বাংলার স্থানীয় ক্রিকেটে গণ্ডগোল কোনও নতুন খবর নয়। হাতাহাতি থেকে মারামারি, আজ পর্যন্ত ময়দানের ক্লাব ক্রিকেট দেখেনি এমন ঘটনা বিরল। প্রতিবাদের ভাষাও অদ্ভুত। শনিবার যেমন খুদে ক্রিকেটাররা মাঠেই বসে পড়ল। পিচের পাশে সাইকেল পার্ক করে দিল। লিগ ম্যাচ হতে দিল না।
সিএবি লিগে রাজস্থান বনাম এরিয়ান ম্যাচ ছিল হাইকোর্ট মাঠে। বহু দিন ধরেই ক্লাবের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ভুগছে এরিয়ান। তার রেশ যে কতটা কুত্সিত হতে পারে, শনিবার প্রমাণ পেল ময়দান। মাঠে জনা পনেরো খুদে ক্রিকেটার বসে পড়ে বলল, আমরাও এরিয়ানের ক্রিকেটার। আমরাও এরিয়ানে সই করেছি। আমাদেরও খেলতে দিতে হবে। নইলে মাঠ ছেড়ে উঠব না। হতবাক আম্পায়ার এবং ম্যাচ অবজার্ভার কেউ কোনও রাস্তা পাননি ম্যাচটা বাতিল করা ছাড়া। পরিস্থিতি এতটাই উত্তেজক হয়ে উঠল যে, এরিয়ানের কোচ কাম ক্রিকেট-সচিব শোভন মিত্র-র বিরুদ্ধে সোজাসুজি এফআইআর করে দিল ক্লাবের বিরোধী গোষ্ঠী।
এরিয়ানের শাসক দলের প্রধান মুখ সিএবি ভাইস প্রেসিডেন্ট সমর পাল। কিন্তু ক্লাবের শাসনদণ্ড কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলছে। বলা হচ্ছে, এ দিনের সব গণ্ডগোলই বিরোধীদের মস্তিষ্কপ্রসূত। তারা এমন কিছু প্লেয়ার এনে মাঠে ঝামেলা পাকাল, যারা কি না ক্লাবের রেজিস্টার্ড প্লেয়ারই নয়। সমর পাল বলছিলেন, “যারা মাঠে গণ্ডগোল করল, তাদের একটা ছেলেও ক্রিকেট খেলে না। না ওরা ক্লাবে রেজিস্টার্ড, না সিএবিতে ওদের নথি আছে। আর এ সব ম্যাচে নিরাপত্তা তো দেবে সিএবি।”
পাল্টা হিসেবে বিরোধীপক্ষ বলছে, ওই খুদেরা রেজিস্টার্ড প্লেয়ার না হলেও এরিয়ানে সই করেছে। আর তাদের নেটে না ডেকেই পছন্দের কিছু প্লেয়ারকে রেজিস্ট্রেশন করানো হল। তা হলে এরা কোথায় যাবে? “ওদের তো প্র্যাকটিসেও ডাকা হয়নি। বরং একদিন নোটিশ বোর্ডে বাইশ জন প্লেয়ারের নাম টাঙিয়ে দিয়ে বলা হল, এরা প্র্যাকটিস করবে,” বলছিলেন বিরোধীগোষ্ঠীর প্রধান মুখ পুলক দাস। যাঁর আরও বক্তব্য, এই খুদেদের ক্লাব থেকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হয়েছে। আজও তাদের মাঠে গালিগালাজ-ধাক্কাধাক্কি করা হয়েছে। সিএবিকে বলেও কোনও লাভ হয়নি।
সিএবি বলছে, এটা তাদের দেখার ব্যাপার নয়। এরিয়ানের অভ্যন্তরীণ গণ্ডগোল তাদেরই মেটাতে হবে। শোনা যাচ্ছে, আগামী সোমবার টুর্নামেন্ট কমিটির বৈঠক ডাকা হতে পারে। “সৌরভের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি। এটা নিয়ে ওদের আগেই আসতে বলেছিলাম। কেউ আসেনি,” বলে দিচ্ছেন সিএবি যুগ্ম-সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। সিএবি দায় না নিতে চাইলেও কারও কারও মত, সিএবির পরোক্ষ দায় থেকেই যাচ্ছে। প্লেয়ার ট্রান্সফারের সময় ক্লাবের প্রতিনিধি থাকা নিয়মে বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তবে হয় না। সেটা বাস্তবে হলে এই ঝামেলা এড়ানো যেত।
অন্তত ‘খুদে গুন্ডারা’ এরিয়ানেরই প্লেয়ার কি না, সেটা বোঝা যেত।