আগ্রাসী। প্রস্তুতি ম্যাচে ওয়েন রুনি।
ব্রিটিশ ফুটবলের ‘ব্যাড বয়’ বলে তাঁর পরিচয় বহু দিনের। কেউ কেউ পল গাসকোয়েনের চরিত্রের সঙ্গে তাঁর প্রভূত মিল পান। এবং ওয়েন রুনি আজও এতটুকু পাল্টাননি!
ইংল্যান্ড স্ট্রাইকারের ‘বুলেট’ শটে এ বার আক্রান্ত ব্রিটিশ ফুটবলের দুই হেভিওয়েট প্রাক্তন। গ্যারি লিনেকার এবং পল স্কোলস।
ঘটনাটা কী?
কিছু দিন আগে দুই প্রাক্তন মিলে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন রুনির। স্কোলস বলে দিয়েছিলেন যে, রুনি নিজের সেরা ফর্ম বহু দিন হারিয়েছেন। ইংল্যান্ড ফুটবলের মেগা তারকার ঔজ্বল্য মোটেও আর আগের মতো নেই। লিনেকার আবার আরও চাঁছাছোলা। রুনির ফুটবলে বৈচিত্র তিনি খুঁজে পাননি এবং তাঁর মনে হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত রুনিকে বসাতে বাধ্য হবেন ইংল্যান্ড কোচ রয় হজসন।
যা নিয়ে ‘ব্যাড বয়’-এর বিস্ফোরণ শুরু হয়ে গেল। রুনি সোজাসুজি বলে দিলেন যে, স্কোলস-লিনেকার তাঁকে নিয়ে কী মনে করেন, তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। ও সব কথাবার্তায় পাত্তা দেওয়ার কারণও তিনি পাচ্ছেন না! “যারা সেট আপের বাইরে তাদের অত পাত্তা দিয়ে লাভ কী? যে যা খুশি বলতে পারে, কিন্তু আমি সে সব শুনি না,” চরম তাচ্ছিল্যে প্রত্যুত্তর পাঠিয়ে দিয়েছেন রুনি।
ঠিক কী বলেছিলেন লিনেকার? যা শুনে এত ক্ষেপে যাচ্ছেন রুনি? রুনি যে কোনও জায়গায় খেলে দিতে পারেন সেটা যেমন লিনেকার বলেছিলেন, সঙ্গে এটাও বলেছিলেন যে ইংল্যান্ডের ভাবা উচিত ওই নির্দিষ্ট জায়গায় রুনির চেয়েও ভাল প্লেয়ার আছে কি না। এবং লিনেকারের মনে হয়েছে, আছে! “রুনি ডান দিক, বাঁ দিক, ফরোয়ার্ড, মিডফিল্ড যে কোনও জায়গায় খেলে দেবে। কিন্তু দেখতে হবে ওই সমস্ত জায়গায় ওয়েনের চেয়ে ভাল কেউ আছে কি না? পরিবর্ত কিন্তু প্রচুর। আমরা স্টার্লিংকে এক দিকে খেলাতে পারি। অন্য দিকটায় লালানাকে রাখা যেতে পারে। ওয়েলবেক আছে, যে কি না অনেকটা জায়গা জুড়ে খেলতে পারে,” বলে দেন লিনেকার। যা চটিয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড ফুটবলের মহাতারকাকে। এতটাই যে, তিনি পাল্টা বলে দিচ্ছেন, “আমি শুনি সেই সব লোকের কথা যারা সেট আপের মধ্যে আছে। কোচিং সেট আপে যাদের দেখা যায়। আর কোনও টিমে কারও জায়গায়ই নিশ্চিত নয়। ম্যানেজার টিম করবেন। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন কে খেলবে না খেলবে।”
তবে মুখে এ কথা বলার পরেও শোনা যাচ্ছে, ইংল্যান্ড ম্যানেজার হজসনের উপর নাকি ভাল রকম চাপ সৃষ্টি করছেন রুনি। চাপ দিচ্ছেন, প্রথম এগারোয় তাঁকে রাখার জন্য। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসনের জমানায় খেলার সময় তাঁকে উইংয়ে নামানো নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন রুনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে দিয়েছিলেন, যে ভাবে তিনি খেলতে চান, যতটা দিতে চান, উইংয়ে খেলে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এ বার আর সে সব কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে না রুনির মুখ থেকে। বরং বলছেন, “আমি কোথায় খেলব, ঠিক করবে ম্যানেজার। যেখানে আমাকে নামানো হবে সেখানে খেলব। দেশের জন্য যেখানে খুশি আমি খেলতে রাজি।” মনে করা হচ্ছে, ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে গোল করলেও রিকি ল্যাম্বার্টকে নিয়ে হজসন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে থাকায় রুনি আর পছন্দের স্লটের দিকে যাচ্ছেন না।
কিন্তু এত কিছু করেও ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপটা জিতবে তো?
স্বেন গোরান এরিকসনের মনে হচ্ছে, পারবে না!
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন কোচ এ দিন পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, ব্রাজিলে ট্রফি জেতার কোনও সম্ভাবনা তিনি রুনিদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছেন না। শেষ আটে উঠতে পারলে সেটাই নাকি যথেষ্ট হবে! “জিতবে না, কোনও ভাবেই জিতবে না। কোয়ার্টার ফাইনাল বা তার চেয়ে বেশি কিছু হলেই মহাসাফল্য হিসেবে ধরতে হবে। বিশ্বকাপে প্রচুর টিম আছে যারা ইংল্যান্ডের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই ব্রাজিলে আমি কোনও আশা দেখছি না,” বলে দিয়েছেন ’০২ ও ’০৬ বিশ্বকাপের ইংল্যান্ড কোচ। তবে ইংল্যান্ডের কোনও আশা না দেখলেও, তাঁর পুরনো ছাত্রের উপর এখনও আস্থা আছে এরিকসনের।
তাঁর আমলেই দেশের জার্সিতে প্রথম খেলা ওয়েন রুনির। তিনিই রুনিকে ডাকতেন ‘ইংল্যান্ডের পেলে’ বলে। লিনেকার-স্কোলসরা ঝাঁঝরা করে দিলেও স্বেন গোরান এরিকসন আজও মনে করেন, আক্রমণে ড্যানিয়েল স্টারিজ টিমের এক নম্বর হলে কী হবে, রুনিকে প্রথম থেকেই নামাতে হবে। অবশ্যই নামাতে হবে। ‘ইংল্যান্ডের পেলে’-র যে আজও বিকল্প নেই রয় হজসনের টিমে!