মান্ডুর জাহাজ মহল।
এই সফরসূচি ধরে বিমানে যাতায়াত করতে চাইলে, ইনদওর হয়েই যাত্রা শুরু ও শেষ করতে হবে। তবে ট্রেনের ঝক্কি সামলাতে পারলে, সরাসরি উজ্জয়ন (উজ্জয়িনী) দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। কিংবা হাওড়া-মুম্বই ভায়া ইলাহাবাদ ট্রেনে চেপে খান্ডোয়া নেমে হনুবন্তিয়া দিয়েও সফর শুরু করা যায়। অন্যথায়, উজ্জয়ন দিয়ে শুরু করে শেষে হনুবন্তিয়া ঘুরে খান্ডোয়া হয়ে বাড়ি। গরমকাল বাদ দিয়ে যে কোনও সময় যাওয়া যায় এই সফরে। তবে শীতকাল সব সময় বেড়ানোর জন্য ভাল। অবশ্য বর্ষায় মান্ডুর সৌন্দর্য দেখতেও যাওয়া যায়।
আমরা উজ্জয়ন দিয়েই সফর শুরু করছি।
শিপ্রা নদীর তীরে উজ্জয়ন, প্রাচীনকালে নাম ছিল অবন্তিকা। ১২ বছর অন্তর শিপ্রা নদীর রামঘাটে অনুষ্ঠিত হয় কুম্ভমেলা। শহর ও তার চারপাশ জুড়ে অনেক মন্দির। জয়পুরের মহারাজা দ্বিতীয় জয় সিংহের তৈরি পাঁচটি যন্তরমন্তরের একটি উজ্জয়নে অবস্থিত।
আরও পড়ুন: কানহা-অমরকণ্টক-বান্ধবগড়-জবলপুর-পেঞ্চ
দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম মন্দির শিপ্রা নদীর পাড় ঘেঁসে। বৰ্তমান পাঁচ তলা মন্দিরটি ১৮ শতকে তৈরি সিন্ধিয়া রাজবংশের হাতে। প্রাচীন মন্দিরটি ধ্বংস হয় ১২৩৫ সালে ইলতুৎমিসের হাতে। তবে মনে করা হয়, ২৪ খাম্বা দরওয়াজা ১১ শতকের। মন্দিরের বাইরে পুজোর উপাচার, খাবারের দোকান ইত্যাদি আছে। ঊষালগ্নে অনুষ্ঠিত ভস্ম আরতি। সকাল-সন্ধ্যে আরতি দেখার জন্য লম্বা লাইন পড়ে মন্দিরে। মাটির নীচে গর্ভগৃহে স্বয়ম্ভু শিব, মহাকালেশ্বর। উজ্জয়নের অন্যান্য মন্দিরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হরসিদ্ধি মাতার মন্দির, বড় গণেশ মন্দির, চিন্তামণি গণেশ মন্দির, গোপাল মন্দির, গড়কালিকা মন্দির (কবি কালীদাসের আরাধ্য দেবী), মঙ্গলনাথ মন্দির। শহর ছাড়িয়ে সন্দীপন আশ্রম। বলা হয়, সন্দীপন মুনির এই আশ্রমে থেকেই বিদ্যাচর্চা করতেন কৃষ্ণ-বলরাম ও কৃষ্ণ-সখা সুদামা। প্রাচীন ভৈরবগড় বা এখনকার ভেরুগড়ে কালভৈরব মন্দির উজ্জয়নের অন্যতম আকর্ষণ। এই মন্দির দেখার সময় ঘুরে নিতে পারেন নিকটবর্তী বাটিক শিল্পীদের গ্রাম।
নিকটতম বিমানবন্দর ইনদওর, উজ্জয়ন থেকে ৫৫ কিমি দূরে। কলকাতা-সহ নানা শহর থেকে ট্রেন আসছে উজ্জয়ন। বাস যোগাযোগ আছে ১৮৩ কিমি দূরে রাজ্যের রাজধানী ভোপালের সঙ্গে। থাকার জন্য রয়েছে শহরের কেন্দ্রস্থলে মধ্যপ্রদেশ রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের (এমপিএসটিডিসি) শিপ্রা রেসিডেন্সি ও যাত্রীনিবাস হোটেল অবন্তিকা, আর মাধব ক্লাবের কাছে বিজনেস হোটেল উজ্জয়িনী। শহর জুড়ে রয়েছে নানা বেসরকারি হোটেল।
রয়েছে নানা অ্যা়ভেঞ্চারের ব্যবস্থা।
উজ্জয়ন থেকে ইনদওর। মধ্যপ্রদেশের অন্যতম বৃহৎ শহর এবং জমজমাট বাণিজ্যিক কেন্দ্র ইনদওর। ট্রাফিক জ্যামও হয় খুব।
মরাঠা পেশোয়া রাজপরিবারকে সাহায্য করার সুবাদে ইনদওর আসে হোলকার রাজ মলহার রাওয়ের হাতে। শ্বশুরমশাই মলহার রাও হোলকার পুত্রবধূ অহল্যাবাইকে যে সতী হওয়া থেকে আটকেছিলেন তাই নয়, তাঁর হাতেই তুলে দিয়েছিলেন রাজ্য শাসনের ভার। যদিও তাঁর রাজধানী ছিল মহেশ্বরম কিন্তু ইনদওরকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে গড়ে তোলেন মহিয়সী রানি অহল্যাবাঈ। পরবর্তীকালে রাজধানী উঠে আসে মহেশ্বরম থেকে ইনদওরে। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় মধ্য ভারতের রাজধানী ছিল ইনদওর।
শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা খাজুরি বাজার যা গড়ে উঠেছে রাজ-ওয়াড়া অর্থাৎ হোলকারদের পুরনো প্রাসাদ ঘিরে। মরাঠা, মোগল ও ফরাসি স্থাপত্যের মিলন ঘটেছে ১৭৪৭ সালে তৈরি এই প্রাসাদে। সাত তলা প্রাসাদের নীচের তিন তলা পাথরের তৈরি, বাকিটা কাঠ। বেশ কয়েক বার বিধ্বংসী আগুন গ্রাস করেছে এই প্রাসাদকে, সর্বশেষ ১৯৮৪ সালে আগুনে ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাসাদের কিছুটা অবশ্য সারিয়ে তোলা হয়েছে। কাছেই আছে গোপাল মন্দির এবং আর্ট গ্যালারি। আর আছে খান নদীর ধারে হোলকার রাজাদের সমাধি বা ছত্তিসবাগ। হোলকার বংশের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লালবাগ প্যালেস। তিন দশকের বেশি সময় লাগে এই প্রাসাদ তৈরি হতে। ইংল্যান্ডের বাকিংহাম প্রাসাদের অনুকরণে তৈরি প্রবেশ তোরণটি। প্রাসাদের অন্দরমহলে ইউরোপের বিভিন্ন স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন। আছে তৎকালীন বৈভবের নমুনা, যেমন ইতালিয়ান মার্বেলের পিলার, ঝাড়বাতি, গ্রিক মুরাল ইত্যাদি। হোলকারদের আর এক মহলে বসেছে সেন্ট্রাল মিউজিয়াম। সোমবার বাদে প্রতি দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা অব্দি খোলা। এই মিউজিয়ামে রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। শহরের অন্যান্য আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে কাচমন্দির, ইন্দো-গথিক শৈলীতে ১৯০২ সালে তৈরি কিং এডওয়ার্ড হল, এখন যার নাম গাঁধী হল।
ইনদওর-এর কাপড়জামার দোকানের প্রশস্তি তো আছেই, বিশেষ করে ট্রাডিশনাল পোশাকের। এখানকার স্বর্ণব্যবসারও বেশ নাম। সোনা-রুপোর দোকানের জন্যে বিখ্যাত সারাফা বাজার। গয়না কিনুন আর নাই কিনুন, সন্ধ্যেবেলা অবশ্যই হাজির হবেন এখানে। দোকান বন্ধ হলেই রাস্তার ধরে স্টল সাজাতে শুরু করেন দোকানিরা, চালু হয়ে যায় ‘খাও গলি’ বা ‘নাইট স্ট্রিট ফুড মার্কেট’— মোটামুটি সাড়ে ৮টা নাগাদ জমে ওঠে খাও গলি, চলে গভীর রাত অব্দি। নানা ধরনের চাট, ভুট্টার টিকিয়া, মটর কচুরি, নানা ধরনের মিষ্টি পাবেন এখানে। ইনদওরের চামড়ার তৈরি খেলনাও বিখ্যাত।
এখানে বেসরকারি হোটেল আছে নানা।
ইনদওর ঘুরে এ বার চলুন মান্ডুর পথে, প্রায় ১০০ কিমি দূরত্ব সড়কপথে।
রানি রূপমতী ও মালোয়ার রাজা বাজ বাহাদুরের প্রেমকাহিনি মিশে আছে মান্ডু-র আকাশে বাতাসে। মোগল সম্রাট জাহাঙ্গিরের অতি প্রিয় মান্ডু, বিশেষ করে বর্ষাকালে। নাম দিয়েছিলেন তিনি সাদিয়াবাদ, অর্থাৎ সিটি অফ জয়। বলা হয় যে এখানে অবস্থিত হোসাং শাহের সমাধি নাকি ভারতের প্রথম শ্বেতপাথরে তৈরি সৌধ, যা দেখে সম্রাট শাহজাহান তাজমহল বানানোর অনুপ্রেরণা পান।
মান্ডু জুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা সৌধ, প্রাসাদ, ইত্যাদি। খুঁটিয়ে মান্ডু দেখতে হলে সপ্তাহখানেক লেগেই যাবে। কিন্তু আমাদের হাতে তো এত সময় থাকে না। তবুও যদি অন্তত দু’টি দিন রাখেন মান্ডু-র জন্য তা হলে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে নিতে পারবেন। মোটামুটি তিন ভাগে বিভক্ত মান্ডু-র প্রধান আকর্ষণ হল, ভিলেজ বা সেন্ট্রাল গ্রুপ, রয়াল গ্রুপ এবং রেওয়াকুণ্ড গ্রুপ।
ভিলেজ বা সেন্ট্রাল গ্রুপের মধ্যে পড়ে মান্ডুতে প্রবেশ করার তিন ফটক— আলমগির, দিল্লি ও ভাঙ্গি দরওয়াজা, আশরাফি মহল, রামমন্দির, দামাস্কাসের গ্রেট মস্কের অনুকরণে তৈরি জামি মসজিদ ও হোসাং শাহ-র সমাধি। মান্ডুর বাজার এলাকায় অবস্থিত শেষ দু’টি সৌধের জালির কাজ নজর করার মতো।
রয়াল গ্রুপের মধ্যে পড়ে বিখ্যাত জাহাজ মহল। কাপুর তালাও আর মুঞ্জা তালাও-এর মাঝে অবস্থিত প্রায় ১২০ মিটার লম্বা এই প্রাসাদ। জলে পরিপূর্ণ তালাওয়ে যখন এর ছায়া ভাসে তখন মনে হয় যেন রাজ-তরী চলেছে। ঘুরেফিরে দেখুন প্রাসাদের অন্দরমহল। সংলগ্ন তাবেলি মহলে বসেছে মিউজিয়াম, তবে সেখানে ছবি তোলা মানা। আর আছে হিন্দোলা মহল। এমন সুন্দর তার গঠন শৈলী যে বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে এই বুঝি বাতাসের ছোঁয়ায় দুলে উঠল কোণাকুনি দেওয়াল সমেত মহল, কিন্তু ভেতরে গেলে দেখা যাবে দিব্বি সোজা দাঁড়িয়ে দেওয়াল। দেখে নিন রানি রূপমতীর মহল বা চম্পা বাওলি, নহর ঝরোকা এবং জলমহল।
রূপমতীর প্যাভিলিয়ন।
মান্ডু-র দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত রেওয়া কুণ্ড গ্রুপের মধ্যে পড়ে বাজ বাহাদুরের প্রাসাদ ও রানি রূপমতীর প্যাভিলিয়ন। রেওয়া কুণ্ডের পাড়ে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে ঘুরে দেখতে হবে। বেশ খানিক চড়াই-উৎরাই আছে। ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি বাজ বাহাদুরের প্রাসাদ। বলা হয় যে আকবরের সঙ্গে যুদ্ধ হয় সঙ্গীতজ্ঞ বাজ বাহাদুরের। পরাজিত হন তিনি। তবে যুদ্ধের পর তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরাজয়ের খবর আসার পর রানি রূপমতী আর দেরি করেননি, আগুনে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এখান থেকে চলুন রানির প্রিয় জায়গায়, আজ যার নাম রূপমতীর প্যাভিলিয়ন। এখান থেকে রানি নীচের বিস্তৃত সমতল ও নর্মদা নদীর দৃশ্য নিরীক্ষণ করতেন। ফেরার পথে কার-পার্কের ধারে ঝুপড়ির দোকানে বাওবাব ফলের জুস খেয়ে দেখতে পারেন। বাওবাব গাছের আদি বাড়ি কিন্তু সেই সুদূর আফ্রিকা।
হিন্দোলা মহল।
আরও অনেক উল্লেখযোগ্য সৌধ আছে মান্ডু জুড়ে, যেমন নীলকণ্ঠ প্রাসাদ ও মন্দির, আন্ধেরি ও উজালা বাউড়ি, দাই কে মহল, দাই কি ছোটি বহেন কে মহল, সাগর তালাও, এক খাম্বা মহল, দারিয়া খান মাকবারা, হাতি মহল ইত্যাদি।
মান্ডু-র নিকটবর্তী বিমানবন্দর ও রেলস্টেশন ইনদওর, ১০০ কিমি-র সামান্য কম রাস্তার দূরত্ব। মনে রাখবেন, এখন আবার অনেকে মান্ডুকে মাণ্ডব নামে উল্লেখ করে থাকেন। থাকার জন্য বেসরকারি হোটেল আছেই, তবে এমপিএসটিডিসি-র মালওয়া রিসর্ট ও মালওয়া রিট্রিট দু’টি বেশ সুবিধাজনক। এখান থেকে সাইটসিয়িং-এর জন্য গাড়ি ভাড়া বা গাইডের খোঁজ পাওয়া সহজ।
ওঙ্কারেশ্বর।
মান্ডু থেকে মহেশ্বর প্রায় ৪০ কিমি রাস্তা, সময় নেয় এক ঘণ্টার একটু বেশি। নর্মদা নদীর পাড়ে শহর। বলা হয় রামায়ণ-মহাভারতে উল্লিখিত মহিষ্মতী আজকের মহেশ্বর।
নর্মদা নদীর পাড় ধরে একের পর এক ঘাট। ঘাট থেকে ধাপে ধাপে উঠে গেছে দুর্গ তথা প্রাসাদ। আবার বাসস্ট্যান্ডের দিক থেকেও পায়ে পায়ে পৌঁছে যাবেন দুর্গের অন্য প্রান্তে। দুর্গের মধ্যে রানি অহল্যাবাঈয়ের রাজগদ্দি, মূর্তি বসেছে রানির। পারিবারিক মিউজিয়াম ও অন্যান্য মন্দির আছে। দুর্গের উপর থেকে নদী ও সংলগ্ন ঘাটগুলি বেশ লাগে দেখতে। দুর্গের শহর প্রান্তের তোরণ পেরিয়ে দেখতে পাবেন তাঁতিদের ঘর, বোনা হচ্ছে বিখ্যাত মহেশ্বরী শাড়ি। কিনতেও পারেন ইচ্ছে হলে।
মহেশ্বর থেকে প্রায় ৬০ কিমি দূরে ওঙ্কারেশ্বর। নর্মদা ও কাবেরী নদীর মিলন ঘটেছে এখানে। তৈরি হয়েছে দ্বীপ, দ্বীপে শিবের মন্দির। শিবের নামেই দ্বীপের নাম, ওঙ্কারেশ্বর, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম। আর পাঁচটা তীর্থক্ষেত্রের মতো মন্দিরকে নির্ভর করে গড়ে উঠেছে শহর। মূল ভূখণ্ডের শহরের সঙ্গে সেতু যোগাযোগ হচ্ছে দ্বীপের। শহরের ঘাট থেকে নৌকো নর্মদা পার করে পৌঁছনো যায় দ্বীপে। দরদাম করে নৌকো ভাড়া করবেন। নৌকোওয়ালার সঙ্গে কথা বলার আগে ভাল করে জেনে নেবেন মন্দির খোলা-বন্ধের সময়. কারণ, আরতি হওয়ার সময় বা মন্দির বন্ধের সময় নৌকোওয়ালারা দর্শনার্থীদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলে, ভাড়াও বেশি চায়। ঠিক সময় জানা থাকলে আপনাকে অযথা হয়রান হতে হবে না।
সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ের গায়ে তৈরি মন্দিরে পৌঁছতে হবে। বেশ ভিড় হয়। বলা হয়, পৌরাণিক কালে মান্ধাতার হাতে তৈরি এই মন্দির। বিশাল মন্দির কমপ্লেক্স। অবশ্যই পান্ডাদের উৎপাত আছে। অপরিসর গর্ভগৃহে স্বয়ম্ভূ শিব বিরাজমান। তবে সাবধানে পা ফেলবেন, ধাক্কাধাক্কি তো আছেই, আর পাথুরে মাটিও বেশ পিচ্ছিল। ছোট-বড় আরও নানা মন্দির আছে। দ্বীপের অন্যান্য আকর্ষণের মধ্যে আছে শঙ্করাচার্যের সাধনস্থল, মহাকালী গুহামন্দির, কোটি তীর্থ ঘাট ইত্যাদি। তা ছাড়া, নর্মদা নদীর বুকে নৌকোবিহার ভাল লাগে, যদিও নদীর ওপর বিশাল বাঁধ তৈরির কাজ দৃশ্যদূষণ ঘটায়।
মহেশ্বর বা ওঙ্কারেশ্বর, যে কোনও জায়গায় থেকে, অন্যটি দেখে নিতে পারেন। আর হাতে সময় থাকলে, দু’জায়গাতেই এক রাত করে কাটাতে পারেন। দু’জায়গাতেই বেসরকারি হোটেল ছাড়াও এমপিএসটিডিসি-র লজ আছে। মহেশ্বরে আছে নর্মদা রিট্রিট এবং ওঙ্কারেশ্বরে আছে নর্মদা রিসর্ট। দু’টি লজই অবস্থানগত ভাবে খুব সুন্দর।
ধর্মকর্ম, ইতিহাসের পাঠ নিতে নিতে হাঁপিয়ে উঠলে দু’-এক দিন কাটিয়ে দিতে পারেন নতুন এক পর্যটন কেন্দ্র, হনুবন্তিয়া-য়। অবশ্য এক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হনুবন্তিয়া-র পোশাকি নাম বাছাই করে রাখা হয় মধ্য দ্বীপ।
নদীর উপর ইন্দিরা সাগর ড্যামের বিশাল জলাধার। সেখানে হনুবন্তিয়া গ্রামের প্রান্তে গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রদেশ পর্যটনের টুরিস্ট কমপ্লেক্স এবং বোট ক্লাব। সাজানো মাঠ পেরিয়ে নদীর পাড়ে গুটি কয়েক কটেজ। পাশেই ডাইনিং হল। সব জায়গা থেকেই দেখা পাবেন বিস্তৃত নর্মদার। নদীর বুকে ছোট ছোট কয়েকটি দ্বীপেও যাওয়া যায়। আগাম ব্যবস্থা করে ট্রেকিংয়ে যেতে পারেন বোরিয়ামল দ্বীপে। বোট ক্লাব থেকে পাবেন স্পিড বোট চড়ার সুযোগ।
জল মহোৎসব।
বছর কয়েক ধরে এখানে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে জল মহোৎসব। টুরিস্ট কমপ্লেক্সের পাশে বিশাল মাঠে তৈরি হয় টেন্ট কলোনি। সেখানে বিলাসবহুল থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। টুরিস্ট কমপ্লেক্সের মাঠে, বোট ক্লাবের পরিচালনায় নদীর বুকে অনুষ্ঠিত হয় নানা অ্যাডভেঞ্চার মূলক খেলা, রক ক্লাইম্বিং, হট এয়ার বেলুনিং, প্যারাসেলিং, ইত্যাদি। সন্ধেবেলা হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। থাকে শিল্পমেলা, খাদ্যমেলার আয়োজন।
ইনদওর থেকে হনুবন্তিয়া-র দূরত্ব ১৫০ কিমি। খান্ডোয়া রেলস্টেশন থেকে দূরত্ব ৫০ কিমি।
ছবি সৌজন্য: মধ্যপ্রদেশ পর্যটন বিভাগ।