এ যেন বার্সলোনা নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কোনও কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প! ক্লাবের স্বর্ণযুগকে ফিরিয়ে আনতে এখন থেকে শৃঙ্খলার শিকলে বেঁধে ফেলা হবে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদের। যে নিয়ম ভাঙলে ক্লাব থেকে বহিষ্কারও করা হতে পারে সুপারস্টার ফুটবলারদের।
জেরার্দো মার্টিনোর ঝিমিয়ে পড়া এই দলকে আবার খেতাব জেতানোর রাস্তায় ফিরিয়ে আনতে কড়া দাওয়াই আমদানি করছেন বার্সার নতুন ‘হেডস্যার’ লুই এনরিকে। প্রচারমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বার্সেলোনার ফুটবলারদের জন্য যে নিয়মাবলী তিনি তৈরি করেছেন, সেটা মোটামুটি এ রকম:
খাবারের সঙ্গে মদ্যপান চলবে না। অনুশীলন শেষে ক্লাবে একসঙ্গে খেতে বসতে হবে সবাইকে। ম্যাচের দু’দিন আগে থেকে রাত বারোটার বেশি বাইরে কাটানো যাবে না। অনুশীলন শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগে ফুটবলারদের মাঠে আসতে হবে।
গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহার করে অনেক সময়ই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন ফুটবলাররা। বহু বার টুইটার বা ফেসবুকে ক্লাবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক ফুটবলার। সেই বিতর্ক এড়াতেই এ বার নতুন ফতোয়া, টুইটার বা ফেসবুকে বিতর্কিত কোনও বিষয় বা মন্তব্য পোস্ট করা চলবে না। ভাল জিনিসই পোস্ট করতে হবে ফুটবলারদের। যে সমস্ত ফুটবলারের অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস পছন্দ, তাঁদেরও হতাশ হতে হবে। অ্যাল্পাইন স্পোর্টস অর্থাৎ স্কিইং বা বাঞ্জি জাম্পিং কিছুই করা যাবে না। ক্লাবের কোনও অনুষ্ঠানে গেলে আর হিপ-হপ জুতো নয়। বরং ক্লাবের অনুমোদিত মারচেন্ডাইজই পরতে হবে ফুটবলারদের। আর নিয়ম ভাঙলে? সঙ্গে সঙ্গে জরিমানা হবে ১০০০ ইউরোর। কোনও সতীর্থ বা কোচের সঙ্গে খারাপ ভাবে কথা বলা যাবে না। দোষ আবার যত গুরুতর হবে, জরিমানা তত বাড়বে (৬০০০ ইউরো পর্যন্ত)।
এনরিকের এই কঠোর শৃঙ্খলাবোধের সঙ্গে পরিচিত গোটা ফুটবলবিশ্ব। রোমায় থাকাকালীন কোনও ধরনের অভব্য আচরণ বরদাস্ত করতেন না প্রাক্তন স্প্যানিশ তারকা। এ হেন কোচের হাতে পড়ে খুব তাড়াতাড়ি উন্নতি করবে বার্সা, সে কথাই মনে করছেন দলের নতুন সংযোজন রাফিনহা। বলে দিচ্ছেন, “এনরিকে এমন একজন কোচ যাঁর মানসিকতা খুব লড়াকু। ওঁর কঠোর শৃঙ্খলাবোধ দলের জন্য খুূব ভাল ফল আনবে।”
বার্সেলোনার মতো ক্লাবে নিয়মের এই কড়াকড়ি দেখে আবার ব্রিটিশ মিডিয়া অন্য প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। দলের নতুন সংযোজন লুই সুয়ারেজকে সামলাতেই এই নিয়মের বেড়াজাল কিনা, উঠছে সে প্রশ্ন। অতীতে সুয়াজের যে সব ক্লাবে গিয়েছেন, সেখানেই কোনও না কোনও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। এ বার কী হবে? বুকিদের এখন থেকেই বাজি লাগানো শুরু হয়েছে, বার্সেলোনাতেও সুয়ারেজ কোনও না কোনও সমস্যায় পড়বেনই।
মরসুম শুরু হতে কয়েক সপ্তাহ বাকি থাকলেও, এখন থেকেই জোরদার ভাবে ফর্মেশন গড়া চলছে ক্লাবে। কী ভাবে এক দলে মেসি, নেইমার, সুয়ারেজদের মতো তারকাদের আঁটানো যায়, সেই নীল নকশা কষতেই ব্যস্ত এনরিকে। জল্পনা চলছে, ৩-২-৩-২ ফর্মেশনে দল সাজাবেন বার্সার নতুন কোচ। গোলকিপার টার স্টেগেন অথবা ক্লডিও ব্র্যাভো। সেন্টার ব্যাকে জেরার পিকের সঙ্গে খেলতে পারেন নতুন তারকা জেরেমি ম্যাথেউ বা মার্ক বাত্রা। ফুলব্যাকে ইয়র্দি আলবা। মাঝমাঠে থাকতে পারেন জেভিয়ার মাসচেরানো ও সের্জিও বুস্কে। ডিপ মিডিও ভূমিকায় খেলবেন ক্রোয়েশিয়ার তারকা ইভান রাকিটিচ। আর ফরোয়ার্ডে থাকছেন সেই মেসি-নেইমার-সুয়ারেজের ত্রয়ী।
এনরিকের কঠোর মানসিকতার পিছনে উঠে আসছে বিশেষ একটি নাম-- ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি কোচ স্যর ববি রবসন। যাঁর অধীনে এক বছর খেলেছিলেন এনরিকে। বার্সা কোচ বলেন, “প্লাস্টিক কাপ দিয়ে ট্যাকটিক্স বোঝাতেন রবসন। এক মরসুম রবসন কোচ থাকলেও আমরা অনেক খেতাব জিতেছিলাম। কঠিন পরিস্থিতিতেও ফুটবলারদের এককট্টা করতে পারতেন রবসন। ওঁর থেকে অনেক কিছু শিখেছি আমি।”