ইংল্যান্ডের হারে ত্রিদেশীয় সিরিজের লড়াইয়ে টিকে থাকলে কী হবে, টিম ইন্ডিয়ার বিশ্বকাপ অভিযানের আকাশ টেনশনের মেঘে ক্রমশ ঢাকা পড়ছে।
রোহিত শর্মা, ইশান্ত শর্মা, রবীন্দ্র জাডেজা—আপাতত টেনশনের তিন প্রধান মুখ। এঁদের মধ্যে শুক্রবারের অপশনাল ট্রেনিং সেশনে দেখা গেল ইশান্ত এবং জাডেজাকে। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ভোগা রোহিত না আসায় তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। সিডনিতে ফোন করে জানা গেল, প্র্যাকটিসে এলেও জাডেজার যা অবস্থা দেখা গিয়েছে, তাতে নাকি বিশ্বকাপে তাঁর খেলা নিয়ে কিছুটা হলেও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
কাঁধে চোট পেয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের মাঝামাঝি দেশে ফিরে আসতে হয়েছিল ভারতীয় অলরাউন্ডারকে। গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল জানিয়েছিলেন, জাডেজার সুস্থ হতে তিন থেকে চার সপ্তাহ লাগবে। কিন্তু চেন্নাইয়ে ভারতীয় বোর্ডের নতুন সেন্টারে রিহ্যাব করে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরার পরেও নাকি দেখা গিয়েছে, পুরোপুরি সুস্থ নন জাডেজা। এ দিনের প্র্যাকটিস সেশনে বিশেষ কিছু করেননি তিনি। তবে যেটুকু করেছেন, তা দেখার পরে প্রত্যক্ষদর্শীরা মোটেও তাঁকে নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না। কিছুক্ষণ বোলিং, নেটে হালকা ব্যাটিং করলেও তাঁর ফিল্ডিং প্র্যাকটিস দেখে অনেকের দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। ক্যাচ প্র্যাকটিস করানোর সময় দশটার মধ্যে ছ’সাতটা ক্যাচ নাকি ধরতে পারেননি জাডেজা। শুধু তাই নয়, নিচু হয়ে বল ধরতেও নাকি দৃশ্যত কষ্ট হচ্ছে তাঁর।
জাডেজার উপর যে কতটা নির্ভর করে টিম ইন্ডিয়া, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নিজেই বারবার তা স্বীকার করেছেন। একাধিক সাংবাদিক সম্মেলনে ভারত অধিনায়ক বলেছেন, লোয়ার অর্ডারে জাডেজার অনুপস্থিতির জন্য তাঁকে নিজের আগ্রাসী ব্যাটিং ধরন পাল্টাতে হচ্ছে। বলেছেন, মিডল অর্ডারের শক্তি বাড়াতে বিরাট কোহলিকে চারে নামতে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে জাডেজার খেলা নিয়ে যদি কোনও রকম জটিলতা তৈরি হয়, তা হলে সেটা নিঃসন্দেহে ধোনির টিমের কাছে বিরাট একটা ধাক্কা।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টানা তিনটে টেস্ট খেলার পর হাঁটুর চোটের জন্য আর একটাও ম্যাচ খেলেননি ইশান্ত। তার পর থেকে নেটেও পুরো রান-আপে বল করেননি। তবে এ দিন প্রায় পুরো রান-আপেই বল করলেন তিনি। ইশান্ত নিয়ে আশঙ্কা যদি বা কাটছে, রোহিত নিয়ে আবার তৈরি হচ্ছে নতুন আতঙ্ক। বিশ্বকাপের পনেরো জনের স্কোয়াডে রয়েছে মাত্র একজন রিজার্ভ ব্যাটসম্যান। তার আগে সোমবার সিডনির ম্যাচেও রোহিত নিশ্চিত নন। তাঁর জায়গায় খেলতে পারেন অম্বাতি রায়ডু বা শিখর ধবন। তবে শনিবার প্র্যাকটিস না থাকায় রবিবারের আগে রোহিতের অবস্থান বোঝা কঠিন।
এ দিনের অপশনাল প্র্যাকটিসে রোহিত ছাড়াও আসেননি বিরাট এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ভারতীয় অধিনায়ক এলেও মিডিয়ার সামনে তিনি মুখ খোলেননি। এমনিতে প্র্যাকটিসের পর ধোনি ভক্তদের অটোগ্রাফ দেন, ছবি তোলেন। এ দিন কিন্তু ট্রেনিং সেরে সোজা ঢুকে গেলেন ড্রেসিংরুমে। এন শ্রীনিবাসন প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে শুধু হেসে ড্রেসিংরুমের রাস্তা ধরেন ধোনি।
সব মিলিয়ে টিম ইন্ডিয়া আপাতত ব্যাকফুটে। যা দেখেশুনে ড্যানি মরিসনের মনে হচ্ছে, টিমটা ‘মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত’। শুধু চলতি সিরিজ নয়, তার আগে টেস্ট সিরিজেও ভারতীয় পারফরম্যান্সে প্রভাবিত নন প্রাক্তন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটার। টেস্ট সিরিজে ০-২ হারের পর ওয়ান ডে সিরিজেও এখনও পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখেনি টিম ইন্ডিয়া। “ভারতকে দেখে মনে হচ্ছে ওরা মানসিক ভাবে প্রচণ্ড ক্লান্ত। টেস্ট সিরিজটার উপর ফিল হিউজ ট্র্যাজেডি প্রভাব ফেলেছিল। তার উপর পরপর টেস্ট খেলার মানসিক ধকলটাও আছে,” বলে মরিসন আরও যোগ করেছেন, “টিম হিসেবে ভাল খেলতে পারছে না ভারত। কোহলি, অজিঙ্ক রাহানের মতো কয়েক জন মাত্র ভাল খেলেছে। আগামী কয়েক মাস এদের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে।”