অতীতে পেলে-নেইমার। বিশ্বকাপের আগে এই সম্পর্কে চিড়।
পেলে আছেন পেলেতেই!
এত দিন বিশ্বকাপ সংগঠন নিয়ে ব্রাজিল সরকারের পাশে থাকার পর হঠাৎই অন্য সুর ফুটবল সম্রাটের গলায়। তাঁর কথায়, “বিশ্বকাপ সংগঠন প্রক্রিয়া এবং ব্রাজিলের প্রস্তুতি-- দু’টোর কোনওটাই পছন্দ মতো হয়নি।”
বিশ্বকাপ শুরুর আগে পেলের মন্তব্য জোর পেয়েছে এই কারণেই যে, তিনি পাশে পেয়ে গিয়েছেন আর এক ব্রাজিল কিংবদন্তি জিকোকে।
জিকোও বলছেন, “বিশ্বকাপ আয়োজন করার সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারছে না ব্রাজিল। সঠিক পরিকল্পনার অভাবই এর জন্য দায়ী।” পেলের মতে, বিক্ষোভকারীদের জন্যই পঁচিশ শতাংশ বিদেশি বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিলে আসার পরিকল্পনা করেও সফর বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন।
পেলের নিশানায় রয়েছে ব্রাজিল দলের প্রস্তুতিও। স্কোলারির দল নিয়ে পেলের মন্তব্য, “ব্রাজিলের দেশের মাটিতে ষষ্ঠ বার বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা থাকলেও প্রস্তুতি ঠিক মতো হয়নি।” তিন বারের বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলার আরও বলেন, “স্পেন এবং জার্মানি এই বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার। স্পেন কয়েক বছর ধরেই ভাল খেলছে। আর জার্মানির খেলায় আমাদের চেয়েও ব্রাজিলিয়ান ঘরানার প্রভাব বেশি।”
যদিও বিশ্বকাপের আগে পেলের এমন ভবিষ্যদ্বাণী নতুন নয়। যা কোনও বারই মেলেনি। তবে দিন কয়েক আগে পেলের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বার মুখ খুলেছেন এ বারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের অন্যতম তারকা নেইমার। স্কোলারি চূড়ান্ত ২৩ জনের ব্রাজিল দল ঘোষণা করার পর পেলে বলেছিলেন, অধিনায়কের আর্মব্যান্ড যেন কোনওমতেই নেইমারকে দেওয়া না হয়। “নেইমার কিন্তু দলের অধিনায়ক নয়। ওর মধ্যে দলের লিডার হওয়ার কোনও গুণ নেই,” বলেন পেলে। ফুটবল সম্রাটের এই মন্তব্যের জবাবে কিছুটা কটাক্ষ করেই নেইমার বলেছেন, “আমি পেলে নই।” একই সঙ্গে পেলের সঙ্গে তাঁর তুলনা নিয়েও সরব হয়েছেন সেলেকাওদের ভরসা। বলেছেন, “পেলের সঙ্গে তুলনা হলে কার না ভাল লাগে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, উনি ফুটবল সম্রাট। কিন্তু আমি সেই ছোট্ট ছেলেটা যে ফুটবল সবে খেলতে শুরু করেছে।”
যদিও নেইমারের এই মন্তব্যের পর তাঁর সমালোচকেরাও ছেড়ে কথা বলেননি। নেপথ্যে বার্সেলোনায় নেইমারের অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স। চলতি মরসুমে বার্সেলোনার হয়ে ৩৬ ম্যাচে তিনি গোল করেছেন মোটে ১৩ টি। যা বার্সার চিলিয়ান স্ট্রাইকার অ্যালেক্সিস স্যাঞ্চেজের গোলের অর্ধেক। কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে এই ব্রাজিলীয় ফুটবলারকে ‘শো-ম্যান’ বলতেও ছাড়েননি। যেহেতু এ বারের ব্রাজিল টিমে স্কোলারির একটা বড় ভরসা নেইমার, তাই বিশ্বকাপে তাঁর ফর্মের উপর অনেকটা নির্ভর করবে ব্রাজিলের উত্থান-পতন। কারণ ব্রাজিলের আর এক তুরুপের তাস অস্কার ভাল স্কিমার হলেও বিপক্ষের ডিফেন্সিভ থার্ডে নেইমারই ব্রাজিলের মূল স্কোরার। গত বছর দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত কনফেড কাপের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের কাছে তাই এ বার ফের প্রমাণ করার পালা দেশের মানুষের প্রত্যাশার চাপ নিতে তিনি তৈরি।
ব্রাজিলের হয়ে ৪৭ ম্যাচে ৩০ গোল করা নেইমারকে তাই সমালোচকদের চুপ করাতে চাইলে বিশ্বকাপের সাতটা ম্যাচেই ঝলসে উঠতে হবে বলে মনে করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে নক-আউট পর্যায়ের চার ম্যাচে। যেখানে ঝলসে উঠলে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতোই বার্সা এবং ব্রাজিল দু’জায়গার সমালোচকদেরই চুপ করিয়ে দিতে পারবেন তিনি। যে পরীক্ষা শুরু আর তিনটে সপ্তাহ পরেই।