মাঠে ক্রমশ দলের রং বদল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন সনি নর্ডিরা।
মাঠের বাইরেও কিন্তু প্রতিদিন বদলাচ্ছে মোহনবাগান রাজনীতির রং।
বাগানের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একদল সদস্য সোমবার আদালতে কাগজপত্র জমা দিলেন, ক্লাবে আর্থিক স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার দাবিতে।
তার কয়েকঘণ্টা বাদে ক্লাব তাঁবুতে রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে নজির ভেঙে ক্লাবের হিসাব সাংবাদিকদের হাতে তুলে দিলেন বাগান সচিব অঞ্জন মিত্র। কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললেন, “সাধারণ সভায় এসে নিয়ম মেনে প্রশ্ন করুন। মিছিল করে ক্লাবকে রাস্তায় নামিয়ে আনবেন না। এতে ক্লাবের ক্ষতি হচ্ছে।” সচিবের পাশে তখন বারো জন কর্মসমিতির সদস্য উপস্থিত।
নাটক পঞ্চমাঙ্কে পৌঁছয় সন্ধ্যার একটু পরে। ক্লাব তাঁবুতে হঠাৎ-ই উপস্থিত হন বাগানের পদত্যাগী সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু। সারদা কাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার পর প্রায় আড়াই মাস বাদে ক্লাবে এলেন তিনি। তাঁর সঙ্গেই হাজির হন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও। সচিবের ঘর থেকে বেরিয়ে সৃঞ্জয় আবার বলে দেন, “সাধারণ সভায় থাকব। আজই প্রথম কাজে যোগ দিলাম। সেজন্যই ক্লাব তাঁবু ঘুরে গেলাম। তাঁবু এবং গ্যালারি সংস্কারের কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করতে চাই।”
আদালতে যাওয়া সুব্রত-সহ ক্লাব সদস্যদের বক্তব্য, “আমরা চাইছি হিসাব ঠিকঠাক দিয়ে নির্বাচন হোক। সাধারণ সভা স্থগিত করা হোক।” শাসকগোষ্ঠী অবশ্য এই দাবিতে বিচলিত নয়। বাগান সচিব বললেন, “সভা হবে। লাইন দিয়ে কার্ড দেখিয়ে সভায় ঢুকতে হবে। কেউ গণ্ডগোল করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।” ২৭ ফেব্রুয়ারির সাধারণ সভা নিয়ে বাগান তাঁবু ক্রমশ তেতে উঠলেও নির্বাচন যে এখন হচ্ছে না তা অবশ্য পরিষ্কার। শাসকগোষ্ঠী ইতিমধ্যেই সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। মার্চের বদলে তা হতে পারে মে-জুনে।
শিলং লাজং ম্যাচের জন্য যে তালিকা সঞ্জয় সেন এ দিন জমা দিয়েছেন তাতে নেই ডেনসন দেবদাসের নাম। পারফরম্যান্সের জন্য বাদ পড়েছেন এই দক্ষিণী মিডিও। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে খেলা ফুটবলাররা অবশ্য সবাই রয়েছেন তালিকায়। ক্লাব সচিব অঞ্জন মিত্রও চাইছেন, সদ্য বিরোধী হওয়া প্রাক্তন ফুটবলার ও কর্মসমিতির সদস্যদের ছেঁটে ফেলতে। সে জন্যই ‘ফুটবলারদের অর্থ সমস্যা না মেটা পর্যন্ত নির্বাচন নয়’ জানিয়ে দিয়েছেন বাগান সচিব। এবং যা খবর তাতে পদত্যাগী প্রেসিডেন্ট টুটু বসু, সহ সচিব সৃঞ্জয় বসু, অর্থসচিব দেবাশিস দত্তরা সবাই শাসকগোষ্ঠীর প্যানেলে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল।
বাগান সচিব এ দিন ক্লাবের বিভিন্ন কর্মসমিতির সিদ্ধান্ত তুলে দেন সাংবাদিকদের হাতে। সেখানে দেখা যায়, হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা দুই কর্মসমিতির সদস্য তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং অতীন ঘোষ হিসাব সর্বসম্মতভাবে পাসের সভায় ছিলেন।
শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিছিল সংগঠন করা ক্লাবের দুই প্রাক্তন তারকা ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য এবং প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘুরিয়ে আক্রমণ করেন বাগান সচিব। বলেন, “ওই দু’জন এমন করছেন যে ওরা ছাড়া আর কেউ ক্লাবের জন্য রক্ত ঝরায়নি। ট্রফি জেতেনি। আরে রক্তটা দিয়েছে তো বাগান। ওরা তো টাকা নিয়েই খেলেছে।” কিছুক্ষণের মধ্যে অবশ্য পাল্টা তোপ দেগেছেন সুব্রত। “আমরা তো তবু রক্ত ঝরিয়েছি। অনেকে তো সেটা না করেই সব লুটেপুটে খেয়ে যাচ্ছে। আদালতে কাগজপত্র জমা দিচ্ছি, সব ফাঁস করে দেব।” অজুর্ন সুব্রতর লক্ষ্য যে, সচিব-সহ অন্য কর্তারা তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। বাগান সচিব এ দিন জানিয়ে দেন, আই এফ এ-র কাছে তারা পুরস্কার অর্থের ৪০ লাখ টাকা পান। ফেডারেশনের কাছে পান কুড়ি লাখ। “ওই ষাট লাখ টাকা পেলেই তো এ বারের আর্থিক সমস্যা মিটে যায়। তবে স্পনসর নিয়েও সমস্যা মিটে যাবে।”
চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরুকে দুমড়ে দিয়ে নর্ডি-কাতসুমিরা বসন্ত এনেছেন। ক্লাব কর্তারা কবে বিভেদ ভুলে একশো পঁচিশ বছরের উৎসবে মাতবেন সেটাই দেখার।