ক্রিকেট বিশ্ব থেকে এ বার তাঁকে নিয়ে আলোচনা ভারতের সর্বোচ্চ আদালতেও। আলোচনা বললে ভুলই হবে, বলা উচিত তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগ উঠল সুপ্রিম কোর্টে। এমন দিনে ধোনি সাংবাদিক বৈঠকে আসবেন, তা ভারতীয় সাংবাদিকদের পক্ষে আশা করাটাও বাড়াবাড়ি।
ঠিক তাই। যখন জানা গেল, শুক্রবারের ভারত-বংলাদেশ ম্যাচের আগে সাংবাদিক বৈঠকে আসবেন রোহিত শর্মা। ভাইস ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলিও নন। এবং সাংবাদিক বৈঠক শুরুর আগেই ফতোয়া জারি করে দিলেন ভারতীয় দলের মিডিয়া ম্যানেজার ও শ্রীনিবাসনের অনুগত আর এন বাবা। বললেন, “ভারতীয় দল ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না কিন্তু।” তাঁর প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই এক বিরক্ত ভারতীয় সাংবাদিক বলে উঠলেন, “জানি জানি, একই কথা বলার দরকার নেই। রোহিত যে অন্য বিষয়ে কথা বলতে পারবে না, তা আমাদের জানাই আছে।” ব্যাপারটা অন্য দিকে চলে যাচ্ছে দেখে আইসিসি-র মিডিয়া ম্যানেজার সামিউল হাসান হস্তক্ষেপ করে বলেন, “না না, এটা আপনাদের বিনীত ভাবে মনে করিয়ে দেওয়া। আর কিছুই নয়।”
সাংবাদিক বৈঠকে কয়েকটি প্রশ্ন ও উত্তর হয়ে যাওয়ার পর এক অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, দেশে যা সব চলছে, তাতে তাঁদের দলে এর কোনও প্রভাব পড়ছে কি না। রোহিত উত্তর দেন, “না, আমরা কাগজ পড়ি না, টিভিতে খবরও তেমন দেখি না। আমাদের ফোকাস এখন টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এখানে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সংকল্প নিয়েই এসেছি।”
সাংবাদিক বৈঠক শেষ হতে প্রায় জনা কুড়ি ক্ষুব্ধ ভারতীয় সাংবাদিক মিডিয়া ম্যানেজার বাবা-কে ঘিরে ধরেন। তাঁদের একটাই প্রশ্ন, সাংবাদিকদের উপর যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, তা কি শুধুই ভারতীয় মিডিয়ার জন্য? বিদেশি সাংবাদিকরা যখন এই নিয়ে প্রশ্ন করলেন, তখন তাঁদের কেন আটকানো হল না? বেকায়দায় পড়ে গেলেও মিডিয়া ম্যানেজার ধোনি প্রসঙ্গ উঠতেই রীতিমতো আক্রমণাত্মক মেজাজে, “এখন থেকে ম্যাচ হারলে ধোনি সাংবাদিক বৈঠকে আসবে। না হলে ম্যাচের সেরা পারফর্মার আসবে। আর ধোনি এলেও আমি যে তাকে আইপিএল নিয়ে কথা বলতে দেব না, এই ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারি।” কিন্তু এই ফতোয়া কি আসলে বোর্ডের নির্দেশিকা? জিজ্ঞাসা করায় ফের ঝাঁঝিয়ে উঠে ইন্ডিয়া সিমেন্টসের কর্মী বাবা “না, এটা আমারই সিদ্ধান্ত” বলে বেরিয়ে যান।
শের ই বাংলা স্টেডিয়ামের কনফারেন্স রুমে যখন এ সব হচ্ছে, তখন মাঠে ফুটবল নিয়ে ভারতীয় দল। ভারতীয় দলের নেটের আগে ফুটবলটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু যে তফাতটা এ দিন লক্ষ্য করা গেল, তা হল আগের দিনের মতো ধোনি কিন্তু এ দিন ফরোয়ার্ড নয়, বরং ডিফেন্ডার। আগের দিন ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলে তিনটে গোলও করেছিলেন যিনি, সেই ধোনি এ দিন সবার পিছনে। সুপ্রিম কোর্টে বোর্ড-বিরোধী কৌঁসুলি হরিশ সালভের তাঁর বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগ তত ক্ষণে যে ধোনির কানে উঠে গিয়েছে, তা বলা যায়। আগের দিন প্র্যাকটিসে তাঁর হাতে একটি ট্যাবও দেখা যাচ্ছিল, নেটের পাশে চিত্রসাংবাদিকদের ক্যামেরার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে বসে দেখছিলেন সেই ট্যাব। কী দেখছিলেন, তা অবশ্য জানা নেই। তবে আইপিএল মামলার গতি-প্রকৃতির খবর হলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই।