সাংবাদিক সম্মেলনে ধোনি। ছবি: এএফপি।
পারথের নেটে বৃহস্পতিবার শিখর ধবনের দু’বার ঢোকার মধ্যেই কি ইঙ্গিতটা লুকিয়ে ছিল?
বহু দিন তাঁর ব্যাটে রান নেই। ডাকসাইটে ভারতীয় ওপেনারের দুরাবস্থা এখন এতটাই যে, দশ পেরোতেও হিমশিম খাচ্ছেন। চওড়া গোঁফের ধবনের ফর্ম নিয়ে আওয়াজ উঠছিল বিভিন্ন মহল থেকে। বেশ কিছু দিন ধরে। কিন্তু কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারতীয় টিম পাশে ছিল ধবনের।
পারথের ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচে থাকবে। কিন্তু তার পর আর না-ও থাকতে পারে!
এমএসডি বিশ্বকাপের পনেরো-ষোলো দিন আগেও প্রথম এগারো যে চূড়ান্ত করতে পারছেন না, তার একটা কারণ নাকি ধবনের ফর্ম। দিল্লির জাঠ যোদ্ধাকে নিয়ে কী করা হবে শেষ পর্যন্ত, ভেবে নাকি ওঠা যাচ্ছিল না। পারথে ফোন করে শোনা গেল, ধবনকে নিয়ে এ দিন আলাদা পড়ে থাকলেন টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী। এক বার নয়, দু’বার নেটে ঢুকলেন ধবন। কোন শট খেলা দরকার, আর কোনটা বাদ দেওয়া প্রয়োজন বোঝানো হল ধবনকে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও শোনা গেল যে, পারথই নাকি শেষ সুযোগ হতে পারে ধবনের। যদি এখানেও তিনি ভাল কিছু না করতে পারেন আর যদি ভারত ফাইনালে ওঠে, রোহিত শর্মাকে দেখে নেওয়া হতে পারে ওপেনিংয়ে। আর ফাইনালে না উঠলে বিশ্বকাপ শুরুর আগে যে ওয়ার্ম আপ ম্যাচ আছে, সেখানে দেখে নেওয়া হতে পারে রোহিত-রাহানে জুটিকে। ধবনের ব্যাটিংয়ের উপর সম্পূর্ণ আস্থা হারাচ্ছে না টিম ম্যানেজমেন্ট। কারণ ইংল্যান্ডে তাঁর ব্যাটিং ফর্ম। তাঁর অতীত রেকর্ড। কিন্তু তাঁর বর্তমান ফর্মের বিচারে আর ব্যাপারটাকে ফেলেও রাখতে পারছে না।
অর্থাৎ, গাড্ডায় ‘গব্বর’।
ধবনকে ঘিরে টেনশন বাদ রাখলে ধোনির সংসারের আবহাওয়া বেশ নাকি ফুরফুরেই আছে। গত কয়েক দিনে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস সেন্টার, ক্রুজ-বিহার শেষ করে টিম ইন্ডিয়া বৃহস্পতিবার পুরো দিনটাই রাখল কড়া প্র্যাকটিস সেশনে। যেখানে বিরাট কোহলি-রবিচন্দ্রন অশ্বিন আবার কিছুক্ষণ টেনিসও খেলে রাখলেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আবার তার মধ্যে ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন যে, টিমের স্বার্থে তিন নম্বর জায়গাটা ছাড়তে হতে পারে কোহলিকে।
কোহলি এমনিতেই তিন নয়, এখন চার নম্বরে নামছেন। ধোনি নিজে বলে রাখলেন, “কোন এগারো জন মাঠে নামছে সেটা দেখতে হবে। দেখতে হবে কে কোথায় ব্যাট করলে টিমের সবচেয়ে সুবিধে হয়। তাই কেউ যদি নির্দিষ্ট একটা পজিশনে ব্যাট করতে চায়, তাকে সেটা ছাড়তে হবে।” এখানেই না শেষ করে ধোনি আরও বলেছেন, “ব্যাটিং নম্বরের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল ওভারের নম্বর। ওপেনাররা যদি আটত্রিশ ওভার পর্যন্ত খেলে তা হলে সাত নম্বর ব্যাটসম্যানকে দেখা যেতে পারে পিচের দিকে হাঁটতে। তিন নম্বরের জায়গায়।” শিখর ধবন তাঁকে নিয়েও প্রকাশ্যে কোনও টেনশন দেখাননি এমএসডি। বলে দিয়েছেন, ওপেনারদের ফর্ম তাঁর চিন্তার বিষয় নয়। বরং তাঁর বক্তব্য, মিডল অর্ডারে দুশ্চিন্তা আছে। পরপর উইকেট চলে যাচ্ছে। যাতে ঝামেলায় পড়ছে টিমের যাবতীয় প্ল্যান।
পারথ ম্যাচের আগে যা ইঙ্গিত, তাতে শুক্রবারও সম্ভবত একই দল রেখে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, রবীন্দ্র জাডেজা এবং ইশান্ত শর্মার অবস্থা কী সেটা দেখে নেওয়ার একটা সুযোগ থাকছে। আরও শোনা গেল, অস্ট্রেলিয়ার বড়-বড় মাঠে বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে হবে বলে লম্বা থ্রো প্র্যাকটিসের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে টিম ইন্ডিয়া। এ দিনও চার ঘণ্টার প্র্যাকটিসে পুরো টিমটাকে তিনটে গ্রুপে ভেঙে ফেলে ফিল্ডিং প্র্যাকটিস করানো হল।
গ্রুপ টেবলের যা অবস্থা, তাতে শুক্রবার ইংল্যান্ডকে হারালেই ভারত ফাইনালে চলে যাবে। যে রাস্তায় ধবনের ফর্ম যদি একটা কাঁটা হয়, তা হলে দ্বিতীয়টা পারথের আকাশ। গত দু’মাসে বৃষ্টির নামগন্ধও ছিল না। তাপমাত্রাও ওখানে এখন আটত্রিশ ডিগ্রি। কিন্তু আচমকাই ভারতের প্র্যাকটিসের সময় পারথে এ দিন বৃষ্টি নামে। সন্ধেতেও হল আবার। শুক্রবার সরকারি পূর্বাভাস নেই। কিন্তু তবু ম্যানেজমেন্টের কারও কারও দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না। কারণ বৃষ্টির পূর্বাভাস না থাকলেও বলা আছে আকাশ মেঘে ঢাকা থাকবে। বলা হচ্ছে, সিডনিতে আশীর্বাদ হয়ে হাজির হয়েছিল বৃষ্টি। এখানে কোনও ভাবে নেমে পড়লে সেটা আশীর্বাদ, অভিশাপ হবে।