দুরন্ত তামিম। স্কটল্যান্ড ম্যাচে। ছবি: এএফপি।
নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর দ্বীপ নেলসনে ২০১৫ বিশ্বকাপ বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে গেল। এখন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপের আর যে ক’টা খেলা বাকি সব হবে দেশের উত্তরাংশে— অকল্যান্ড, নেপিয়ার, ওয়েলিংটন, হ্যামিল্টনে। কিন্তু একসঙ্গে পাহাড় আর সমুদ্রে ঘেরা অপূর্ব প্রাকৃতিক নৈসর্গিক শহর নেলসনে এ বারের বিশ্বকাপ পর্ব কী রোমাঞ্চকর ভাবেই না শেষ হল!
চলতি বিশ্বকাপের রেকর্ডের ঝনঝনানির সঙ্গে তাল রেখে এ দিন বাংলাদেশ-স্কটল্যান্ডের মামুলি ম্যাচেও কত নজির। বাংলাদেশ বিশ্বকাপের ইতিহাসে তাদের সর্বোচ্চ রান (৩২২-৪) তুলে ম্যাচের ১১ বল বাকি থাকতে স্কটল্যান্ডকে হারাল ছয় উইকেটে। বিজিত স্কটিশরাও তিনশো রানের ইনিংস (৫০ ওভারে ৩১৮-৮) গড়ার পথে একটা রেকর্ড গড়েছে। তাদের ওপেনার কাইল কোয়েতজারের ১৩৪ বলে ১৫৬ রান বর্তমান যে কোনও টেস্ট না খেলিয়ে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ওয়ান ডে স্কোর। বাংলাদেশি ওপেনার তামিম ইকবালের এ দিনের ৯৫ রান আবার চল্লিশ বছরের বিশ্বকাপের ইতিহাসে তাঁদের দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। ২০০৭ বিশ্বকাপে যে ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাংলাদেশ হারিয়ে ক্রিকেটবিশ্বে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল, সেখানে মহম্মদ আশরাফুলের ৮৭-ই এত দিন ছিল তাদের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস।
তবে এ দিনের ম্যাচের সম্ভবত সবচেয়ে তাত্পর্যের হয়ে থাকবে, জেতার সুবাদে পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশের ৫ পয়েন্টে পৌঁছে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার দৌড়-সরণিতে ঢুকে পড়তে পারা। সাকিব-অল-হাসানরা এখন পুল এ-তে চার নম্বরে। পাঁচ নম্বরে থাকা ইংল্যান্ডের (চার ম্যাচে ২ পয়েন্ট) সঙ্গে আগামী ৯ মার্চ অ্যাডিলেডে বাংলাদেশের লড়াইটাই সম্ভবত ঠিক করে দেবে গ্রুপ থেকে চতুর্থ দল হিসেবে কারা নক আউটে উঠবে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, হয়তো ৯ মার্চের অ্যাডিলেডই ঠিক করে দেবে কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী কোন দল হবে? কারণ ধোনিদের অন্য পুলে শীর্ষে থাকার সম্ভাবনাই এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
কারণ, সে দিনের পরে নিজেদের পুলে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ শক্তিশালী এবং এই মুহূর্তে তুখোড় ফর্মে থাকা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। যে ম্যাচে মর্তুজার দলের জয়ের সম্ভাবনা খুব কম। বাংলাদেশকে নক আউটের পাড়ানি যা তুলে নেওয়ার ইংল্যান্ড ম্যাচেই তুলতে হবে। আবার বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের দিনই ১৩ মার্চ ইংল্যান্ডের শেষ ম্যাচ দুর্বল আফগানিস্তানের সঙ্গে। যে ম্যাচ থেকে মর্গ্যানদের দুই পয়েন্ট পাওয়া প্রায় নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড যদি আগের ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে রাখতে পারে তা হলে মোট ছয় পয়েন্ট নিয়ে তারাই নক আউটে উঠবে।
হয়তো এ রকম জটিল অঙ্কের হিসাব মাথায় রেখেই এ দিন ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা বলেছেন, “ছেলেরা আজ সত্যিই খুব ভাল খেলেছে। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা। যে কোনও দলের বিরুদ্ধেই তিনশো রান তাড়া করা কঠিন। কিন্তু তামিম অসাধারণ শুরু করেছিল আমাদের ইনিংস। তার পরে মিডল ওভার্সে মুশফিকুর আর শেষ দশ-বারো ওভারে সাকিবও দুর্দান্ত ব্যাট করল। তবে আমাদের বোলিং এখনও প্রত্যাশিত মানে পৌঁছতে পারেনি। বিশেষ করে যদি পরের বিগ ম্যাচের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপারটা ভাবি। আমাদের ব্যাটিং ভাল হলেও ইংল্যান্ডকে হারাতে হলে ব্যাটিং-বোলিং দু’টোই ভাল করা দরকার, এমনকী ফিল্ডিংও। সোজা কথা বিগ ম্যাচ জিততে হলে আপনাকে ক্রিকেটের তিন বিভাগেই আন্তর্জাতিক মান ছুঁতে হবে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে আমরা সেই চেষ্টাই করব। নিজেদের সেরাটা দেব প্রতিটা ক্ষেত্রেই। কারণ ওটাই যে নক আউটে উঠতে আমাদের আসল ম্যাচ সেটা ছেলেরা নিশ্চয়ই এখনই বুঝতে পারছে।”
সংক্ষিপ্ত স্কোর
স্কটল্যান্ড ৫০ ওভারে ৩১৮-৮ (কোয়েতজার ১৫৬, মমসেন ৩৯, তাস্কিন ৩-৪৩, নাসির ২-৩২)
বাংলাদেশ ৪৮.১ ওভারে ৩২২-৪ (তামিম ৯৫, মাহমুদুল্লা ৬২, মুশফিকুর ৬৯, সাকিব ৫২ নটআউট, ডাভি ২-৬৮)