বেলজিয়াম-১ (ওরিগি) রাশিয়া-০

ব্রাজিলের খেলাতেও যা নেই, বেলজিয়ামের আছে

বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে খেলার কোনও অভিজ্ঞতা না থাকলেও রাশিয়ার সঙ্গে বহু ম্যাচ খেলেছি। আটাত্তরে আরারাত যখন আইএফএ শিল্ড ফাইনাল খেলেছিল, ইউরোপের দশ নম্বর ক্লাব ছিল। মোহনবাগান ২-১ এগিয়ে থাকার সময় আমাদের গোলকিপার চল্লিশ গজ দূর থেকে গোল না খেলে সে দিন রাশিয়ানদের যুগ্মজয়ীর সান্ত্বনাও জুটত না। তারও আগে একাত্তরে যখন পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলতে ভারতীয় ফুটবল টিম রাশিয়া সফরে গিয়েছিল দলে আমি ছিলাম সবচেয়ে জুনিয়র। আমরা কোনও ম্যাচে দু-তিন গোলের বেশি ব্যবধানে হারিনি।

Advertisement

প্রদীপ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৪ ০৪:১৭
Share:

বেলজিয়ামকে নক আউটে তুলে ওরিগিদের উল্লাস। ছবি: এএফপি।

বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে খেলার কোনও অভিজ্ঞতা না থাকলেও রাশিয়ার সঙ্গে বহু ম্যাচ খেলেছি। আটাত্তরে আরারাত যখন আইএফএ শিল্ড ফাইনাল খেলেছিল, ইউরোপের দশ নম্বর ক্লাব ছিল। মোহনবাগান ২-১ এগিয়ে থাকার সময় আমাদের গোলকিপার চল্লিশ গজ দূর থেকে গোল না খেলে সে দিন রাশিয়ানদের যুগ্মজয়ীর সান্ত্বনাও জুটত না। তারও আগে একাত্তরে যখন পাঁচ ম্যাচের সিরিজ খেলতে ভারতীয় ফুটবল টিম রাশিয়া সফরে গিয়েছিল দলে আমি ছিলাম সবচেয়ে জুনিয়র। আমরা কোনও ম্যাচে দু-তিন গোলের বেশি ব্যবধানে হারিনি।

Advertisement

কিন্তু এখন আমাদের সঙ্গে রাশিয়ার মতো ইউরোপের মাঝারিমানের ফুটবল দেশেরও বিরাট পার্থক্য। রবিবার বিশ্বকাপে রাশিয়ার ম্যাচ টিভিতে দেখতে দেখতে বারবার মনে হচ্ছিল, আহা! আমাদেরও যদি ইরান বা দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবলারদের মতো তাগড়াই চেহারা হত, তা হলে ইউরোপিয়ানদের আরামসে টক্কর দিতে পারতাম। বব হাউটনের ভারতীয় দলের সঙ্গে পাঁচ-ছ’বছর জড়িয়ে থাকার সুবাদে আরও বুঝেছি, বিশ্ব ফুটবলে আমাদের এতটা বেশি পিছিয়ে পড়ার প্রধান কারণ, ইউরোপিয়ানদের তুলনায় শারীরিক ভাবে অনেক দুর্বল হওয়া। একটা বডি কন্ট্যাক্ট খেলায় যদি বিপক্ষের সঙ্গে শরীরের লড়াইতেই এঁটে উঠতে না পারি, স্কিল, টেকনিক, স্ট্র্যাটেজি এ সব তো তখন অনেক পরের ব্যাপার।

ম্যাচটা ইউরোপেরই দু’টো দেশের মধ্যে হলেও ভেবেছিলাম, সিস্টেম বনাম স্কিলের লড়াই দেখব। রাশিয়ান ফুটবল বরাবর টিপিক্যাল ইউরোপীয় ঘরানার। বেলজিয়ামে একটা এন্জো শিফোর মতো লাতিন আমেরিকান ঘরানার ফুটবলার এক সময় থাকলেও ওদের খেলাটার ভিতও ইউরোপিয়ান স্টাইলের। তবে এখনকার দলে একঝাঁক তরুণ ছেলে আছে যারা শুধু ইউরোপের হেভিওয়েট সব ক্লাবের তারকা ফুটবলারই নয়, দারুণ স্কিলফুলও। প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট প্রায় আশি শতাংশ বল পজেশন হ্যাজার্ড, মার্টিন্স, ফেলাইনির দখলে ছিল। কিন্তু পেনিট্রেটিভ জোনে বেলজিয়ামের চেয়ে বারবার রাশিয়ার প্লেয়াররা সংখ্যাধিক্য হয়ে উঠছিল। শাতভ-কোকোরিনদের ইতালীয় কোচ কাপেলোর প্রিয় ৪-১-২-৩ ছকে জেনেবুঝেই নিজেদের বক্সে পায়ের জঙ্গল তৈরি হচ্ছিল। হাজার স্কিলড্ প্লেয়ার হওয়া সত্ত্বেও বেলজিয়ামের ‘নতুন প্রজন্ম’ যে জঙ্গলে ৮৮ মিনিটের আগে গোলের পথ খুঁজে বার করতে পারেনি। বরং প্রথমার্ধে গোলের দুটো পজিটিভ সুযোগই ছিল রাশিয়ার।

Advertisement

তাতেই হয়তো আরও তেতে উঠে দ্বিতীয়ার্ধে রাশিয়া ওপেন ফুটবল খেলতে শুরু করেছিল। আবার বিপক্ষের কাউন্টার অ্যাটাকের সময় পাঁচ-ছ’জন দ্রুত পিছিয়ে আসছিল। রিওতে মনোরম আবহাওয়া থাকায় (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা জুন-জুলাইয়ে ২৫ ডিগ্রি) মারাকানায় দু’টো ইউরোপিয়ান দল ম্যাচটা দারুণ গতিতে খেলল। বেলজিয়াম শেষমেশ গোলটা পেয়ে নক আউটে ওঠার টিকিট জোগাড় করতে পারল ওদের কোচ উইলমটসের ইতিবাচক মনোভাবের জন্যই। এই বিশ্বকাপে সব বড় দলকেই মাঝখান দিয়ে মানে ডাউন দ্য লাইন আক্রমণ করতে দেখছি। ব্রাজিল, জার্মানি, স্পেন সবাইকে। বেলজিয়াম কিন্তু বারবার উইং দিয়ে অ্যাটাক করে যেমন আক্রমণটাকে ছড়িয়ে তুলছে, তেমনই মাঠটাকেও বড় করে তুলে বিপক্ষের ডিফেন্সের কাজে সমস্যা বাড়াচ্ছে। ম্যাচের একেবারে শেষের দিকে ওরিগির গোলটাও ওই রকম একটা উইং অ্যাটাক থেকেই এল।

বেলজিয়ামের দু’টো ম্যাচে করা তিনটে গোলই পরিবর্ত প্লেয়ারদের করা। ১৯ বছর দু’মাস বয়সী ওরিগি তো বেলজিয়ামের কনিষ্ঠতম ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপ খেলা এবং গোল করার রেকর্ড করে ফেলল। এতেই বোঝা যায়, ওদের রিজার্ভ বেঞ্চ কতটা বেশি শক্তিশালী। আর যাদের বেঞ্চ যত শক্তিশালী, তারা আমার মতে বিশ্বকাপে ততই এগোবে।

জিতল আলজিরিয়া

বেলজিয়ামের কাছে প্রথম ম্যাচে হারলেও ববিবার দ্বিতীয় ম্যাচে কোরিয়াকে ৪-২ হারিয়ে বিশ্বকাপের নক আউটে যাওয়ার আশা টিকিয়ে রাখল আলজিরিয়া। প্রথমার্ধেই স্লিমানি, হালিচে আর জাবো এগিয়ে দেন আলজিরিয়াকে (৩-০)। বিরতির পর কোরিয়ার হিউং মিন ব্যবধান কমানোর কিছুক্ষণ পরই আলজিরিয়াকে আরও এগিয়ে দেন ইয়াসিন ব্রাহিমি (৪-১)। ম্যাচের শেষ দিকে কু জাচেওল জালে বল জড়ালেও (৪-২) কোরিয়ার জয়ের জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement