সাংবাদিক সম্মেলনের পথে ইংল্যান্ড কোচ রয় হজসন। ছবি: এএফপি
ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের গত সপ্তাহেই জানিয়েছিলেন বিশ্বকাপের দলটা বেছে ফেলেছি। বাকি কেবল ২৩ জনের নামটা ঘোষণা করা।
অবশেষে সোমবার ইংরেজ ফুটবল জনতার বহু প্রতীক্ষিত সেই বিশ্বকাপ ফুটবলের দলটা জানিয়ে দিলেন ইংল্যান্ড ম্যানেজার রয় হজসন। যেখানে অভিজ্ঞতার চেয়ে তারুণ্যকেই প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। যার সুবাদে ব্রাজিলের উড়ানে ওঠা হচ্ছে না ইংরেজদের নির্ভরযোগ্য লেফট ব্যাক অ্যাশলে কোলের। তাঁর জায়গায় দলে এসেছেন সাউদাম্পটনের আঠারো বছর বয়স্ক ডিফেন্ডার লিউক শ। বিশ্বকাপের দলে জায়গা না পেয়ে এ দিন আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকেই অবসর নিয়ে নেন কোল। সে রকমই অ্যান্ডি ক্যারলের জায়গায় এসেছেন রিকি ল্যাম্বার্ট। যিনি আবার ইংরেজদের বিশ্বকাপের ‘যন্ত্রনা’ পেনাল্টি থেকে গোল করতে দক্ষ। এ ছাড়াও রহিম স্টার্লিং, রস বার্কলে, অ্যালেক্স চেম্বারলেনদের মতো বহু তরুণ মুখের ছড়াছড়ি এ বারের ইংল্যান্ড দলে। তেইশ জনের দলে রয়েছেন তিন গোলকিপার, সাত ডিফেন্ডার, নয় মিডফিল্ডার ও চার ফরোয়ার্ড। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে বাদ গিয়েছেন ম্যান ইউয়ের মাইকেল ক্যারিক। হজসন তাঁকে জায়গা দিয়েছেন স্ট্যান্ডবাইদের দলে।
চার বছর আগে যখন রুনিদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ব্রাজিলে সমর্থকদের হতাশ করবে না ইংল্যান্ড। সেই ‘মিশন ব্রাজিল’-এর জন্য দল ঘোষণার পরেই হজসন জানিয়ে দিয়েছেন, “আমরা বিশ্বকাপ জিততেই পারি।” কিন্তু যে দেশ ছেষট্টি সালের পর আর কোনও দিন বিশ্বকাপ নিয়ে হিথরোতে নামতে পারেনি, সেই দেশের পক্ষে কাজটা কত কঠিন তা বুঝতে পেরেই বলে দিয়েছেন, “জানি না এটা স্পোর্টস কার না সেলুন কার। কিন্তু চালকের আসনে বসতে পেরে আমি খুশি। চেষ্টা করব সাফল্যের ফিনিশিং পয়েন্ট পৌঁছানোর।” আর দলে তারুণ্যের শক্তি আমদানি প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “দেশের স্বার্থে তরুণ ফুটবলাররা নিজেদের উজাড় করে দেবে বলেই আমার বিশ্বাস।”
কিন্তু দল ঘোষণার পর গোটা ইংল্যান্ড জুড়ে প্রশ্ন একটাই। প্রথম একাদশ কাদের নিয়ে গড়বেন হজসন। আক্রমণে রুনির সঙ্গী হবেন কারা? স্টারিজ, ওয়েলবেক না ল্যাম্বার্ট? ইংলিশ প্রচারমাধ্যমের অনুমান, গোলে জো হার্টকে রেখে রক্ষণ, মাঝমাঠ এবং আক্রমণে হজসনের তিন নেতা লেটন বেইন্স, ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড এবং ওয়েন রুনি। হয়তো ফরোয়ার্ডে রুনির সঙ্গে জুড়ি বাঁধবেন স্টারিজ।
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সঙ্গে একই গ্রুপে রয়েছে ইতালি, উরুগুয়ে আর কোস্তারিকা। তাই গ্রুপের বাঁধা টপকে নক আউট পর্বে যাওয়াটাই রুনিদের প্রথম চ্যালেঞ্জ। তার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে আগামী সোমবারই পর্তুগাল চলে যাবেন হজসন। ৩০ মে ওয়েম্বলিতে পেরুর বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ ‘থ্রি লায়ন্স’-এর। জুন মাসের প্রথম দিন দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রস্তুতি শিবির মায়ামিতে যাবে ইংল্যান্ড। সেখানে ইকুয়েডর এবং হন্ডুরাসের বিরুদ্ধে প্র্যাকটিস ম্যাচের পর ৮ জুন রিওতে নামবেন রুনিরা। বিশ্বকাপে তাঁদের প্রথম খেলা ১৪ জুন ইতালির বিরুদ্ধে।
বিশ্বকাপের ইংল্যান্ড দল
গোলকিপার: জো হার্ট (ম্যাঞ্চেস্টার সিটি), বেন ফস্টার (ওয়েস্টব্রম), ফ্রেজার ফর্স্টার (সেলটিক)।
রক্ষণ: গ্লেন জনসন (লিভারপুল), ফিল জাগিয়েলকা (এভার্টন), গ্যারি কাহিল (চেলসি), ফিল জোন্স (ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড), ক্রিস স্মলিং (ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড), লেটন বেইন্স (এভার্টন), লিউক শ (সাউদাম্পটন)।
মাঝমাঠ: স্টিভন জেরার (লিভারপুল), জ্যাক উইলশেয়ার (আর্সেনাল), জর্ডন হেন্ডারসন (লিভারপুল), ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড (চেলসি), জেমস মিলনার (ম্যাঞ্চেস্টার সিটি), রহিম স্টার্লিং (লিভারপুল), অ্যালেক্স অক্সলেড-চেম্বারলেন (আর্সেনাল), অ্যাডান লাল্লানা (সাউদাম্পটন), রস বার্কলে (এভার্টন)।
ফরোয়ার্ড: ওয়েন রুনি (ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড), ড্যানিয়েল স্টারিজ (লিভারপুল), ড্যানি ওয়েলবেক (ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড), রিকি ল্যাম্বার্ট (সাউদাম্পটন)।
২৬ বছর ১১৭ দিন
ইংল্যান্ডের ব্রাজিল বিশ্বকাপ দলের গড় বয়স। ২০১০ বিশ্বকাপের দলের থেকে দু’বছরের তরুণ কিন্তু ২০০৬-এর দল (২৫ বছর ২৫৮ দিন) থেকে বয়স্ক।
কনিষ্ঠতম
এ বারের ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ টিমের কনিষ্ঠতম সদস্য লিউক শ (১৮)। তার আগে রয়েছেন ২০০৬-এর থিও ওয়ালকট (১৭) ও ১৯৯৮-এর মাইকেল আওয়েন (১৮)।
২৪ বছর পর
রেঞ্জার্সের চার ফুটবলারের পর সেল্টিক দ্বিতীয় স্কটিশ ক্লাব যার কোনও প্লেয়ার (ফ্রেজার ফর্স্টার) ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেলেন।