ফাইনালের প্রস্তুতিতে জার্মানি। শনিবার রিও-তে। ছবি: উৎপল সরকার
বিশ্বকাপের একেবারে অন্তিমে আমরা পৌঁছে গিয়েছি। আর প্রত্যেকেই ভাবছে, ফাইনালে আর্জেন্তিনাকে মাড়িয়ে দিয়ে চলে যাবে জার্মানি। এবং আমার প্রাক-টুর্নামেন্ট ভবিষ্যদ্বাণী লাতিন আমেরিকার কোনও দেশই এ বার কাপ জিতবে, ভুল প্রমাণিত হবে। ঠিক আছে। ব্যাপারটা মোটেই অত সহজ-সরল নয়, সবাই যেমনটা ভাবছে!
আমি আপনাদের কথা মেনে নিচ্ছি, জার্মানি কাপ জেতার ব্যাপারে ফেভারিট। কিন্তু সেটা ওদের একটাই ম্যাচের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। যেখানে ওদের বিপক্ষে ছিল দৃশ্যত ক্ষমাপ্রার্থী ব্রাজিলীয় ডিফেন্স! জার্মানদের সেমিফাইনালের অর্ধেক দেখিয়েছিল আলজিরিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয় রাউন্ডে। বিপক্ষের জমাট রক্ষণ আর ইতিবাচক লড়াইয়ের জাঁতাকলে ওদের চিড়েচ্যাপ্টা হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। খানিকটা অনভিজ্ঞতা আর শটগুলো এলোমেলো হওয়ায় সে দিন আলজিরিয়ার পক্ষে সম্ভব হয়নি জার্মানিকে বার্লিনের বিমান ধরানোর।
জার্মানি-আর্জেন্তিনা ম্যাচ নিয়ে আমি অনেক লেখালেখি পড়ছি। আমার কাছে দু’দলের কুড়ি বার মুখোমুখিতে আর্জেন্তিনার ৯-৬ এগিয়ে থাকা আর বাকি পাঁচটা ম্যাচ ড্রয়ের পরিসংখ্যানটা বেশ তাৎপর্যের। কারণ, কুড়িটার মধ্যে ছ’টা ম্যাচ বিশ্বকাপে খেলা হয়েছে। যার মধ্যে র্জামানি চারটে জিতেছে। দু’টো আবার কাপ ফাইনালে। যেখানে দু’দেশ একবার করে জয়ী। অর্থাৎ বিশ্বকাপে জার্মানির রেকর্ড ভাল। কিন্তু দু’দলের মধ্যে শেষ সাক্ষাতে আর্জেন্তিনা ৩-১ জিতেছে একটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে।
সুতরাং রবিবারের চুড়ান্ত যুদ্ধের বেশ বড় ইতিহাস আছে। এবং আমি কোনও মতেই সাদা-নীল জার্সিদের উপর থেকে আশা ছাড়তে রাজি নই।
আর্জেন্তিনার পক্ষে আমার আশার কারণ, জার্মান আক্রমণের সময় সাদা-নীল জার্সি ঠিক সময়ে পিছনে নেমে আসবে। যে ভাবে ঘানা কিংবা আলজিরিয়া মুলারদের হতাশ করে তুলেছিল।
আমি এটাও পড়লাম, জার্মানরা ভেবে নিয়েছে, ডাচরা সেমিফাইনালে মেসিকে আটকে দিয়েছিল। এবং এখন ওরাও মেসিকে আটকানোর স্ট্র্যাটেজি নিজেদের মতো করে বানাচ্ছে। ভাল কথা। তবে সারাক্ষণ মেসিকে নিয়েই ভাবাটাও কিন্তু ওদের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। সেক্ষেত্রে আগেরো আর ইগুয়াইনের মতো অ্যাটাকারদের জার্মানরা পাত্তা না দেওয়ার মহাভুল করে বসে! আর্জেন্তিনার শেষ কয়েকটা ম্যাচে আগেরো-ইগুয়াইন, দু’জনেই কিন্তু নিজেদের ফর্মে ফেরার পুরোপুরি ছাপ রেখেছে।
অবশ্যই মেসি আপন ইতিহাস গড়ার শেষ সিঁড়িতে এখন দাঁড়িয়ে। গত দু’দশক যাবত বিশ্বকাপ ফাইনালগুলো খুব হাড্ডাহাড্ডি হয়েছে। ফয়সালা হয়েছে একচুলের রেজাল্টে। যে ব্যাপারটা কিন্তু এত লেখালেখি পড়ার মধ্যে কোথাও আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু গত কুড়ি বছরের বিশ্বকাপ ফাইনাল ধরলে, মানে ইতালিয়া’৯০ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১০ ছ’টা কাপ ফাইনালে মোট গোল হয়েছে মাত্র ন’টা। অথচ তার আগে লন্ডন’৬৬ থেকে মেক্সিকো’৮৬ পর্যন্ত কাপ ফাইনালে মোট গোলের সংখ্যা ২৭।
এর কারণ গত বছরের পর বছর ধরে ফুটবলে ডিফেন্সের সবচেয়ে উন্নতি ঘটেছে। জমাট থেকে জমাটতর হয়েছে। সুতরাং আজ যদি মেসি একটা মারাদোনা-টাইপ চেষ্টায় একক কৃতিত্বে গোল করে আর্জেন্তিনাকে বিশ্বকাপ এনে দিতে পারে, তা হলে ফুটবলের বরপুত্রের পাশে আরামসে বসে যাবে।
সে জন্য আর্জেন্তিনার জন্য আমার প্রেসক্রিপশন মাঠে ধৈর্য ধরো। শান্ত থাকো। আর ঠান্ডা মগজে জার্মানদের হতাশ করে তোলো। সাদা-নীল জার্সিদের গোলকিপার-সহ গোটা ডিফেন্সকে নক আউটে দুর্ধর্ষ দেখাচ্ছে। সুতরাং যদি নিজেদের দম থাকে ফাইনালকে পেনাল্টি শুটআউটে নিয়ে যাও!