পুজোটা শহর ছাড়িয়ে কাছে-পিঠে কোথাও কাটাতে চাইলে, যেতে পারেন সুন্দরবনের ঝড়খালিতে। নিজস্ব চিত্র
শরৎকাল আসতে এখনও কিছু দিন বাকি। পুজো আসা মানেই লম্বা ছুটি। অনেকেই এই ছুটিটা কাজে লাগাতে পুজোয় শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। এ বারের পুজোটা শহর ছাড়িয়ে কাছে-পিঠে কোথাও কাটাতে চাইলে, যেতে পারেন সুন্দরবনের ঝড়খালিতে।
সুন্দরবনের বাসন্তী ব্লকের ঝড়খালি সমবায় এলাকায় অবস্থিত ঝড়খালি ইকো ট্যুরিজম। নির্জন, শান্ত জায়গা। শহুরে কোলাহল থেকে কিছু দিন দূরে থাকতে চাইলে, ঝড়খালি আপনার জন্য আদর্শ। ঝড়খালির জঙ্গল খুব ঘন না হলেও, জঙ্গলপ্রেমীদের একেবারে নিরাশ করবে না। সুন্দরী, ম্যানগ্রোভের জঙ্গল আলিঙ্গন করে রেখেছে ঝড়খালিকে।
ঝড়খালির অন্যতম আকর্ষণ ‘বাঘ উদ্ধার কেন্দ্র’। নিজস্ব চিত্র
ঝড়খালির অন্যতম আকর্ষণ ‘বাঘ উদ্ধার কেন্দ্র’। প্রায় তিন একর জমি নিয়ে তৈরি হয়েছে এই কেন্দ্রটি। জঙ্গলে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া আহত বাঘদের উদ্ধার করে আনা হয় এখানে। আহত বাঘদের শুশ্রূষা করার জন্য কলকাতা থেকে আসেন চিকিৎসক। কিছু দিন চিকিৎসা চলার পর সুস্থ হয়ে উঠলে, আবার জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। সপ্তাহে ছ’দিন ‘বাঘ উদ্ধার কেন্দ্র’ পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে। সোমবার বন্ধ। সকাল ৮.৩০ থেকে বিকেল ৪টের মধ্যে গেলেই হল। দূর থেকে হলেও বাঘের দেখা আপনি পাবেনই। এখানে ঢোকার জন্য একটি টিকিট কাটতে হয়। মাথাপিছু ৩০ টাকা। বাঘের খাঁচার পাশেই একটি সরু জলাশয় আছে। মন থেকে চাইলে, হয়তো কুমিরের দেখাও পেতে পারেন। নাম না জানা অসংখ্যা গাছ দিয়ে পুরো এলাকাটি ঘেরা। বাইরে চড়া রোদ হলেও, ভিতরটি বেশ ঠান্ডা। নির্জন। মাঝেমাঝে বাঘ এবং কুমিরের প্রতিবেশী হিসাবে সেখানে আসে বাঁদর এবং চিতল হরিণও।
‘বাঘ উদ্ধার কেন্দ্র’ থেকে বেরিয়ে বাঁ দিকে কয়েক পা হাঁটলেই ঝড়খালি এস.ডি.বি জেটিঘাট। এক দিকে মাতলা, অন্য দিকে বিদ্যাধরী। বিকেলের পড়ন্ত রোদে জেটি ঘাটের সামনে দাঁড়ালে মনে হবে, যেন গোটাটাই একটি ছবি। স্রোতস্বিনী নদী। রোদ পড়ে সোনার মতো ঝিকমিক করবে। আর তেমনই উতাল হাওয়া। মন এবং প্রাণ, দুই-ই শান্ত হয়ে যাবে। জেটি ঘাট থেকে লঞ্চ এবং বোট ভাড়া করে, সু্ন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা ভ্রমণ করতে পারেন। তেমন পরিকল্পনা থাকলে ভোর ভোর বেরিয়ে পড়াই ভাল। নদীর দু’ধারে ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গলের কিছু অংশ আবার নিষিদ্ধ এলাকা। পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ। বন দফতরের কর্মীরা ছাড়া, কারও প্রবেশ করার অনুমতি নেই সেখানে। দেশি-বিদেশি প্রচুর পাখি, দল বেঁধে আসে সেখানে। কে বলতে পারে, লঞ্চ থেকে দূরের জঙ্গলে বাঘের হাঁটাচলা দেখতে পেলেন। লঞ্চে বা বোটে উঠে ফেরার জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না। হাতে সময় নিয়ে বেরোলেই ভাল। বঙ্গোপসাগরের মোহনাটা অন্তত দেখে আসতে ভুলবেন না।
এক দিকে মাতলা, অন্য দিকে বিদ্যাধরী। নিজস্ব চিত্র
কী ভাবে যাবেন?
গা়ড়ি করে যেতে পারেন। কলকাতা থেকে সড়কপথে ঝড়খালি যেতে প্রায় ৩ ঘণ্টা লাগে। এ ছাড়া, শিয়ালদহ থেকে দক্ষিণ শাখার লোকাল ট্রেন ধরে নামতে পারেন ক্যানিং। স্টেশনের বাইরে বাস, ম্যাজিক ভ্যান পেয়ে যাবেন। সুবিধামতো কোনও একটিতে উঠে পড়তে পারেন। ক্যানিং স্টেশন থেকে এক ঘণ্টার পথ পেরিয়ে ঝড়খালি বাজার।
কোথায় থাকবেন?
‘ঝড়ে জলে জঙ্গলে’ বলে একটি ইকো ট্যুরিজম রিসর্ট আছে। বাঘ উদ্ধার কেন্দ্রের কাছেই এই রিসর্টটি। বছর খানেকের পুরনো। কয়েক দিনের জন্য সুন্দর, ছিমছাম একটি আস্তানা হতে পারে। গোটা রিসর্টটিই জলের উপর দাঁড়িয়ে আছে। আটটি দোতলা কটেজ রয়েছে। বেশির ভাগের নামই স্থানীয় নদীর নামে। পর্যটকদের জন্য সন্ধ্যায় বাউল গান, বনবিবির পালার মতো মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা রয়েছে।
কেমন খরচ?
সাধারণ ঘরের প্রতি দিনের ভাড়া ৩০০০ টাকা থেকে শুরু। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলে ৩৫০০ টাকা। ঘরের মান অনুযায়ী ভাড়ার পরিমাণ বাড়বে। একটি ঘরে দু’জন করে থাকার ব্যবস্থা আছে। সঙ্গে অতিরিক্ত কেউ থাকলে তার জন্য দিতে হবে বাড়তি ১২০০ টাকা।
খাওয়াদাওয়া
খাবারের মান খারাপ নয়। মাছ, মাংস, ডিম, নিরামিষ, চিনা খাবার— সবই পেয়ে যাবেন। খাবার মুখে দিলে মনে হতে পারে বাড়ির রান্না খাচ্ছেন।
‘ঝড়ে জলে জঙ্গলে’ বলে একটি ইকো ট্যুরিজম রিসর্ট আছে। নিজস্ব চিত্র