আগাছা-সাফ: মাঠে চলছে নাড়া পোড়া। নিজস্ব চিত্র।
শীতের মরসুমে বাগদার বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমিতে চলছে নাড়া পোড়ানোর কাজ। সচরাচর শীতকালীন আনাজ চাষের সময়ে চাষিরা জমির আগাছা সাফ করে সেগুলি জমির একপ্রান্তে জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেন। ফলে জমি যেমন পরিষ্কার হয়, তেমনই আগাছা পোড়ানো ছাই জমিতে জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এক সঙ্গে অনেকখানি জমিতে নাড়া পোড়ানোর ফলে ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা, ছড়ায় দূষণ। চলতি বছরে করোনা অতিমারির কারণে দূষণ ঠেকাতে দুর্গাপুজো ও কালীপুজোয় আতসবাজি পোড়ানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল উচ্চ আদালত। অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ আনা গিয়েছিল বাজি পোড়ানোর উপর। তবে কৃষিজমিতে নাড়া পোড়ানো চলছেই।
বাগদার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, সন্ধ্যার আগে বেশ কয়েকটি জমিতে নাড়া পোড়ানো শুরু করেছেন চাষিরা। আশেপাশের জমি থেকে কেটে রাখা শুকনো ডালপালা বয়ে এনে এক জায়গায় জড়ো করে সেগুলিতে আগুন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে চারপাশ। সন্ধ্যার কুয়াশার সঙ্গে মিশে ঘন মেঘের মতো ধোঁয়ার স্তর ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশে, ছড়িয়ে পড়ছে সারা এলাকা জুড়ে।
চাষিদের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরেই শীতকালীন চাষের মরসুমে জমিতে নাড়া পোড়ানো হয়। এর ফলে জমিতে যেমন জৈবসার যোগ হয়, তেমনই বেশ কিছু পোকামাকড় ও রোগজীবাণুও ধ্বংস হয়।
কৃষি বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘নাড়া পোড়ানোর ফলে প্রভূত বায়ুদূষণ ঘটে। জমিতে সামান্য জৈবসার হয় তো যোগ হয়, কিন্তু পরিবেশের ক্ষতির পরিমাণ অনেক গুণ বেশি। সে জন্য আমরা এখন কৃষকদের নাড়া পোড়ানো বন্ধ করার পরামর্শ দিই।’’
কিছু কৃষিজীবীদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতাও দেখা গিয়েছে। বাগদার চরমণ্ডল গ্রামের কৃষিজীবী সুভাষ ঘোষ বলেন, ‘‘এখনও কেউ কেউ নাড়া পোড়াচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু অনেক চাষিই নাড়া পোড়ানো বন্ধ করে দিয়েছেন। আগে আমাদের ধারণা ছিল, এর ফলে জমির উপকার হয়। কিন্তু এখন আমরা জানতে পেরেছি, উপকারের চেয়ে ক্ষতিই হয় বেশি।’’