পুরসভার ‘বার্থ সার্টিফিকেট’ জাল করে বয়স কমিয়ে দীর্ঘদিন ধরে খেলার অভিযোগ উঠেছে শিলিগুড়ির এক টেবল টেনিস খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ, শিলিগুড়ির ওই খেলোয়াড় ইয়ুথ বিভাগে অলিম্পিকেও খেলেছেন জন্মের সেই শংসাপত্রের ভিত্তিতেই। যাতে তাঁর বয়স ২ বছর কমিয়ে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ। পুরসভার দেওয়া বার্থ সার্টিফিকেট জেরক্স করে তিনি বয়স কমিয়েছেন বলে সন্দেহ পুর আধিকারিকদের। আরেক জন খেলোয়াড়ের জন্মের একাধিক শংসাপত্র পাওয়া গিয়েছে। পুরসভার শংসাপত্র ছাড়া তিনি নকশালবাড়ি ব্লক থেকে বয়স কমিয়ে আরেকটি শংসাপত্র তৈরি করিয়েছেন। সরকারি হাসপাতাল থেকেও জাল বার্থ সার্টিফিকেট তৈরির অভিযোগ উঠেছে অপর এক খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে। জাল বার্থ সার্টিফিকেট তৈরি করে বয়স ভাঁড়িয়ে খেলার অভিযোগ পেয়ে সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে। বিষয়গুলি তারা খতিয়ে দেখবেন বলে অভিযোগকারীরা আশাবাদী। ফেডারেশনের কাছে তারা ওই সমস্ত খেলোয়াড়দের নথিও চেয়েছেন। সেই মতো ফেডারেশনের তরফে রাজ্যের দুই টেবল টেনিস সংস্থাকেই খেলোয়াড়দের জন্মের শংসাপত্র জমা করতে বলা হয়েছে।
নর্থ বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের সচিব সুব্রত রায় বলেন, “ফেডারেশন যে সমস্ত নথি আমাদের কাছে চেয়েছে তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। খেলোয়াড়দের জন্মের শংসাপত্র নেওয়ার সময় তাদের লিখিত বয়ানও নেওয়া হয়। তার পরেও যদি কেউ জন্মের জাল শংসাপত্র দাখিল করে তাঁর দায় অ্যাসোসিয়েশন নেবে না।”
দীর্ঘদিন ধরেই নকল বার্থ সার্টিফিকেট দিয়ে বয়স ভাঁড়িয়ে খেলার অভিযোগ রয়েছে। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ফেডারেশনের তরফে খেলোয়াড়দের জন্মের জাল শংসাপত্র রুখতে ব্যবস্থা নেওয়ার হয়। দেশের ১০ জন টেবল টেনিস খেলোয়াড়কে সাসপেন্ড করা হয়। তার মধ্যে রাজ্যের ৭ জন রয়েছন। উত্তরবঙ্গের রয়েছেন ২ জন। কয়েকজন এখন সাসপেন্ড রয়েছেন। উত্তরবঙ্গ টিটি সংস্থার তরফেই জানা গিয়েছে, ফেডারেশনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জন্মের ১ বছরের মধ্যে যে সমস্ত ক্ষেত্রে জন্মের শংসাপত্র তৈরি করা হয়নি সে সব ক্ষেত্রে যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান জন্মেছে সেখানকার ‘ডিসচার্জ সার্টিফিকেট’ দিতে হবে। তা না মিললে চাকরিরতা হলে মায়ের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কর্ম ক্ষেত্রে ছুটির শংসাপত্র দেখাতে হবে। এর পরেই গত এপ্রিল মাস থেকে নিয়মের কড়াকড়ি চালু করা হয়। তাতে দেখা যায় উত্তরবঙ্গের এমন অন্তত ১৫ জন খেলোয়াড়ের জন্মের শংসাপত্র সঠিক নয়। তাদের ফের নিয়ম মাফিক নথি জমা করতে বলা হয়। সেই মতো নথিপত্র দেখে নিয়ে তাঁদের জন্মের দিনক্ষণ নতুন করে ফেডারেশনে নথিভুক্ত করা হয়। বর্তমানে সেই নথি অনুসারেই তাঁরা খেলছেন। তাই অ্যাসোয়িশনের দাবি, এ বছর ফেডারেশন নতুন নিয়ম চালু করার পর খেলোয়াড়দের জন্মের জাল শংপাত্র দেওয়ার প্রবণতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। সুব্রতবাবু বলেন, “আগে নিয়মের কড়াকড়ি ছিল না। সে জন্য যে কোনও ধরনের শংসাপত্র দাখিল করেই অনেকে বয়সের নথির সত্যতা দাবি করতেন। সংগঠনের তরফেও সে সব খতিয়ে দেখাও সম্ভব নয়। তাই ফাঁক থেকেই গিয়েছিল। এখন তা বন্ধ হয়েছে।”
কিন্তু তাই বলে বয়স ভাঁড়িয়ে যাঁরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতা থেকে অতীতে পদক পেয়েছেন বা চাকরি করছেন তা মেনে নিতে নারাজ অভিযোগকারীদের অনেকেই। শিলিগুড়ির এক টেবল টেনিস খেলোয়াড়ের বাবা জিতেন জানা সিবিআই-এর কাছে অন্তত ১৭ জন খেলোয়াড়ের নাম করে অভিযোগ কয়েছেন। তিনি বলেন, “এক জন জন্মের জাল শংসাপত্র দাখিল করে খেলে পুরস্কার নেবেন, চাকরি করবেন আর অন্যরা সুযোগ পাবে না তা হতে পারে না। আশা করি সিবিআই অভিযোগের সত্যতা খুঁজে দেখবে।” ওই অভিযোগ নিয়ে সরব শিলিগুড়ি টেবল টেনিস অ্যাকাডেমির কর্ণধার অমিত দামও। বয়স ভাড়িয়ে খেলানোর অভিযোগ উঠেছে তাঁর অ্যাকাডেমির বিরুদ্ধেও। এ বছর মে মাসে শিলিগুড়ি নর্থ বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে শিলিগুড়িতে স্টেজ থ্রি টিটি প্রতিযোগিতায় নার্সারি বিভাগে বয়স ভাড়িয়ে শিলিগুড়ি টেবল টেনিস অ্যাকাডেমির এক খেলোয়াড় খেলছে বলে অভিযোগ ওঠে। নর্থ বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানা গিয়েছে, অভিভাবকদের কয়েকজন এ ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সেই মতো খতিয়ে দেখে অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়। এর পর ওই খেলোয়াড়কে প্রতিযোগিতায় পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে অ্যাকাডেমি। অমিতবাবু অবশ্য দাবি করেন এ ধরনের কোনও খেলোয়াড় তাঁদের অ্যাকাডেমিতে নেই। নর্থ বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা সুব্রতবাবুর অভিযোগ, অমিতবাবুর অ্যাকাডেমি থেকে ওই খেলোয়াড়কে নর্থ বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়শনে নথিভুক্ত করানোর সমস্ত নথি রয়েছে।