—প্রতীকী ছবি।
স্মার্টফোনের ব্যাটারির আয়ু নিয়ে আমাদের সবার মধ্যেই একটা উদ্বেগ কাজ করে। চার্জার হাতে চার্জিং পোর্ট খুঁজে বেড়ানোর সময় দেখবেন আপনার আশপাশে আপনার মতো আরও অনেকেই একই কাজ করছেন। যাই হোক, কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে, আপনার কাজকর্মে খুব একটা সমঝোতা না করেই মোবাইলের ব্যাটারির আয়ু বাড়াতে পারেন। কী ভাবে? রইল তার হদিস।
১) অলওয়েজ়-অন ডিসপ্লে বন্ধ করুন
অলওয়েজ়-অন ডিসপ্লে অনেক আধুনিক স্মার্টফোনে একটি সুবিধাজনক বৈশিষ্ট্য যা স্ক্রিনকে সম্পূর্ণ রূপে আলোকিত না করে সময়, তারিখ এবং বিজ্ঞপ্তিগুলি দেখায়। এটি প্রতি ঘণ্টায় শুধুমাত্র ১-২% ব্যাটারি খরচ করে বলে দাবি করা হলেও বাস্তবে এটি উল্লেখযোগ্য ব্যাটারি ড্রেন করতে পারে। তাই এটি বন্ধ করা অতিরিক্ত ব্যাটারির জন্য একটি ভাল ট্রেড-অফ হতে পারে।
কী ভাবে করবেন: সেটিংস থেকে লক স্ক্রিনে যান। তার পর ‘অলওয়েজ়-অন ডিসপ্লে’ বা অনুরূপ বিকল্প সন্ধান করে এটি বন্ধ করুন।
২) অ্যাডাপ্টিভ ব্যাটারি মোড সক্রিয় করুন
অ্যান্ড্রয়েডের অ্যাডাপ্টিভ ব্যাটারি ফিচার হল একটি শক্তিশালী টুল যা আপনার ফোন ব্যবহারের ধরনগুলি শিখে নেয়। তার পর আপনি সাধারণত যে অ্যাপগুলি কম ব্যবহার করেন সেগুলোর জন্য ব্যাটারি ব্যবহার কমিয়ে দেয়। এটি আপনার ফোনের দৈনিক কর্মক্ষমতা কম না করেই আপনার ফোনের ব্যাটারি বাঁচিয়ে দেয় অনেকটাই৷
কী ভাবে করবেন: সেটিংস > ব্যাটারি > ‘অ্যাডাপটিভ পারফরম্যান্স’ থেকে ‘অ্যাডাপ্টিভ ব্যাটারি’ অন করুন।
৩) ব্যাটারি সেভার মোড চালু করুন
অ্যান্ড্রয়েডের ব্যাটারি সেভার মোড (বা কিছু ব্র্যান্ডের পাওয়ার সেভিং মোড) ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাক্টিভিটি কম করে, উজ্জ্বলতা কমিয়ে এবং ডার্ক মোড চালু করলে ব্যাটারির আয়ু বাড়তে পারে। এই বৈশিষ্ট্যটি সবচেয়ে উপকারী যখন আপনার ফোনের ব্যাটারি খুব কম থাকে। এর মাধ্যমে ফোন তার ব্যাটারির বেঁচে থাকা শেষ অংশটুকু সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে।
কী ভাবে করবেন: গুগ্ল পিক্সেল ফোনে সেটিংস > ব্যাটারি > ব্যাটারি সেভারে যান। স্যামসাং গ্যালাক্সিতে এটি সেটিংস > ব্যাটারি এবং ডিভাইস কেয়ার > ব্যাটারি > পাওয়ার সেভিং মোড।
—প্রতীকী ছবি।
৪) ডার্ক মোডে অন করুন:
যদি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ওলেড ডিসপ্লে থাকে, তা হলে ডার্ক মোডে সুইচ করা ব্যাটারি ড্রেন কমাতে সাহায্য করতে পারে। ওলেড ডিসপ্লে ফোনের যে বিন্দুগুলোতে আলো জ্বলা প্রয়োজন শুধুমাত্র সেই পিক্সেলগুলোর আলো জ্বালায় যার ফলে কম শক্তি খরচ হয়। আপনার ফোনটিকে ডার্ক মোডে রেখে ব্যাটারি বাঁচিয়ে ফেলতে পারেন।
কী ভাবে করবেন: সেটিংস > ডিসপ্লে খুলুন এবং ডার্ক মোড বা ডার্ক থিম নির্বাচন করুন। আপনি এটিকে সর্বদা চালু রাখতে বা একটি নির্দিষ্ট সময়ে সক্রিয় করতে পারেন।
৫) ডিসপ্লের উজ্জ্বলতা এবং স্লিপ টাইম:
স্ক্রিনের বেশি উজ্জ্বলতা ব্যাটারি খরচের জন্য সবচেয়ে বড় অপরাধীদের মধ্যে অন্যতম। ফোনের ডিসপ্লের উজ্জ্বলতার মাত্রা কমিয়ে, বিশেষত যখন বাড়ির ভিতরে বা রাতে, যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি সঞ্চয় করা যেতে পারে। উপরন্তু, স্ক্রিন টাইমআউট (আপনার স্ক্রিন স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্ধ হতে যে সময় লাগে) সংক্ষিপ্ত করাও ব্যাটারির আয়ু রক্ষা করতে পারে।
কী ভাবে করবেন: কুইক সেটিংস অ্যাক্সেস করতে আপনার হোম স্ক্রিনে নীচের দিকে সোয়াইপ করুন এবং স্লাইডারটি বামে সরিয়ে উজ্জ্বলতা কমিয়ে দিন।
কী ভাবে করবেন: সেটিংস > অপশন > স্ক্রিন টাইমআউটে স্ক্রিন টাইমআউট ঠিক করুন এবং এটিকে ৩০ সেকেন্ড বা তার কম সেট করুন।
৬) অব্যবহৃত অ্যাকাউন্টগুলি সরান
আপনার ফোনে অতিরিক্ত অ্যাকাউন্ট অপ্রয়োজনীয় ব্যাকগ্রাউন্ড সিঙ্কের কারণ হতে পারে, কোনও বাস্তব সুবিধা প্রদান না করেই আপনার ব্যাটারি নষ্ট করে দিতে পারে। পুরনো বা অব্যবহৃত অ্যাকাউন্টগুলি সরালে এই ড্রেন কমতে পারে এবং ব্যাটারির কর্মক্ষমতা বাড়তে পারে। কী ভাবে করবেন: সেটিংস > অ্যাকাউন্ট বা সেটিংস > পাসওয়ার্ড এবং অ্যাকাউন্টে যান (ডিভাইস অনুসারে পরিবর্তিত হয়)। প্রতিটি অ্যাকাউন্ট নির্বাচন করুন এবং এটি সরানোর জন্য সঠিক বিকল্প খুঁজুন।
৭) কিবোর্ড সাউন্ড এবং হ্যাপটিক ফিডব্যাক বন্ধ করুন
যদিও কিবোর্ড শব্দ এবং কম্পন (হ্যাপটিক্স) আপনার টাইপিং অভিজ্ঞতা ভাল করতে পারে, কিন্তু তারা অতিরিক্ত ব্যাটারিও ব্যবহার করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি বন্ধ করলে ব্যাটারির আয়ু কিছুটা বাড়তে পারে৷
কী ভাবে করবেন: সেটিংস > ভাষা এবং ইনপুট খুলে আপনার ডিফল্ট কিবোর্ড নির্বাচন করুন। তারপর প্রেফারেন্স> কিপ্রেসে যান এবং ‘কিপ্রেস সাউন্ড’ এবং ‘কিপ্রেসের হ্যাপটিক প্রতিক্রিয়া’ উভয়ই বন্ধ করুন।
৮) অ্যাপের নোটিফিকেশন অফ করুন
নোটিফিকেশনগুলো, বিশেষত একাধিক অ্যাপ থেকে, ক্রমাগত আপনার স্ক্রিন অন করে, একই সঙ্গে অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে সক্রিয় রেখে আপনার ব্যাটারি খরচ করতে পারে৷ শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিতে নোটিফিকেশন কমিয়ে/বাড়িয়ে আপনার ব্যাটারির আয়ু বাড়ানো যেতে পারে৷
কী ভাবে করবেন: সেটিংস > নোটিফিকেশন > অ্যাপ নোটিফিকেশনে যান এবং অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করুন।
—প্রতীকী ছবি।
৯) ‘হে গুগ্ল’ বন্ধ করুন
আপনার ডিভাইস যদি ক্রমাগত ‘হে গুগ্ল’ শুনতে প্রস্তুত থাকে, তা হলে এটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ব্যাটারি খরচ করতে পারে। আপনি নিয়মিত ভয়েস অ্যাক্টিভেশনের উপর নির্ভর না করলে আপনার মোবাইলের ব্যাটারির আয়ু উন্নত করতে এই বৈশিষ্ট্যটি বন্ধ করার কথা বিবেচনা করুন।
কী ভাবে করবেন: গুগ্ল অ্যাপ খুলুন। আপনার প্রোফাইল আইকনে ট্যাপ করুন। সেটিংস > গুগ্ল অ্যাসিসট্যান্ট > হে গুগ্ল এবং ভয়েস ম্যাচে যান এবং ‘হে গুগ্ল’ বন্ধ করুন।
১০) স্ক্রিন রিফ্রেশ রেট কম করুন
উচ্চতর রিফ্রেশ রেট (যেমন ৯০ হার্ৎজ় বা ১২০ হার্ৎজ়) আপনার ডিভাইসটিকে আরও রেস্পন্সিভ করে, তবে তার সঙ্গে বেশি ব্যাটারি খরচ করে৷ এটিকে স্ট্যান্ডার্ড ৬০ হার্ৎজ়ে নামিয়ে আনলে ব্যাটারির আয়ু বাড়ানোর জন্য ব্যবহারযোগ্যতা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাবে না।
কী ভাবে করবেন: সেটিংস > ডিসপ্লেতে যান এবং ‘রিফ্রেশ রেট’ বা ‘মোশন স্মুদনেস’ (ডিভাইসের উপর নির্ভর করে) সন্ধান করুন। কম ব্যাটারি ব্যবহারের জন্য এটিকে ৬০ হার্ৎজ় বা ‘স্ট্যান্ডার্ড’-এ সেট করুন।
বোনাস টিপ: লো-পাওয়ার মোড
প্রতিটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনে একটি লো-পাওয়ার মোড রয়েছে যা ব্যাকগ্রাউন্ড প্রক্রিয়াগুলিকে ডিজ়েবল করতে পারে, অ্যাপ রিফ্রেশ কম করতে পারে এবং আপনার ডিভাইসটিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করার জন্য স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কম করতে পারে। যখন আপনি কম ফোন চালাচ্ছেন তখন ব্যাটারি সংরক্ষণ করার এটি একটি দ্রুত এবং কার্যকর উপায়।
কী ভাবে করবেন: স্ক্রিনের উপরে থেকে দু’বার নীচের দিকে সোয়াইপ করুন এবং কম-পাওয়ার মোড সক্রিয় করতে ব্যাটারি আইকনে আলতো চাপুন।