হোটেলে অশ্বিন।
মিস্টার অশোক মলহোত্র, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বিরুদ্ধে আপনার টিমের স্ট্র্যাটেজি কী?
“আরে, ও ইডেনে অত টার্ন পাবে নাকি? মনে রাখবেন ম্যাচটা চিপকে নয়, ইডেনে। অশ্বিনের বিরুদ্ধে টিম সতর্ক থাকবে। কিন্তু ভয় পাবে না। আর লক্ষ্মী, মনোজ, ঋদ্ধিরা জানে কী ভাবে অশ্বিনকে ফেলে দিতে হবে।”
মিস্টার ডব্লিউ ভি রামন, শামি-দিন্দার পেস-বিষ নির্বিষ করতে আপনার স্ট্র্যাটেজি কী?
“স্ট্র্যাটেজি? মাই স্ট্র্যাটেজি ইজ, দেয়ার ইজ নো স্ট্র্যাটেজি। আমার স্ট্র্যাটেজি হল, কোনও স্ট্র্যাটেজি নেই!”
মিস্টার মলহোত্র, বসন্তের কলকাতার রাতের শিশির ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পারে? টস জিতলে কী নেবেন?
“নিঃসন্দেহে বোলিং। মার্চ মাসের কলকাতায় দিন-রাতের ম্যাচে পরে ব্যাট করার ঝুঁকি কেউ নেয়? বাংলাদেশে এশিয়া কাপে দেখলেন না, টিমগুলোর কী অবস্থা হল পরে বল করতে গিয়ে? কলকাতায় কত তফাত হবে?”
আর মিস্টার রামন আপনি?
“ধুর। মার্চ মাসে আবার শিশির! আচ্ছা, ইডেনের উইকেটটা শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াল? আজ যাওয়া হয়নি!”
ভৌগলিক অবস্থানে যতটা দূরত্ব ইডেন আর সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মাঠে (বাংলা ও তামিলনাড়ুর প্র্যাকটিস আজ যেখানে হল যথাক্রমে), তার চেয়ে যেন কয়েকগুণ বেশি পার্থক্য দেখা গেল যুদ্ধের প্রস্তুতি-মগ্ন দু’টো টিমের মননে। মঙ্গলবারের বাংলা বনাম তামিলনাড়ু বিজয় হাজারে কোয়ার্টার ফাইনাল যুদ্ধের ঠিক চব্বিশ ঘণ্টা আগে।
টিম এলআরএস সিরিয়াস। ভুল, অসম্ভব সিরিয়াস এবং প্রবল তেতে। প্রতিপক্ষ নিয়ে মাঝে মধ্যে অগ্নুৎপাতও ঘটে যাচ্ছে। দিন্দা। শামি। মলহোত্র। প্রসঙ্গ টানব না, টানব না করেও মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে রঞ্জিতে চেন্নাইয়ের ‘খোঁয়াড়’-এ যে বাংলা নেমেছিল, আর মঙ্গলবার যে বাংলা নামবে, দু’টো এক নয়। তুল্যমূল্য বিচারে এ বারের বাংলা অনেক বেশি শক্তিশালী। কারণ মনোজ তিওয়ারি, ঋদ্ধিমান সাহাকে পাওয়া যাবে। সবচেয়ে বড়, মহম্মদ শামি আছেন এবং ইডেনের সবুজ উইকেট আছে। শোনানো হচ্ছে, টস জিতে এক বার ফিল্ডিং নিতে পারলে দেখা যাবে কে মুরলী বিজয় আর কে দীনেশ কার্তিক!
শামি অবশ্য
পুরোদমে অনুশীলনে।
টিম তামিলনাড়ুর মনোভাবে আবার একটু তাচ্ছিল্য থাকল কি? এ দিন নির্ধারিত প্র্যাকটিস সেশন বদ্রিনাথদের ইডেনেই ছিল, সল্টলেকে নয়। সকালে। দুপুরে নয়। কিন্তু বদ্রি-বিজয়রা উল্টো রাস্তায় হাঁটলেন। পুরোটা। অশ্বিন-কার্তিকের প্র্যাকটিসে আসা নিয়ে যা হল, তা বেশ অবাক করা। ফ্লাইট থেকে দুপুরে নেমে হোটেল ঘুরে মাঠে আসতে চেয়েছিলেন অশ্বিনরা। কিন্তু ড্রাইভার রাস্তা চিনতে না পারায় অনেক ঘোরাঘুরি করে অশ্বিনদের হোটেলই ফেরত যেতে হল, প্র্যাকটিস বাদ দিয়ে। সঙ্গে ধরতে হবে বাংলা ম্যাচ নিয়ে রামনের টানা ‘উদাসীনতা’ প্রকাশ এবং মাঝে মাঝে চিমটি। মুরলী বিজয় যেমন নেটে মন দিয়ে পেসার-সংহারের পর বেরনোর সময় বলতে বলতে গেলেন, “দিন্দা আর শামি দু’জনেই ভাল বন্ধু। কিন্তু কাল ওদের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করতে পারলে ভালই লাগবে।” পাঁচ মিনিটের মধ্যে আবার তামিলনাড়ু অধিনায়ক সুব্রহ্মণ্যম বদ্রিনাথকে বলতে শোনা গেল, “ম্যাচটাকে বাংলা বোলিং বনাম তামিলনাড়ু ব্যাটিং বলতে পারেন। কিন্তু আমরা আবার দক্ষিণাঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন!”
চরম ঔদ্ধত্যটা বদ্রিনাথরা দেখাতেই পারেন। শুধু জার্সির রঙে নয়, পরপর নামগুলো দেখলেও টিমটাকে ঘরোয়া ক্রিকেটের ‘চেন্নাই সুপার কিংস’-ই মনে হবে। মুরলী বিজয়, বদ্রিনাথ, দীনেশ কার্তিক, বাবা অপরাজিত, অনিরুদ্ধ শ্রীকান্ত, লক্ষ্মীপতি বালাজি, রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে নেই? কোয়ার্টারে ওঠার রাস্তায় তিনটে ম্যাচের তিনটেতেই জিতেছে তামিলনাড়ু। মুরলী বিজয় একটাতেও হাফসেঞ্চুরির নীচে কিছু করেননি। তামিলনাড়ুর দু’জন করে বোলার নিয়ম করে ম্যাচ পিছু তিন উইকেট তুলেছেন। বাংলা সেখানে তিনটের মধ্যে জিতেছে দু’টো, একটায় ঝাড়খণ্ডের কাছে বিশ্রী হার, অসমের বিরুদ্ধে জয় শিরদাঁড়া দিয়ে আতঙ্কের হিমস্রোত বইয়ে।
বাংলা পারবে তো?
শোনা গেল, টিমে দু’টো বদল। সবুজ উইকেটে বাঁ হাতি স্পিনার ইরেশ সাক্সেনাকে বসিয়ে শামি। আর স্পেশ্যালিস্ট ওপেনার হিসেবে জয়জিৎ বসু। টিম মিটিংয়ে একটা কথা এ দিন বলা হল তামিলনাড়ুকে সম্মান করো। কিন্তু মাথায় চড়তে দিও না। বরং পাল্টা দিও। আর সবাই সবার পাশে থেকো। কেউ যদি না পারে, বাকিরা চেষ্টা কোরো অপূর্ণ কাজটা সমাপ্ত করে আসতে। এ বার ঘরের মাঠে টিম রামনকে মারো। ইডেন থেকে বেরোনোর সময় মনোজ তিওয়ারি বলছিলেন, “মানসিক ভাবে বাংলা এগিয়ে। আগের ম্যাচটা জেতায়। আমিও ব্যাটিংয়ে রিদমটা পাচ্ছি।” মনোজের নিজ-ব্যাটিংয়ের ‘রিদম’ পাওয়া নিশ্চয়ই শুভ ইঙ্গিতবাহী। কিন্তু তামিলনাড়ু কোচ আবার ভালই জানেন, পুরনো ছাত্রদের কার কোথায় দুর্বলতা। জবাবটা এ বার দিলেন অশোক, “ও সব বাদ দিন। অত ভাল কোচ যদি রামন হবে তো রঞ্জিতে টার্নার বানিয়েও কেন পারল না আমাদের হারাতে? কোচ থাকার সময় বাংলাকে কেন তেমন কিছু দিতে পারেনি? আর ভারত তো ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে ০-৪ হারল। ফ্লেচার তো ওদের পুরনো কোচ ছিল। পেরেছে আটকাতে?”
“অত ভাল কোচ যদি রামন হবে তো রঞ্জিতে টার্নার বানিয়েও কেন পারল না আমাদের হারাতে? কোচ থাকার সময় বাংলাকে কেন তেমন কিছু দিতে পারেনি? আর ভারত তো ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে ০-৪ হারল। ফ্লেচার তো ওদের পুরনো কোচ ছিল। পেরেছে আটকাতে?”
অশোক মলহোত্র
এবং বঙ্গ অধিনায়ক। কোচ, সতীর্থদের কথাবার্তায় প্রাক্তন কোচের টিমকে নিয়ে যতটা বারুদ, তার অর্ধেকও নেই লক্ষ্মীর সংলাপে। বরং সোমবারের নেট সেশনে যদি একাগ্রতার মার্কশিট থাকত, নিঃসন্দেহে দশে দশ পেতেন। দু’বার নেটে ঢুকে ব্যাটিং, বহুক্ষণ নকিং। মনোজ তিওয়ারি শেষ ম্যাচে ৯০ করেছেন। ঋদ্ধিমান আশির ঘরে। কিন্তু তাঁর ব্যাট এখনও চুপচাপ। কেমন যেন গুম মেরে আছেন। চুপচাপ।
ইডেনে উপস্থিত ময়দানের এক ক্রিকেটার বললেন, ঠিকই আছে। এমনই হয়। ওটা ঝড়ের পূর্বাভাস।
তাই কি?
চোয়াল শক্ত করে বাংলা অধিনায়ক বলে গেলেন, “কাল জিতব!”
মঙ্গলবার বিজয় হাজারে কোয়ার্টার ফাইনালে
বাংলা বনাম তামিলনাড়ু (ইডেন, দুপুর ১.৩০),
গুজরাত বনাম কর্নাটক (সল্টলেক ক্যাম্পাস, সকাল ৮.৪৫)
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
ব্যাটিং ব্যর্থতায় বিদায়: ইউসুফ
সোহম দে • কলকাতা
বিজয় হাজারে ট্রফির প্রি কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায়ের কারণ হিসেবে টপ অর্ডারের ব্যর্থতাকেই বেছে ফেললেন ইউসুফ পাঠান। সোমবার ইডেনে রেলওয়েজের কাছে ৯৩ রানে হেরে গেল বরোদা। অথচ টার্গেট এমন কিছু আহামরি ছিল না। প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে রেল তোলে ২৩০। যে স্কোর তাড়া করতে গিয়ে ইউসুফ পাঠানের মতো বিগ হিটার থাকা সত্ত্বেও মাত্র ১৩৭ রানে শেষ হয়ে যায় বরোদা। সিনিয়র পাঠান মাত্র ১৯ রান করে আউট হয়ে যান। কর্ণ শর্মার বলে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন রেলওয়েজের কৃষ্ণকান্ত উপাধ্যায়। সদ্য এশিয়া কাপে ভারতীয় টিমে থাকা অম্বাতি রায়াডু করেন ২। সর্বোচ্চ ইরফান পাঠান (৩৮)। যা নিয়ে ইউসুফ ম্যাচ শেষে বলছিলেন, “স্কোরটা তাড়া করা এমন কিছু কঠিন ছিল না। কিন্তু তার জন্য তো টপ অর্ডারকে ভাল খেলতে হবে।” সঙ্গে যোগ করেন, “রেলওয়েজের বোলিং ভাল ছিল, কিন্তু আমাদের বোলাররাও খারাপ কিছু করেনি।” হতাশার সুর মুনাফ পটেলের গলাতেও। যাঁর ইঙ্গিতও ছিল পরিষ্কার। ব্যাটসম্যানদের দিকেই ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “দেখতেই তো পেলেন কীসের জন্য হারলাম। বোলিং তো ভালই হয়েছে।” আর রেলওয়েজের অন্যতম অস্ত্র কৃষ্ণকান্ত বলেন, “বড় নাম দিয়ে কিছু হয় না। আমরা ভাল খেলেছি। আমি নিজের খেলাতেও খুশি।” ইরফান পরের দিকে রান করে বরোদাকে আশার আলো দেখালেও শেষরক্ষা হয়নি। অমিত মিশ্র (৩-২২) ও চন্দ্রপল সাইনির (২-১৩) যুগলবন্দিতে ১৩৭ রানে অল আউট হয়ে যায় বরোদা। এ দিন বিজয় হাজারের অন্য ম্যাচে উমেশ যাদবের বিদর্ভকে ১ উইকেটে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল সার্ভিসেস। ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে বিদর্ভ তোলে ২৮৩। যে রান এক উইকেট হাতে রেখে তুলে দেয় সার্ভিসেস।