাড়া ২ জনের জন্য ৩০০০ টাকা। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার সমেত।

(লেখক পরিচিতি: ক্লাস নাইনে পড়াকালীন পাড়াতুতো মামার সঙ্গে মাত্র ৭০০ টাকা পকেটে নিয়ে সান্দাকফু ট্রেক। সুযোগ পেলেই প্রিয় পাহাড়ে পালিয়ে যাওয়া। বছরে বার কয়েক উত্তরবঙ্গের অল্পচেনা ডেস্টিনেশনে যাওয়া চাই। কুয়াশামাখা খরস্রোতা নদী কিংবা চলমান জীবনছবিতে ক্লিক, ক্লিক। চলতি পথে মেঠো গানের সুর শুনলেই ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়া। লাদাখে গর্তে সেঁধিয়ে যাওয়া মারমটের ছবি তুলতে ভিজে মাটিতে সটান শুয়ে অপেক্ষায় থাকা— এই নিয়েই ক্যামেরা আর কলম সঙ্গী করে ২২টা বছর। প্রকৃতির টানে ছুটে বেড়ানোটা থামেনি।)

(ছবি: লেখক)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement