ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম ঐতিহ্যশালী ক্লাব। যাদের ট্রফি ক্যাবিনেট দেখে ঈর্ষা হওয়ার কথা যে কোনও ক্লাবের। অথচ বর্তমানে সেই ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ভাগ্যে হার আর লজ্জা ছাড়া কিছু জুটছে না। ইপিএলের খেতাব দৌড়ে এক সময়কার একচ্ছত্র আধিপত্য তো নেই-ই, ট্রফির অন্যতম দাবিদারের তালিকাতেও আজকাল ম্যাঞ্চেস্টারকে রাখা যাচ্ছে না। তার উপর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব থেকেও আরও এক বার ছিটকে গেল তারা। আর এত কিছুর পরে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের কোচ লুইস ফান গল হুঙ্কার ছেড়ে রাখলেন, ক্লাবকে যদি কেউ নেতৃত্ব দিতে পারেন তো সেই লোক তিনিই। অন্য কেউ নন।
গত মঙ্গলবার উল্ফসবার্গে ৩-২ হারে ফান গলের ম্যাঞ্চেস্টার। যে ট্রফি এর আগে তারা তিন-তিন বার জিতেছে। হারের পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন ডাচ কোচের সমালোচকেরা। পল স্কোলস নিজেই নিজের ক্লাবকে ‘গড়পরতা’ বলে ব্যঙ্গ করেন। তাঁর প্রাক্তন ক্লাব সতীর্থ রিও ফার্দিনান্দ আরও এক পা এগিয়ে বলে দেন, ইউরোপা লিগে নেমে যাওয়াটা ক্লাবের কাছে চূড়ান্ত লজ্জার।
এ সবের পরে নিজের সাপ্তাহিক সাংবাদিক সম্মেলনে অবশ্য ‘ভাঙব তবু মচকাব না’ মূর্তিতে আবির্ভূত হন ফান গল। তাঁর কোচিং ক্ষমতা নিয়ে যাবতীয় প্রশ্ন, যাবতীয় সমালোচনা উড়িয়ে দেন। ম্যাঞ্চেস্টারের হয়ে তিনি কি আদৌ ট্রফি জিততে পারবেন? এ ব্যাপারে কি তাঁর মনে কোনও সন্দেহ নেই? শুনে ফান গল বলে দেন, ‘‘না, আমার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।’’ তবে ফান হল এটুকু স্বীকার করে নেন যে, প্রত্যাশার চাপ ঘাড়ে নিয়ে খেলতে খেলতে তাঁর প্লেয়ারদের বেশ নড়বড়ে অবস্থা। ‘‘খেলাধুলোয় কেউ হারতে পারে। আবার জিততেও পারে। প্লেয়ার বা ম্যানেজার হিসেবে সেটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। তবে হ্যাঁ, সব সময় প্রচুর খাটতে হয়। যেটা আমার প্লেয়াররা করে যাচ্ছে। যা যা করা সম্ভব আমাদের পক্ষে, সব আমরা করছি,’’ বলে ফান গল যোগ করেছেন, ‘‘আমাদের সমস্যা হয়ে যাচ্ছে প্রত্যাশার চাপ পূরণ করাটা। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবে প্রত্যাশা যে কতটা হতে পারে, সবাই জানে। এটাই আমাদের সমস্যা।’’
তা হলে কি এ বার শুধু ইউরোপা লিগ জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে? প্রশ্নের খোঁচায় দৃশ্যত বিরক্ত ফান গল প্রায় খিঁচিয়ে ওঠেন, ‘‘শুধু? এটা কি আপনাদের খুব কম কিছু মনে হচ্ছে? আমার তো সে রকম মনে হচ্ছে না।’’ তার পর বলেন, ‘‘আয়াক্সে প্রথম মরসুমেই ইউরোপা লিগ জিতেছি। সেটা নিয়ে আমার যথেষ্ট গর্ব আছে। আমার কাছে ইউরো লিগ খুব বড় একটা টুর্নামেন্ট।’’ সহজ গ্রুপ পেয়েও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে যাওয়াটা তাঁর টিমের আত্মবিশ্বাস তুবড়ে দিতে পারে, সেই দুশ্চিন্তা অবশ্য ভাল মতোই রয়েছে ম্যাঞ্চেস্টার কোচের। ‘‘আমি ওদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করি সব সময়। কিন্তু তার সঙ্গে প্লেয়ারদের নিজেদেরও সেই কাজটা করতে হবে। ওরা সবাই পেশাদার। আমাদের যুদ্ধ করার মতো অনেক কিছু আছে। ইপিএলের এক নম্বরে আসার অনেক কাছে আমরা। আমরা এফ এ কাপের জন্য লড়তে পারি। ইউরোপার জন্য লড়তে পারি,’’ বলছেন ফান গল।
তাঁর জন্য অবশ্য আরও খারাপ খবর রয়েছে। গত সপ্তাহান্তে ওয়েস্টহ্যামের সঙ্গে ০-০ ড্র ম্যাচে ঝামেলা করার জন্য তিন ম্যাচের জন্য নির্বাসিত টিমের তারকা বাস্তিয়ান সোয়াইনস্টাইগার। আজ, শনিবার বোর্নমাউথের বিরুদ্ধে চোট সারিয়ে মর্গ্যান স্নেইডারলিন ফিরছেন। তবে চোট-তালিকায় এখনও রয়েছেন ওয়েন রুনি, মার্কোস রোখো, ফিল জোন্স, অ্যান্ডার হেরেরা, লুক শ এবং আন্তোনিও ভ্যালেন্সিয়া।