প্রতীকী ছবি।
দু’জনেই ভিক্ষাজীবী। কলকাতার দুই প্রান্তে দু’জন ফুটপাতে থাকতেন। বিদেশ যোগ নেই। নেই কোনও ভিন্রাজ্যের যোগও। এমনই দুই ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাসের প্রমাণ মেলায় রীতিমতো উদ্বেগে স্বাস্থ্য ভবন।
কী ভাবে তাঁরা আক্রান্ত হলেন, তাঁদের সংস্পর্শেই বা কারা এসেছিলেন, সে সবেরই খোঁজ চলছে এখন। ওই দুই ফুটপাতবাসীর এক জন ভর্তি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। অন্য জনের চিকিৎসা চলছে এমআর বাঙুরে। এই ঘটনা চিকিৎসকদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। যদিও স্বাস্থ্য ভবন সরকারি ভাবে এখনও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
দুই ফুটপাতবাসীর আক্রান্ত হওয়ার এই ঘটনা চিন্তা বাড়িয়েছে করোনা নিয়ে রাজ্য সরকার নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটিরও। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ফুটপাতবাসীরা কী ভাবে আক্রান্ত হলেন তা অবিলম্বে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। না হলে দ্রুত অনেকের মধ্যে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে।
আরও পড়ুন: করোনার ধাক্কা কর্মক্ষেত্রে, লকডাউনের জেরে বেকারত্বের হার বাড়ল ২৩ শতাংশ
প্রথম ঘটনাটি বৌবাজার থানা এলাকার। সূত্রের খবর, গত ৩ এপ্রিল, শুক্রবার ৪০ বছর বয়সী এক ভিক্ষাজীবীকে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেন বৌবাজার থানার এক আধিকারিক। এলাকায় টহল দিতে গিয়ে পুলিশ কবিরাজ রো-তে ওই ব্যক্তিকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পায়। ওই ব্যক্তির জ্বর, সর্দি এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ ছিল বলে জানা গিয়েছে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে। প্রাথমিক চিকিৎসায় ওই ব্যক্তির অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সোমবার তাঁর লালারসের নমুনা পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। সোমবার রাতেই তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়। মঙ্গলবার তাঁকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ঘটনাটি গার্ডেনরিচ থানা এলাকার টুকরা পট্টির। ৫৯ বছর বয়সী এক ফুটপাথবাসী আদতে মেটিয়াবুরুজ থানা এলাকার মিঠা তালাও এলাকার বাসিন্দা। গত ১ এপ্রিল টুকরা পট্টির ফুটপাতে তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশ স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় ওই ভিক্ষাজীবীকে ভর্তি করে নাদিয়াল হাসপাতালে। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে এবং করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। এর পরই তাঁর লালারসের নমুনা পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। সোমবার রাতে তাঁর রিপোর্টও পজিটিভ এসেছে। মঙ্গলবার সকালে তাঁকে এমআর বাঙুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা দমনে ‘ভিলওয়ারা মডেল’ পথ দেখাতে পারে গোটা দেশকে
স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, ফুটবাসীদের আক্রান্ত হওয়ার এই ঘটনা চিন্তার বিষয়। কারণ, ওই ব্যক্তিরা কার কার সংস্পর্শে এসেছিলেন, তা বলা খুব কঠিন। অনেকেই লকডাউনের সময়ে ওই ফুটপাথবাসীদের খাবার দিয়েছেন। পুলিশকর্মীরাও আছেন তার মধ্যে।
কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে খবর, বৌবাজারের কবিরাজ রো-তে যেখানে প্রথম ভিক্ষাজীবী থাকতেন সেই জায়গা জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। যে অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে এনআরএসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার চালককেও বাড়িতে আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়েছে।
ওই দুই ভিক্ষাজীবী ছাড়াও রাজ্যে আরও কয়েক জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা গিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে। রাজাবাগান এলাকার এক ব্যক্তি ভর্তি রয়েছেন শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। ৪৪ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিরও রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে সোমবার রাতে। মধ্য কলকাতার মুচিপাড়া লেনের ৫৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গত ৪ এপ্রিল ভর্তি হন একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তাঁর রিপোর্টও পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে।
আরও পড়ুন: রাশ টানল ইটালি, বেসামাল আমেরিকা, বিশ্বে করোনা আক্রান্ত সাড়ে ১৩ লক্ষ
করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে গণেশ টকিজ এলাকার ৮২ বছরের এক বৃদ্ধ এবং গিরিশ পার্ক এলাকার ৫২ বছরের এক মহিলার শরীরে। হাওড়া গোলাবাড়ি এলাকার ৫৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তির নমুনাও পজিটিভ এসেছে বলে জানা গিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে। রাজাবাজারের বাসিন্দা ৪০ বছরের এক ব্যক্তি সর্দি, জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন এনআরএস হাসপাতালে। শুরু থেকেই তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। তাঁর নমুনা পরীক্ষা করেও পজি়টিভ পাওয়া গিয়েছে সোমবার। তাঁকেও মঙ্গলবার এমআর বাঙুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের মতো আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির খবর পাওয়া গিয়েছে উত্তরবঙ্গ থেকেও। দমদমের বেসরকারি হাসপাতালের নার্সের পর এ বার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের এক নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। জানা গিয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কালিম্পঙের মহিলার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ওই নার্স। তিনি কয়েক দিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সেই রিপোর্টে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। তিনি মাটিগাড়া এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেই গত রবিবার সকালে মৃত্যু হয় উত্তর-পূর্ব রেলের এক কর্মীর। তাঁর শরীরেও পাওয়া গিয়েছিল করোনাভাইরাস। তাঁর ছোট ছেলেও আক্রান্ত হয়েছেন বলা জানা গিয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে। আলিপুর কমান্ড হাসপাতালের সেনা চিকিৎসকের পর এ বার এক সেনাও আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে। তিনিও চিকিৎসাধীন ওই সেনা হাসপাতালে।
আরও পড়ুন: হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপে করোনা নিয়ে জোক শেয়ার করলেই গ্রেফতার! ভাইরাল এই মেসেজ কি ঠিক?
সোমবারের পর স্বাস্থ্য দফতর এখনও নতুন করে আক্রান্তদের তালিকা সরকারি ভাবে প্রকাশ করেনি। মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার বিকালে নবান্নে জানিয়েছেন, রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬৯। সুস্থ হয়েছেন ১৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এ দিন সকালে যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে তাতে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯১ বলে জানানো হয়েছে। সেখানেও বলা হয়েছে, রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৩। সুস্থ হয়েছেন ১৩ জন। অর্থাৎ সক্রিয় করোনা আক্রান্ত ৭৫।