পর্তুগাল ম্যাচের প্রস্তুতি। মঙ্গলবার ব্রাসিলিয়ায়। ছবি: এএফপি
আমরা আফ্রিকানরা প্রায় সবাই ধরে নিয়েছি ঘানা শেষ ষোলোয় যাচ্ছেই। শেষ ম্যাচে বড় ব্যবধানে জিতে।
আমিও নিশ্চিত ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর টিম শেষ ম্যাচে এসিয়েন-মুন্তারিদের সঙ্গে পারবে না। পর্তুগাল টিমটা বড্ড বেশি রোনাল্ডো নির্ভর। তা সেই রোনাল্ডো নিজেই তো হাফ-ফিট।
ঘানা এই ম্যাচটা জিততে পারে ভেবেই কিন্তু একটা চক্রান্ত শুরু হয়েছে। ম্যাচ ফিক্সিং, বর্ণবিদ্বেষ, ওঝা, তুকতাক এ সব নিয়ে হঠাৎ-ই হইচই শুরু হয়েছে। আমি মনে করি এর কোনও ভিত্তি-ই নেই। কোচিং করতে ঘানা, নাইজিরিয়া-র মতো দেশে আমাকে প্রায়ই যেতে হয়। সেখানে প্রচুর বন্ধুবান্ধবও আছে। সবারই মত আমার মতো। ব্রিটিশ মিডিয়া সব সময়ই আফ্রিকান টিমগুলোর বিরুদ্ধে সুযোগ পেলেই এ সব অভিযোগ তুলে বাজার গরম করার চেষ্টা করে। যাতে টিমের মনোবল ভেঙে যায়। আমার ধারণা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে নামার আগে কুয়েশি আপিয়ার টিমকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করার জন্যই এ সব হচ্ছে। কিন্তু এতে খুব একটা সুবিধা হবে বলে মনে হয় না। কারণ ঘানার এ বারের টিমে ইউরোপে খেলার প্রচুর ফুটবলার আছে। সবথেকে বড় কথা টিমটার গড় বয়স বাইশ থেকে তেইশ। ঘানার ফুটবল কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, এই টিমটাকেই পরের বিশ্বকাপে ওরা রেখে দিতে চায়।
আফ্রিকার যে টিমগুলো এ বারের বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে, তাদের মধ্যে সবথেকে শক্তিশালী ঘানা-ই। দারুণ প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। অন্য দলগুলোর মধ্যে নাইজিরিয়া ঠিকমতো প্রস্তুত হয়ে আসেনি। আইভরি কোস্টের ফুটবলারদের বয়স হয়েছে। আর ক্যামেরুন তো ব্রাজিলে আসার আগেই নিজেদের মধ্যে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে। ফলে ভাল ফুটবলারের অনেককে খেলাতে পারল না। না হলে ব্রাজিল এত খারাপ খেলেও ওদের চার গোল দিতে পারত না। কলকাতার ফুটবলপ্রমীরা রাগ করতে পারেন, আমি কিন্তু সম্ভাব্য বিশ্বজয়ী হিসাবে ব্রাজিলকে ধরছি না। তা সে যে সাহায্যই বাইরে থেকে পাক। আমার মতে কাপ জেতার প্রধান দাবিদার আর্জেন্তিনা, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডস।
আফ্রিকায় যে কটা দেশের যুব দল বিশ্বফুটবলের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে ভাল খেলছে, তাদের মধ্যে ঘানা আর নাইজিরিয়ার সাফল্য সবথেকে বেশি। আফ্রিকার টুর্নামেন্টগুলোতেও ওরা ভাল করেছে গত কয়েক বছর। ঘানার মতোই নাইজিরিয়ার কাছেও আমার প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু ওদের খেলা আমার ভাল লাগেনি। ঘানা প্রথম ম্যাচটা কী ভাবে যুক্তরাষ্টের কাছে হেরে গেল, সেটা আমাকে বিস্মিত করেছিল। তবে জার্মানির সঙ্গে দুর্দান্ত ড্র-টা আবার আশাবাদী করে তুলেছে। তা সত্ত্বেও যদি আশা পুরণ না হয়, সেটা আফ্রিকার ফুটবলের খারাপ দিন বলেই ধরব।
ঘানার এই টিমটার প্রধান শক্তি ওদের মাঝমাঠ। বোয়াতেংয়ের মতো স্ট্রাইকার আছে সামনে। কিন্তু গণ্ডগোল রয়েছে রক্ষণে। মাঝেমধ্যেই ডোবায়। না হলে, গ্রুপ লিগের প্রথম দু’টো ম্যাচ জিতেই ঘানার শেষ ষোলোয় চলে যাওয়ার কথা। আমি নিজে স্টপার ছিলাম। কলকাতায় ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের হয়ে আমার খেলা আপনাদের নিশ্চয়ই এখনও মনে আছে। আমি কখনও শক্তি দিয়ে ফুটবল খেলেনি। এতে বিশ্বাসীও নই। বুদ্ধি দিয়ে ফুটবল খেলা বরাবরই আমার পছন্দ। ঘানার ডিফেন্সের খেলা আমার তাই ভাল লাগছে না। যদি পতুর্গাল ম্যাচে রোনাল্ডো-নানিরা একটু হলেও এসিয়েনদের সমস্যায় ফেলে, তা হলে আমি নিশ্চিত সেটা হবে ঘানার রক্ষণের জন্য।
আফ্রিকার টিম মানেই শক্তির ফুটবল। সেই ধারণা কিন্তু এখন বদলাচ্ছে। এ বারের বিশ্বকাপে দেখুন আমাদের উপমহাদেশের সবাই পাসিং ফুটবলকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে। ঘানাও তাই। কুয়েশি আপিয়ার কোচ হয়ে আসার পর টিমটাকে বার্সেলোনা স্টাইলে খেলানোর চেষ্টা করছে। এখনও পর্যন্ত আংশিক তিকিতাকা খেলছে ঘানা। সামান্য শক্তি মিশিয়ে। গত বার টিমটা শেষ আটে পৌঁছেছিল। এ বারও ওদের সেখানে পৌছনো উচিত।