লুই সুয়ারেজের দাঁত কেলেঙ্কারি!
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর গোল করেও বিশ্বকাপ নিষ্ক্রমণ।
লিওনেল মেসির স্বর্গীয় ফ্রিকিক।
ক প্লাস খ প্লাস গ। তিনটে মিলেজুলে অন্তত বৃহস্পতিবারের জন্য স্কোলারির ব্রাজিল নিয়ে ক্রমাগত চলতে থাকা উত্তেজিত আলোচনাটা সামান্য মিউটে! নইলে আটচল্লিশ ঘণ্টা বাদেই এমন একটা দেশের সামনে হলুদ জার্সি নামছে যাদের মিনেইরো মাঠেই হারাতে না পেরে তারা প্রভূত অসন্তোষের লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল। সবচেয়ে বিড়ম্বনার মুখে পড়েছিলেন ব্রাজিলের আজকের সোনার ছেলে নেইমার দ্য সিলভা।
বিশ্বকাপ নকআউট মানেই কঠিন। সেটা যদি আবার জাতীয় দলের বরাবরের বাঘা তেঁতুল চিলি হয়, তা হলে তো আরওই। স্কোলারি নিজেই যেখানে স্বীকার করে নিচ্ছেন, আর যাকে হোক চিলিকে সামনে চাননি। সেখানে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার মহাযুদ্ধ-মাহাত্ম্য আরওই বোঝা যায়!
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্টিভ ওয়ের টিমে এই সব পরিস্থিতিতে কোচ যা করতেন, অবিকল তাই করছেন লুই ফিলিপ স্কোলারি। সকালে বেলো বিমানবন্দরে টিম যখন বেরোচ্ছিল, তখন কারও হাতে ড্রাম। কারও হাতে গিটার। স্কোলারির নিজের বাঁধা জায়গা ওয়ান-সি সিটটা ছেড়ে দিয়েছিলেন গানবাজনার জন্য। পাইলটও এই টিমের বাঁধাধরা। প্রত্যেকটা শহরে তিনি নিয়ে যাচ্ছেন। সেই চুরানব্বই বিশ্বকাপের লাকি পাইলট তিনি। আমেরিকার এক-একটা শহরে টিমকে নিয়ে যেতেন। নাচাগানার সময় তিনি না থাকলেও স্টুয়ার্ডরা অংশ নিলেন।
কিন্তু এটা বহিরঙ্গ এবং সব সময় বিশ্বাসযোগ্য নয়। ভেতরে হাড় হিম করা ঠান্ডার আস্তরণ আর সে জন্যই হয়তো স্কোলারিকে ঘরে-ঘরে মোটিভেশনাল চিরকুট পাঠাতে হচ্ছে। জন বুকাননের সঙ্গে তফাত হল, তিনি নিজেই লিখে চিটটা প্লেয়ারদের হোটেলের ঘরে ঢুকিয়ে দিতেন। ফুটবল অনেক বেশি সংগঠিত। স্কোলারি চিটটা পেনে লিখে দিচ্ছেন ব্রাজিলীয় ফুটবল সংস্থার মিডিয়া উপদেষ্টাকে। সেটা কমপোজ এবং স্ক্যান হয়ে প্লেয়ারদের ঘরে-ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে।
দাভিদ লুইজ ধারাবাহিক ভাল খেলা স্বত্ত্বেও ব্রাজিলীয় ডিফেন্সের ওপর বিশেষজ্ঞদের প্রত্যয় এমন কমছে যে, এ দিন প্লেনে স্পেনের গত বারের বিশ্বজয়ী টিমের ডিফেন্ডার জন কাপদেভিয়া বলছিলেন, তাঁর বাজি ব্রাজিল নয়! দেখা হয়ে গেল বিলেতের এক টিভির বিশেষজ্ঞ ব্রাজিলের প্রাক্তন ফুটবল কাহিলার সঙ্গে। ইনি জাতীয় দলের বারান্দায় বহু বছর ঘোরাফেরা করেও সুযোগ পাননি। কিন্তু ইংল্যান্ডে সতেরো বছর পেশাদার লিগ খেলেছেন। কাহিলা মাঠ থেকে বলেন আর স্টুডিওয় থাকেন কানাভারো এবং প্যাট্রিক ভিয়েরা। শুনলাম, নাইজিরিয়া ম্যাচ দেখার পর কানাভারোরা তাঁদের সম্ভাব্য ফাইনালিস্টদের নাম বলে দিয়েছেন। ফ্রান্স বনাম মেসি!
স্কোলারিকে প্রসন্ন করার মতো পূর্বাভাস অবশ্যই নয়। ব্রাজিলীয় কোচের অস্বস্তি সামান্য বাড়িয়েছে তার বেশির ভাগ দিন রিজার্ভে থাকা ফরোয়ার্ড উইলিয়ানের বাবার মন্তব্য। ব্রাজিল গণমাধ্যম বলছে, ফ্রেডকে বসিয়ে উইলিয়ানকে খেলানো উচিত। জনতাও তাই বলছে সে যতই গোঁফ রেখে ফ্রেড গোল পান। কিন্তু স্কোলারির অবিচলিত আস্থা ফ্রেডে। আর তার কারণও আছে। অতীতে ফ্রেড বড় ম্যাচ জিতিয়েছেন। ট্রফি দিয়েছেন তাঁকে। কিন্তু উইলিয়ানের বাবার অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটিতে কোনও আগ্রহ নেই। তিনি সোজাসাপ্টা বলেছেন, “এই যা টিমের অবস্থা, আমার ছেলের অবশ্যই প্রথম এগারোয় চান্স পাওয়া উচিত।” ক্যামেরুন ম্যাচের শেষ দিকটা উইলিয়ান নেমেছিলেন। তাঁর সক্রিয় নড়াচড়া দেখে ব্রাজিল মিডিয়ারও মনে হয়েছে, ফার্নান্দিনহোর মতোই উইলিয়ান ঢুকলে শক্তি বাড়বে।
মিডিয়া বলা এক রকম। আর প্লেয়ারের বাবা বলা এক রকম। সিনিয়র উইলিয়ানের মন্তব্য বার হতেই তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্কোলারির তথাকথিত সুখের সংসার কি আসলে ভেতরে ভেতরে মাটির মতো ঠুনকো? তার মানে কি স্কোলারির সংসারে আভ্যন্তরীণ সমস্যা রয়েছে? সুখি পরিবারের এই বারবার ফুটিয়ে তোলা প্রোজেকশন ঠিক নয়? এমন বিতর্ক বেঁধেছে যে উইলিয়ান নিজে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমার বাবা আমার আদর্শ। আমি তো আর মনোভাব কন্ট্রোল করতে পারি না। উনি এখন আবেগে ভাসছেন। উনিও ব্রাজিল টিম আর স্কোলারি স্যরকে খুব সম্মান করেন। কিন্তু বাবা হিসেবে ওই যে সেন্টিমেন্ট হয় না যে, আমার ছেলে সব সময় মাঠে থাকুক। তার বশবর্তী হয়ে বলে ফেলেছেন।”
এই বিতর্কের ওপর নবতম নুনের ছিটেও আছে। চিলি টিমে যাঁকে ফুটবল-বিশ্ব সবচেয়ে সমীহ করে, সেই ভিদাল নিজেকে ব্রাজিল ম্যাচের জন্য সুস্থ ঘোষণা করেছেন।
টুর্নামেন্টের হিসেবে যতই টেকনিক্যালি দ্বিতীয় রাউন্ড হোক, দরজার তলা দিয়ে স্কোলারির চিরকুটটা এই ম্যাচেই তো লাগার কথা ছিল!