তীরে এসে ভরাডুবি। রবিবার ইডেনে বাংলা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
ইডেনের সামনে জনা পঞ্চাশেক মানুষের ভিড়। অন্ধকার নামছে। ল্যাম্পপোস্টগুলো জ্বলে উঠেছে। মনোজ তিওয়ারি, অশোক দিন্দা, লক্ষ্মীরতন শুক্ল, ঋদ্ধিমান সাহারা ইডেন থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় সমর্থকদের ফটো তোলার আবদার আসছে। কিন্তু সমর্থকদের সেল্ফিতে নায়কের মুখে হাসি নেই। থাকলেও প্রাণহীন, ফ্যাকাশে।
থাকবে কী করে! বাংলার রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার রবিবাসরীয় মহাযুদ্ধের ‘দ্য এন্ড’ হল যে চূড়ান্ত আক্ষেপে। প্রায় ‘আশা নেই’ থেকে বাংলার ছ’পয়েন্টের অক্সিজেনের লড়াই থেমে গেল কাপ আর ঠোঁটের দূরত্বে এসে। ২৬৫ তাড়া করতে নেমে রেলওয়েজের ইনিংস এসে থামল ১৯৮-৮। রেল তিন। বাংলা পেল এক পয়েন্ট।
এত কাছাকাছি এসেও হল না কেন? হল না, কারণ বাংলা সামান্য ঝুঁকি নেওয়ার সাহসটাই দেখাতে পারল না। সকালে দু’ ঘণ্টা ব্যাট করে হয়তো এক পয়েন্ট ঘরে তুলল, কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালের স্বপ্নটা শেষ করে দিল। বাংলা ২৯৮-৮-এ ইনিংস ছাড়ায় রেলের সামনে অঙ্কটা ছিল ৬৩ ওভারে ২৬৫। যা দেখে রেলওয়েজও অবাক। রেল ক্যাপ্টেন মহেশ রাওয়াত তো বলেই দিলেন, “অত রানের টার্গেট দেখেই আমরা ড্রয়ের কথা মাথায় রেখে খেলছিলাম।” কেন ঘণ্টাখানেক আগে ডিক্লেয়ার করা হল না? বিশেষ করে যে পিচে স্পিনাররা কিছুটা হলেও সাহায্য পাচ্ছেন? বাংলা কোচ অশোক মলহোত্রের যুক্তি, “আগ বাড়িয়ে শহিদ হয়ে তো লাভ নেই। আগে এক পয়েন্ট তো নিশ্চিত করতে হবে।” কোচের সঙ্গে একমত অধিনায়কও। লক্ষ্মী বললেন, “বোলারদের দিকটাও তো দেখতে হবে। বোর্ডে রান থাকলে আরও খোলামনে বল করতে পারবে। সেটাই ভাবনা ছিল।”
ওই সময়ের মধ্যেই অবশ্য রেল চাপে পড়ে গিয়েছিল বাংলার স্পিনারদের দাপটে। অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় (৩-৪০), ইরেস সাক্সেনা (২-৩৫), সৌরাশিসরাই (১-৫৬) তুলে নেন ছ’উইকেট। ইরেসকে আনা হল ১৮তম ওভারে। অমিত আসেন আরও পরে। ৩৪তম ওভারে। তখন লক্ষ্মী আর দিন্দার বোলিং আক্রমণে রেল ৪৪-২। অবশ্য রেলওয়েজের দুই ওপেনার তার আগে দু’বার জীবন পান বাংলা ক্যাচ ফস্কানোয়।
এক সময় তিন ওভারে দু’উইকেট তুলে ম্যাচ জেতার সুযোগ ছিল বাংলার। দিনের সেরা স্পিনার অমিতকে আরও আগে আক্রমণে আনলে ম্যাচটা আগেই শেষ হওয়ার একটা সুযোগ ছিল। কেন আনা হয়নি? লক্ষ্মীর যুক্তি, “আমাদের শুরুর দিকের বোলিং ভাল হচ্ছিল। নতুন বলে দুই উইকেট পড়েও যায়। তাই স্পিনারদের পরে আনাটাই ঠিক করি।”
গ্রুপের শেষ ম্যাচে জুনিয়রদের সুযোগ দেওয়ার কথা মাথায় আছে নির্বাচকদের। দিনের শেষে অবশ্য সত্যিটা একটাই। সামান্য সাহস দেখাতে পারলে বাংলার স্বপ্নটা এ বারের মতো শেষ হয়ে যেত না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ২৬৮ ও ২৯৮-৮ ডি. (শ্রীবত্স ৭৭ ন.আ, অশিস ৩-৪০)
রেলওয়েজ ৩০২ ও ১৯৮-৮ (কর্ণ ৪৮, আমিত ৩-৪০)।