প্রাক্তন গোলকিপার চান, ধুলোয় লুটোক এ বার ব্রাজিলের ফুটবল-দম্ভ

‘ভয় একটাই, রবেনরা না প্রথম গোল করে দেয়’

অন্যদের চেয়ে তাঁর ইংরেজির অবস্থা সামান্য ভাল। ভাঙা ভাঙা বলতে পারেন। তা বলে একটা গোটা ইন্টারভিউ ফোনে দেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। মঙ্গলবার দুপুরে তাই কোপাকাবানা ধারের তাঁর হোটেলে বেলো হরাইজন্তে থেকে নেওয়া ফোন সাক্ষাৎকারে সাহায্য করলেন দিয়েগো মারাদোনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তাঁর এক সময়ের ম্যানেজার! যিনি ইংরেজিটা বেশ ভাল বলেন। প্রাক্তন আর্জেন্টাইন গোলকিপার দু’চারটে প্রশ্নের উত্তর দিলেন নিজে। কিন্তু বেশির ভাগটাই তাঁর এই আর্জেন্তিনীয় বন্ধুর মাধ্যমে স্প্যানিশ থেকে ইংরেজিতে তর্জমা হয়ে।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

বেলো হরাইজন্তে শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০২:৪৬
Share:

অন্যদের চেয়ে তাঁর ইংরেজির অবস্থা সামান্য ভাল। ভাঙা ভাঙা বলতে পারেন। তা বলে একটা গোটা ইন্টারভিউ ফোনে দেওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। মঙ্গলবার দুপুরে তাই কোপাকাবানা ধারের তাঁর হোটেলে বেলো হরাইজন্তে থেকে নেওয়া ফোন সাক্ষাৎকারে সাহায্য করলেন দিয়েগো মারাদোনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তাঁর এক সময়ের ম্যানেজার! যিনি ইংরেজিটা বেশ ভাল বলেন। প্রাক্তন আর্জেন্টাইন গোলকিপার দু’চারটে প্রশ্নের উত্তর দিলেন নিজে। কিন্তু বেশির ভাগটাই তাঁর এই আর্জেন্তিনীয় বন্ধুর মাধ্যমে স্প্যানিশ থেকে ইংরেজিতে তর্জমা হয়ে। বুধবারের ম্যাচ দেখতে সাও পাওলো উড়ে যাচ্ছেন সের্জিও গয়কোচিয়া। তার আগে এবিপি-কে যা বললেন...

প্রশ্ন: মেসি না মারাদোনা?
গয়কোচিয়া: এ ভাবে বলা যায় না (মনে হল প্রশ্নটা খুব পছন্দ হয়নি)। দু’জনে দু’রকমের। মানুষ হিসেবে একেবারে আলাদা। দিয়েগো হল প্রাণখোলা, উদ্দাম। এক্সট্রোভার্ট। মেসি খুব চাপা, লাজুক। দু’জনেই দুটো ভিন্ন প্রজন্মের মহানায়ক। নিজের নিজের টিমের কাছে দৃষ্টান্ত।

প্র: আপনাদের সেই নব্বইয়ের বিশ্বকাপ টিমে যদি মেসি থাকতেন! তা হলে তো গোলপোস্টের তলায় আপনি স্রেফ রিল্যাক্স করতে পারতেন, না কী?
গয়কোচিয়া: মেসি-দিয়েগো এক সঙ্গে! ওরে বাবা! নাহ, আমার মনে হয় দু’জনে এক সঙ্গে খেলত না (হাসি)।

প্র: কেন? ইগো সমস্যা হত?
গয়কোচিয়া: আরে না না (প্রচণ্ড হাসি)। বিলার্দোর নাম শুনেছেন?

প্র: কেন শুনব না! বিলার্দো তো কলকাতায়ও এসেছিলেন!
গয়কোচিয়া: সাংঘাতিক দাপুটে লোক। বিলার্দো আমার মনে হয় বলতেন, বাড়াবাড়ির একটা সীমা আছে! ওরা দু’জন এক টিমে খেলবে কী! ম্যাচটাই তো তা হলে হাস্যকর হয়ে যাবে বলে দু’জনকে দুটো হাফে খেলাতেন (হাঃ হাঃ হাঃ)।

প্র: ঠিক আছে। মেসি না রোনাল্ডো?
গয়কোচিয়া: মেসি।

প্র: কেন?
গয়কোচিয়া: কারণ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এক জন দুর্ধর্ষ প্লেয়ার হয়েও একা টিমকে জেতাতে ওর একটু জমি লাগে। সব বড় প্লেয়ারেরই লেগেছে। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু মেসি এই জন্যই বিশ্বশ্রেষ্ঠ যে, পায়ের জঙ্গলকেও ভেদ করে গোল করে দিতে পারে। গোটা মাঠের যে কোনও জায়গায় যদি ও এক ইঞ্চিও পায়, সেটাই ওর খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। হয় নিজে গোল করে দেবে বা দারুণ পাসে কাউকে দিয়ে করিয়ে দেবে।

প্র: মেসি বনাম নেদারল্যান্ডস তা হলে মেসি!
গয়কোচিয়া: এটা আমি বলতে পারছি না (এ বার হাসি সম্পূর্ণ উধাও)। ম্যাচ ফিফটি-ফিফটি। আমার শুধু একটাই ভয়, রবেনরা যদি প্রথম গোল করে ফেলে, তখন আমরা কি ম্যাচে ফিরতে পারব? গোটা টুর্নামেন্টে এই পর্যন্ত আর্জেন্তিনা গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়েনি। সেমিফাইনালের মতো টেন্সড ম্যাচে যদি সেটা হয়, টিম সামলাতে পারবে তো? আমি জানি না।

প্র: একটু পরের ম্যাচটা? ব্রাজিল-জার্মানি!
গয়কোচিয়া: একই। ফিফটি-ফিফটি। যদিও আমি আপ্রাণ চাইব ব্রাজিল জিতুক।

প্র: বাবা এ রকম তো দেখা যায় না! পাঁড় আর্জেন্তিনীয় চাইছেন ব্রাজিলের সাফল্য!
গয়কোচিয়া: এই জন্যই চাইছি যাতে ফাইনালে ওদের সামনে পাওয়া যায়। নব্বইয়ের বিশ্বকাপ ম্যাচে আমরা ওদের হারিয়েছিলাম। আমি ওই ম্যাচটায় খুব ভাল খেলি। কিন্তু সেই হারানোর পরেও দেখি ব্রাজিলের বাকতাল্লা আর বন্ধ হয় না। এ বার নিজের দেশে ফাইনালে হারিয়ে ওদের জিজ্ঞেস করতে চাই, হ্যাঁ রে তোরা যেন ক’বার বিশ্বকাপ জিতেছিস?

প্র: আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং অভিভাবকতুল্য মারাদোনা বলেছেন, একা মেসির ওপর এত চাপ পড়ে যাওয়াটা খুব অন্যায় হচ্ছে। বাকিদেরও খেলতে হবে। টিম আর্জেন্তিনাকে খেলতে হবে।
গয়কোচিয়া: দিয়েগোকে আমি অন্য চোখে দেখি। ও শুধু চিরকালীন আইডলই নয়, একেবারে অন্য মেজাজের মানুষ! আমরা এক সঙ্গে টিভি শো-ও হোস্ট করেছি। কিন্তু এই জায়গায় আমি একমত নই। বিশ্বসেরা ফুটবলার যদি টিমে থাকে, টিম তো তাকে বেশি ব্যবহার করবেই। সে যদি আর পাঁচ জনের চেয়ে আলাদা হয়, তার ওয়ার্কলোডটাও তো আলাদা হবে, তাই না?

প্র: নব্বইয়ের বিশ্বকাপে আপনার পরপর ম্যাচে পেনাল্টি বাঁচানো, বিশেষ করে ইতালিকে বিশ্বকাপের বাইরে করে দেওয়াটা আজও লোকমুখে ফেরে।
গয়কোচিয়া: কী লাভ হল! ফাইনালে ব্রেহমের পেনাল্টিটা তো বাঁচাতে পারিনি। আজও ওই পেনাল্টি গোলটা আমার জীবনের একটা কষ্ট বুকে নিয়ে বেড়ানো! ভুলতে পারি না!

প্র: বলছিলাম এ বারের বিশ্বকাপে ম্যানুয়েল নয়্যার এই যে ট্রেন্ডটা চালু করলেন সুইপার-গোলকিপার, সেটা সম্পর্কে আপনার কী মত?
গয়কোচিয়া: ম্যানুয়েল নয়্যার অবিশ্বাস্য। গোলকিপারদের দুটো হাত খুব ভাল আর বিশ্বস্ত হতে হয়। ওর দুটো পা-ও একই রকম ভাল। ওর পজিশনিং খুব ভাল। আলজিরিয়া ম্যাচে পা দিয়ে যতগুলো ও স্ট্রোক করল, ডিফেন্ডাররাও একটা ম্যাচে এতগুলো করে না। এখন ফুটবলের নিয়ম যেমন বদলেছে তাতে একটা গোলকিপার যদি দুটো কাজই করতে পারে, তা হলে টিম আর কী চাইতে পারে? ম্যানুয়েল থাকা মানে সে তো বারো জন নিয়ে নামছে। কোনও সন্দেহ নেই বিশ্বের এক নম্বর গোলকিপার এখন ও-ই। বেস্ট অব দ্য বেস্ট।

প্র: মেক্সিকান গোলকিপারকে কেমন দেখলেন? গুলেরমো ওচোয়া?
গয়কোচিয়া: খুব ভাল ছেলে। আমরা এক সঙ্গে কাজও করেছি (মনে হল কখনও গয়কোচিয়া ওঁর ব্যক্তিগত ট্রেনার ছিলেন)। খুব পরিশ্রম করেছে ওচোয়া। আমি বলব ও এ বারের বিশ্বকাপের সেরা চমক! আমি খুব খুশি যে এত দিন পরে গোটা বিশ্ব ওর কদর করছে।

প্র: আপনাকে আর আটকাব না। শেষ প্রশ্ন, পেলে না মারাদোনা?
(দু’তিনটে প্রশ্ন হল দোভাষী বন্ধুর থেকে ফোন নিয়ে নিজেই কথা বলছেন গয়কোচিয়া। এই প্রশ্নটা শোনামাত্র হাসতে শুরু করে দিলেন প্রচণ্ড।)
গয়কোচিয়া: পেলে-পেলে-পেলে কে পেলে (দমকা হাসি। তার পর হাসি থামিয়ে) থাক এটা আর লিখবেন না। এটা যেন মনে না হয় যে পেলেকে কোনও রকম অশ্রদ্ধা করছি। এটা জাস্ট চ্যাংড়ামি করে বলা। উনি এত বড় ফুটবলার। কিন্তু...

প্র: কিন্তু কী?
গয়কোচিয়া: কিন্তু এটাই যে, দিয়েগোর নামের পাশে আর কারও নাম বসে না ভাই!

Advertisement

সাও পাওলো থেকে....

Advertisement

আর্জেন্তিনা

• চোট সারিয়ে প্রথম দলে ফিরতে পারেন সের্জিও আগেরো।

• দি’মারিয়ার জায়গায় পাঁচ ফুটবলার কোচের ভাবনায় থাকলেও নামতে পারেন এঞ্জো পেরেজ।

• লাভেজ্জি আবার হয়তো রিজার্ভ বেঞ্চে।

• ডিফেন্সে রোজোর জায়গায় খেলতে পারেন বাসান্তা।

নেদারল্যান্ডস

• দে জং ছাড়া সবাই ফিট।

• বিশ্বকাপে তিন গোল করা রবেন ও ফান পার্সিকে নিয়েই ফরোয়ার্ড লাইন সাজাবেন ফান গল।

• টাইব্রেকারে ক্রুল বাজিমাত করলেও প্রথম দলে থাকবেন সিলেসেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement