সোমবার গোর্কি সদনে নাইজেল শর্ট। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
১৪ বছর বয়সে ববি ফিশারের কনিষ্ঠতম আইএম হওয়ার রেকর্ড ভাঙেন। পাঁচ বছর পরে বিশ্বের কনিষ্ঠতম জিএম। ইংল্যান্ডের নাইজেল শর্ট এখন শহরে। কলকাতা ওপেন গ্র্যান্ডমাস্টার দাবায় অংশ নিতে। প্রস্তুতির মাঝেই বিশ্ব দাবা থেকে ক্রিকেট ও বিশ্বনাথন আনন্দ নিয়ে আনন্দবাজারকে খোলামেলা যা বললেন...
প্রশ্ন: প্রায় চার দশক দাবায় বিশ্বসেরাদের বিরুদ্ধে খেলেছেন। ম্যাগনাস কার্লসেনদের উঠে আসাটা কি দমকা হাওয়ার মতো?
নাইজেল: আমি আগেই বলেছিলাম কার্লসেন জিতবে। আসলে এখনকার দাবাড়ুরা প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। ঝুঁকি নিতে ভালবাসে। প্রচুর আইডিয়া। ট্যাকটিকাল স্কিল অনেক উন্নত। ‘সেফ প্লে’ ব্যাপারটা এখন কম। যেটা আগে ছিল না।
প্র: ক্রিকেটের টি-টোয়েন্টির মতো?
নাইজেল: (হেসে) বলতে পারেন। টি-টোয়েন্টিতে যেমন ব্যাটসম্যান যে কোনও বল বাউন্ডারিতে পাঠানোর আত্মবিশ্বাস রাখে বলে ঝুঁকি নেয়। এখনকার দাবাড়ুদের আত্মবিশ্বাসও সে রকমই।
প্র: সেটার অভাবই কি আনন্দের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে হারের কারণ?
নাইজেল: আনন্দ গ্রেট প্লেয়ার। কিন্তু গত কয়েক বছরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাবটা কোনও রকমে আঁকড়ে ছিল। মোটিভেশন হারিয়ে ফেলেছিল। সাফল্য ছিল শুধু বরিস গেলফাঁর বিরুদ্ধে।
প্র: আনন্দ আবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারবেন?
নাইজেল: আমি বিশ্বাস করি না পারবে। আমার মনে হয় কখনও কখনও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের এই চাপটা থেকে মুক্ত হওয়াও দরকার। আনন্দ সেই মুক্তিটা পেয়েছে। এখন খোলা মনে খেলতে পারবে। দাবার জন্যও নতুন প্রজন্মের উঠে আসাটা প্রয়োজন ছিল।
প্র: আপনি আনন্দের চেয়ারে থাকলে এখন কী করতেন?
নাইজেল: আমার মনে হয় আনন্দ দাবা উপভোগ করতে ভুলে গিয়েছে। চাপ নিয়ে খেলছে। আমি ওর জায়গায় থাকলে খেলাটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করতাম। কোথাও ঘুরে-টুরে আসতাম তারপর আবার বসতাম বোর্ডের সামনে।
প্র: প্রতিপক্ষ কার্লসেন কতটা শক্ত?
নাইজেল: কার্লসেন খুব ঠান্ডা মাথায় প্রতিপক্ষের জন্য ফাঁদ পাতে। সেটা ওপেনিং হোক বা মিডল গেম। খুব ভাল স্মৃতিশক্তি। বোর্ডে ঘুঁটির পজিশন যেমন থাক, সব সময় স্বচ্ছন্দ। এটাই ওর প্রধান শক্তি।
প্র: দাবা বিশ্বে জল্পনা রয়েছে কার্লসেন ‘সম্মোহন’ জানেন। হিকারু নাকামুরা কালো চশমা পরেও তো নেমেছিলেন কার্লসেনের বিরুদ্ধে?
নাইজেল: আমি বিশ্বাস করি না। ওসব রটনা, কারও ব্যর্থতা ঢাকার অজুহাত হতে পারে। এটা মানসিক ব্যাপার। আমার স্ত্রী মনোবিদ। ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারি।
প্র: আনন্দ ছাড়া কার্লসেনকে কে চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারেন?
নাইজেল: রোমানিয়ার লেভন অ্যারেনিয়ান, রাশিয়ার ভ্লাদিমির ক্র্যামনিকের মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে।
প্র: পি হরিকৃষ্ণ, পরিমার্জন নেগির কোচ ছিলেন। সন্দীপন চন্দ, সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো প্লেয়ারদেরও দেখছেন বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। ভারতে আনন্দের পরবর্তী প্রজন্মের কাউকে বিশ্বসেরা হওয়ার মতো মনে হয়েছে?
নাইজেল: এখনও কাউকে মনে হয়নি। সূর্য, সন্দীপনের বিরুদ্ধে খেলেছি বেশ কয়েকবার। সূর্য তো আমায় কোচ হওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছরই সূর্যর কোচ হয়ে যেতে পারি। এখনকার ভারতীয় টিমটা খুব ভাল। কিন্তু বিশ্বসেরা হওয়ার মতো কেউ নয়। কোনও ব্যাটসম্যানের গড় ৫৪ হলেই তো আর সে সচিন তেন্ডুলকর হয়ে যায় না।
ক্যান্ডিডেটস দাবায় এগিয়ে আনন্দ
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনের সঙ্গে বদলার ম্যাচের মঞ্চ গড়ার দিকে ক্রমশ এগোচ্ছেন বিশ্বনাথন আনন্দ। রাশিয়ায় ক্যান্ডিডেটস দাবায় এ দিন রুশ মহাতারকা ভ্লাদিমির ক্রামনিকের সঙ্গে ড্র করে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে আনন্দ। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট হাতছাড়া হওয়ার পর অফ ফর্মে থাকা আনন্দ এখানে কী করেন দেখতে উৎসুক ছিল দাবা বিশ্ব। এবং প্রথম রাউন্ডেই শীর্ষ বাছাই লেভন অ্যারোনিয়নকে হারিয়ে চমকে দেন তিনি। তার পর কালো ঘুঁটি নিয়ে ভ্যাসেলিন টোপালভের সঙ্গে ড্র ও শাখরিয়ার মামেদিয়ারভকে হারিয়ে এক নম্বরে। বিশ্বের সেরা আট দাবাড়ুর এই লড়াই যিনি জিতবেন, বিশ্বসেরার খেতাবের জন্য কার্লসেনকে চ্যালেঞ্জ করবেন তিনি।