উদয়পুরের লেক প্যালেস। ছবি: সংগৃহীত।
এই শহরের পরিচিতি হ্রদের শহর নামে। আরাবল্লির সবুজ পাহাড় যেন বেড় দিয়ে রেখেছে হ্রদগুলিকে। আর সেই জলাশয় ঘিরেই তৈরি হয়েছে প্রাসাদ, মহল, মন্দির।
উদয়পুর, রাজস্থানের আর এক দ্রষ্টব্য। ইতিহাস বলছে, মেওয়ারের রানা দ্বিতীয় উদয় সিংহ ১৫৫৯ সালে উদয়পুর তৈরি করেন। এক সময়ে মোগলদের আক্রমণের হাত থেকে রাজপাট বাঁচাতে চিতৌড়গড় থেকে উদয়পুরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেছিলেন তিনি।
এখনও মেওয়ারের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে উদয়পুর। পাঁচটি কৃত্রিম জলাশয়ের উপস্থিতির জন্য উদয়পুরকে হ্রদের শহরও বলা হয়। কেউ আবার একে ভেনিসের সঙ্গেও তুলনা করেন। উদয়পুর বললেই প্রথম যে ছবিটি চোখে ভাসে, তা হল পিছোলা হ্রদের মধ্যস্থলে অবস্থিত লেক প্যালেস। লেক প্যালেসে এখন বিলাসবহুল হোটেল তৈরি হয়েছে। শোনা যায়, মেওয়ারের রাজপরিবারের সদস্যেরা গ্রীষ্মে সেই প্রাসাদে থাকতেন।
তবে উদয়পুরের ইতিহাসের সাক্ষ্য বিশেষ ভাবে বহন করে চলেছে সুবিশাল ‘সিটি প্যালেস’। রানা দ্বিতীয় উদয় সিংহ ১৫৫৩ সালে এই প্যালেসের নির্মাণকাজ শুরু করান। পিছোলো লেকের পূর্বে তার অবস্থান। একাধিক প্রজন্ম ধরে চলেছিল সেই নির্মাণকাজ। বিশাল প্যালেসের অপূর্ব স্থাপত্যশৈলী দেখার মতো। রয়েছে অসংখ্য মহল, মন্দির, বাগিচা। অমর বিলাস, বড়ী মহল, ভীম বিলাস, দরবার হল, ফতেপ্রকাশ প্যালেস, কৃষ্ণ বিলাস, লক্ষ্মী বিলাস, মাণক মহল, মোর চক— এমন নানা নামের ঘর, দরবার, মহলে ঘোরা যায় সেখানে।
হ্রদের শহর বলা হয় উদয়পুরকে।
উদয়পুর গেলে পিছোলা লেক, লেক প্যালেস, সিটি প্যালেসই মূল দর্শনীয়। তবে এই শহর ভাল ভাবে ঘুরে দেখতে হলে, এখানকার ইতিহাস, সংস্কৃতি জানতে হলে অন্তত তিন-চার দিন থেকে যেতে হবে উদয়পুরেই। এখানে দেখার আছে অনেক কিছু। জানার আছে আরও বেশি।
আর কী দেখবেন সেখানে?
সজ্জনগড় মনসুন প্যালেস
সজ্জনগড়ের প্রাসাদ থেকে দেখা যায় আরাবল্লির শোভা। ছবি:সংগৃহীত।
মেঘলা দিনে আরাবল্লির রূপ দর্শনের উদ্দেশ্যেই এ প্রাসাদ নির্মিত হয়েছিল, শোনা যায় এমনই। মেওয়ারের মহারানা সজ্জন সিংহ ১৮৮৪ সালে প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। তাঁরই নামে নামকরণ। পাহাড়ের মাথার এই প্রাসাদ থেকে দৃশ্যমান উদয়পুরের বিস্তীর্ণ অংশ। ঢেউখেলানো অনুচ্চ পাহাড়, তার গা বেয়ে বয়ে চলা হ্রদ, প্রাসাদ— সেই রূপ তুলনাহীন। বর্ষার প্রাসাদ বলেই এটি পরিচিত। তবে বছরভর এই প্রাসাদ থেকে সূর্যাস্ত দেখতে ভিড় করেন পর্যটকেরা।
অম্বরাই ঘাট
একটা বিকেল রাখুন অম্বরাই ঘোরার জন্য। ছবি: সংগৃহীত।
স্থানীয় সংস্কৃতি জানতে হলে, হ্রদের সৌন্দর্য এবং নৌকাবিহারের অভিজ্ঞতা নিতে হলে অম্বরাই ঘাট ভ্রমণের তালিকায় জুড়তেই হবে। পড়ন্ত বিকেলে হ্রদের ধারে বাঁধানো ঘাটে বসে সিটি প্যালেস, লেক প্যালেস দেখার অভিজ্ঞতাই আলাদা। রয়েছে উন্মুক্ত পরিবেশে সাজানো-গোছানো ক্যাফে। ঘাট ধরে হাঁটাও যায়। ক্যামেরাবন্দি করার জন্য এখান থেকে বহু জায়গাই মিলবে। আর গোধূলিবেলায় পিছোলা হ্রদে নৌকাবিহারের অভিজ্ঞতা আজীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকতে পারে।
বাগোর কী হাভেলি
উদয়পুরের স্থাপত্য, সংস্কৃতি জানতে চাইলে ঘুরে নিন বাগোর কী হাভেলি। ছবি: সংগৃহীত।
পিছোলা হ্রদের একপাশে গঙ্গোরী ঘাটের কাছেই রয়েছে বাগোর কী হাভেলি। এটি এখন একটি সংগ্রহশালা। ১৮০০ শতকে এটি নির্মিত হয়েছিল। মেবারের রাজপরিবারের ব্যবহৃত পোশাক, আসবাব রয়েছে এই হাভেলিতে। এখানকার ১০০টি ঘরে কোথাও শোভা পাচ্ছে পোশাক, কোথাও খুব পুরনো আঁকা। রাজস্থানি শৈলীতে তৈরি এই হাভেলি বা প্রাসাদের রঙিন কাচের কারুকাজ, নির্মাণশৈলী আজও বিস্ময় তৈরি করে। উদয়পুরের স্থাপত্য, শিল্পকে আরও কাছ থেকে দেখতে হলে এটি কিন্তু তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।
এ ছাড়াও ঘুরে নেওয়া যায় জগ মন্দির, ফতেহ সাগর লেক, সহেলিয়োঁ কী বাড়ী-সহ অনেক কিছুই।
কোথায় থাকবেন: পিছোলা লেক এবং ফতেহ সাগরের কাছের হোটেলে থাকলে চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দারুণ উপভোগ করা যায়। শহর জুড়েই রয়েছে ছোট-বড় হোটেল।
খাবার: ডাল বাটি চুরমা, লাল মাস, মেওয়ারি খাট্টা, গাট্টে কি সব্জি-সহ স্থানীয় অনেকে কিছুই চেখে দেখতে পারেন।
কী ভাবে যাবেন?
উদয়পুরে রয়েছে মহারানা প্রতাপ বিমানবন্দর। এ ছাড়া, জয়পুর বিমানবন্দরে নেমে সড়কপথে উদয়পুর যেতে পারেন। উদয়পুর সিটি নামে রেলস্টেশনও রয়েছে। হাওড়া থেকে ট্রেনে জয়পুর গিয়ে সেখান থেকে উদয়পুর ট্রেনে বা বাসে অথবা গাড়িতে যেতে পারেন। কলকাতা-উদয়পুরের সরাসরি ট্রেন রয়েছে অনন্যা এক্সপ্রেস।